

মাসুদ আর রহমান
প্রায় পাঁচশত বৎসর আগের কথা। এক অলৌকিক ঘটনায় মালদ্বীপে ব্যাপকভাবে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্মে গ্রহণ করেন। প্রখ্যাত মুসলিম পর্যটক ও ইতিহাসবিদ আল্লামা ইবনে বতুতা (রহ.) সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করেছেন। তিনি তার সফরনামায় মালদ্বীপের ঐহাসিক সেই ঘটনা সম্পর্কে লিখেছেন, ভ্রমণ করতে করতে তিনি মালদ্বীপে পৌঁছলেন। দেখলেন, মালদ্বীপের প্রতিটি শহর-নগর আজানের মধুময় ধ্বনিতে মুখরিত।
অবস্থা দেখে আল্লামা ইবনে বতুতা খুবই বিস্মিত হলেন। কারণ, তার জানা মতে কোনো ইসলাম প্রচারক মালদ্বীপে আসেননি। তাহলে এখানে ব্যাপকভাবে ইসলামের আলো ছড়ালো কীভাবে? ইবনে বতুতা (রহ.) সেখানকার অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণের কারণ জিজ্ঞেস করলেন।
উত্তরে সেখানকার মানুষের ইবনে বাতুতা রহ. আশ্চর্য একটি ঘটনা শোনালো। -আরবের কোনো এক বাণিজ্য জাহাজ পূর্ব বিশ্বের দিকে যাত্রা করেছিল। ঘটনাচক্রে জাহাজটি সমুদ্রঝড়ে ডুবে যায়।যাত্রীরা সবাই মারা যান। দলের একজন লোক কোনো এক টুকরো কাঠের আশ্রয় করে তীরে পোঁছোন। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে যান।
বেঁচে যাওয়া লোকটি ছিলেন, আরব যুবক এবং হাফেজে কুরআন। তার নাম হাফেজ আবুল বারাকাত। এই অচেনা অপরিচিত দ্বীপে কোথায় যাবেন তিনি? কে আশ্রয় দেবে তাকে.? এখানেতো তার কোনো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন নেই। অবশেষে আরব যুবকটি এক বৃদ্ধার বাড়ি আশ্রয় নিলেন। যুবকটি জঙ্গলে কাঠ কেটে জীবকা নির্বাহ করতো। এভাবেই চলছিলো তার জীবন। যুবকটি একদিন বাদিতে এসে দেখল- বৃদ্ধা কাঁদছেন এবং তার পাশে তার যুবতী মেয়েও কাঁদছে।
যুবক জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে আপনাদের? আপনারা কাঁদছেন কেন?
বৃদ্ধা- আজ আমার মেয়ে মারা যাবে।
যুবক- কেন? তিনি মারা যাবেন কেন? সে তো সুস্থ।
বৃদ্ধা আঙ্গুল দ্বারা ইশারায় জানাল, ওই যে দেখুন, মৃত্যু আমাদের সামনে।
যুবক বাড়ির সামনে তাকিয়ে সৈন্যদের দাঁড়ানো দেখতে পেয়ে বলল, তারা কি আপনার মেয়েকে হত্যা করবে?
বৃদ্ধা- না, ব্যাপারটি তা নয়। রাজার এই সৈন্যরা আমার মেয়েকে নিয়ে যাবার জন্য এসেছে।কেননা, আমাদের এই দ্বীপে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট তারিখে এক সামুদ্রিক বিপদের উদ্ভব হয়। যার থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতি হলো আমাদের দ্বীপবাসীদের পক্ষ থেকে একটি যুবতী মেয়েকে সেদিন সূর্যাস্তের পর সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত মন্দিরে রেখে আসতে হয়। পরের দিন সকালে সরকারি লোকজন সমুদ্রের কিনারা থেকে ওই মেয়েকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। প্রতিবারই লটারি করে নির্ধারণ করা হয়, কোন বাড়ির মেয়েকে পাঠানো হবে। এবার লটারিতে আমার মেয়ের নাম উঠেছে।
আরব যুবক বৃদ্ধার মুখে এ বেদনাদায়ক ঘটনা শুনে বলল, আজ আপনাদের মেয়েকে সেখানে পাঠাবেন না। আজ রাতে আমিই সেখানে যাবো। দেখি, সেখানে কী হয়। বৃদ্ধা যুবকটিকে নির্ঘাত মৃত্যুর দোয়ারে ঠেলে দিতে রাজী হচ্ছিল না। তখন যুবকটি বৃদ্ধাকে বুঝাল, সে একজন মুসলমান। মুসলমানরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আর জীবন ও মৃত্যু সবই আল্লাহর হাতে। যুবকটির পীড়াপীড়িতে বৃদ্ধা রাজী হল।
দাড়ি গোঁফ না ওঠা তরুণ যুবককে মেয়ের পোশাক পরিয়ে সাজানো হলে সৈন্যরা তাকে সমুদ্রতীরের মন্দিরে রেখে চলে এলো। যুবক ভাল করে ওজু করে ইশার নামায আদায় করে খোলা তলোয়ার সামনে রেখে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখছে এবং কুরআন তেলাওয়াত করছে। রাত গভীর হলো। চারিদিক নিস্তব্ধতা। আরব যুবকের চিন্তায় বৃদ্ধা অস্থির। তার মেয়েকে রক্ষা করার জন্য যুবক নিজের প্রাণকে বিপন্ন করতে যাচ্ছে। বৃদ্ধার সেই যুবতী কন্যাও জেগে আছে। আরব যুবকের চিন্তায় সে অনবরত কাঁদছে।
হাফেজে কুরআন যুবক ভয়ংকর মন্দিরে বসে কুরআন তেলাওয়াত করেছিলো। এ মূহূর্তে সকল অপশক্তির মুকাবিলায় কুরআনই যে তার অমোঘ হাতিয়ার। হঠাৎ করে সমুদ্র থেকে বিশাল আকৃতির ভয়ংকর এক দৈত্যের উদয় হল। দৈত্যটি ধীরে ধীরে সমুদ্রের কিনারার দিকে মন্দিরের অভিমুখে আসতে লাগলো। মন্দিরের কাছাকাছি এসে দৈত্যটি থেমে গেলো। তখনও যুবক কুরআন তেলাওয়াত করে যাচ্ছে। কুরআন তেলাওয়াতের কারণে দৈত্যটি সামনে অগ্রসর হতে পারলো না। সামান্য সময় অবস্থান করে যে পথে এসেছিলো, সেই পথে ফিরে গেলো দৈত্যটি।
সকাল হলো। রাজ সেনারা মেয়েটির লাশ নিতেএলো। এসে তারা হতভম্ব হয়ে গেলো। সেখানে কোনো লাশ নেই। কোনো মেয়েও নেই। আছে অল্প বয়স্ক এক যুবক। যুবকটিকে রাজার দরবারে নিয়ে এলো সেনারা। যুবকটি ঘটনা খুলে বলল। রাজা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বৃদ্ধা ও মেয়েকে ডেকে আনল। বৃদ্ধা ও তার মেয়ে রাজার কাছে ঘটনাটির সত্যায়ন করল। যুবকর রাজাকে বললেন- আমি যা করেছি, তা ইসলামের শিক্ষা। এরপর রাজাসহ সবাই ইসলামের গ্রহণ করলেন।
আইএ/পাবলিক ভয়েস