

কম বয়সীকে ‘তুমি বলায়’ ট্রেনযাত্রী বাবা-ছেলেকে মারধর করে আহত করেছেন রেলওয়ের তিন কর্মচারী। এই ঘটনায় রেলওয়ে থানাতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর পৌনে ২টায় ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ৩নং প্লাটফর্মে এই ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- ট্রেনযাত্রী ঢাকার ডেমরা এএসআরএম স্টিল এ্যান্ড বিরোলিং মিলসের হিসাবরক্ষক রাকিবুল ইসলাম সোহাগ (৪৭) ও তাঁর স্কুল পড়ুয়া ছেলে রিয়াদুল ইসলাম আবেগ (১৪)। তাঁরা নাটোরের লালপুর উপজেলার দক্ষিণ বটতলা বাদরঝোলা এলাকার বাসিন্দা। আর প্রহারকারীরা রেলওয়ে ঈশ্বরদীর ইলেকট্রিক ও পিডাব্লুআই অফিসের কর্মচারী। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার সময় ঢাকা যাওয়ার জন্য আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী বাবা ও ছেলে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ৩নং প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার জায়গায় বসেছিলেন। ছেলেটির বাবা কিছুটা অসুস্থবোধ করায় ছেলে আবেগের কোলের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়েন। এই সময় রেলওয়ের কম বয়সী এক কর্মচারী এসে তাকে উঠতে বলেন। এই সময় শুয়ে থেকেই লোকটি বলেন, পাশে জায়গা আছে তুমি বসলে বসো।
এতেই ওই কর্মচারী অপমানবোধ করে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ও কথা কাটাকাটি শুরু করেন। এই পর্যায় রেলওয়ের আরো দুই কর্মচারী ঘটনাস্থলে এসে বাবা ও ছেলেকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে স্টেশনে থাকা জিআরপি পুলিশ এগিয়ে আসলে প্রহারকারীরা চলে যান। আহতকে হাসপাতালে পাঠিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন আসলে আহত বাবা-ছেলে ট্রেনে উঠে ঢাকায় চলে যান।
আহত ট্রেনযাত্রীর ছেলে ঢাকা মিতালি বিদ্যাপীঠের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. রিয়াদুল ইসলাম আবেগ কান্না জনিত কণ্ঠে জানান, বাবার সঙ্গে গত মঙ্গলবার বেড়াতে এসেছিলাম। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ৩নং প্লাটফর্মের যাত্রীদের বসার বিশ্রামগারে আমার কোলে মাথা রেখে বাবা একটু শুয়েছিলেন।
এ সময় এক অপরিচিত ছেলে এসে বলেন, ‘এখানে শুয়ে আছেন কেন? উঠুন। এই সময় বাবা উঠে অপরিচিত ওই ছেলেকে বলেন কি হয়েছে তোমার? যদি বসো পাশে বসো! জায়গা আছে তো। একথা বলাতে বাবার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এ সময় আমি বাধা দিলেও আমাকেও কিল-ঘুষি মারেন। এতে আমার বাবার ডান চোখে ঘুষি লেগে ফুলে গেছে। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের রেলওয়ে সুপারিনটেনডেন্ট (এসএস) মহিউল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি শুনতে পায়নি আর কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। অভিযোগ করা হলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার উপ-পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম জানান, কিল-ঘুষিতে রাকিবুল ইসলাম সোহাগ নামের ওই ব্যক্তির ডান চোখ ফুলে গেছে।
তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে জিআরপি থানাতে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বাবা-ছেলে ট্রেনে উঠে ঢাকাতে চলে যান। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জিআরপি থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই) জোবায়ের আরেফিন বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। বিষয়টি রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এমএম/পাবলিকভয়েস