তাবলীগ কোন পথে সিদ্ধান্ত সরকার নয় উভয়পক্ষের মুরুব্বীদেরই নিতে হবে

প্রকাশিত: ২:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০১৯
তাবলীগ কোন পথে?
মুফতী সালাহুদ্দীন মাসউদ
দাওয়াত ও তাবলীগ নামে প্রায় শত বছরের বয়ে চলা স্রোতধারা গাস্ত চিল্লা আর মাশওয়ারার সেই রমরমা দিনগুলো সময়ের গতিতে ঝিমিয়ে পড়ছে, এটা বলার অবকাশ রাখে না। দিল্লির মাওলানা সাদ সাহেবের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মন্দ অভিলাসের ফলশ্রুতিতে সর্বশেষ টঙ্গীর মাঠ ওলামা তোলাবাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। রচিত হয়েছে এক লজ্জাস্কর অধ্যায়, সেসব পুরণো কথা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গেলে টঙ্গীর মাঠের সেই রক্তস্নাত ঘটনাগুলোর চেয়েও ভয়ানক কিছু ঘটে যাওয়ার আভাস পরিলক্ষিত হয়। ভয়ে গা শিউরে ওঠে। সহিহ ধারার একটি মাধ্যমে কাজ করে যাওয়া কর্মীরা পরস্পরে রক্তা ঝরা যুদ্ধে লীপ্ত হবে, বিষয়টি কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে।
সাদপন্থী এতাআতী তাবলীগি ভাইয়েরা নতুন বছরের ১১ জানুয়ারী বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছে এবং দেশব্যাপী তারা প্রচারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপরপক্ষে বিশ্বসূরাপন্থী আলেম সমর্থিত তাবলীগ জামাতের প্রথম পর্ব শুরু হওয়ার ঘোষণা রয়েছে ১৯ জানুয়ারী।
প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার পর আবার দ্বিতীয় পর্বের ঘোষণা দেয়া আছে। তাহলে কি এবার তিন দফা বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে? তা কী করে সম্ভব? কারণ, ওলামাদের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া আছে, সাদপন্থীদের নেতৃত্বে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক একটি ঘোষণা ছিলো, নির্বাচনের পূর্বে টঙ্গীতে কোনো ধরনের প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি নেই। নির্বাচনের পরে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
দুঃখজনকভাবে একটি নিষ্ঠুর নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্বেকার সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার ফলে টালমাটাল সরকার তাবলীগ বিষয়ে কোনো আলোচনায় সময় দিতে পারবে বলে মনে হয় না। তারা এখনো শক্ত হয়ে বসতে পারেনি, তাবলীগ বিষয়টি আমার আপনার কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ হলেও তাদের কাছে এই কাজটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না।
তাদের এই কঠিন মুহূর্তে তাবলীগ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো সহায়তা বা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ঠিক এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে সাদপন্থী এতাআতীরা ১১ জানুয়ারী থেকে বিশ্ব ইজতেমা আরম্ভের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আরম্ভ করে দিয়েছে। এখন কী হবে? ওলামায়ে কেরামের ঘোষণা ছিলো, টঙ্গীতে সাদপন্থীদেরকে ইজতেমা করতে দেয়া হবে না। অথচ সরকারের টালমাটাল পরিস্থিতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাদপন্থীরা বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছে, অথচ বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকৃত।
আরেকটি খবর বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা হলো- সাদপন্থীরা তলেতলে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়েই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ওদের পক্ষ থেকে এতকিছু হয়ে যাচ্ছে অথচ এখন পর্যন্ত ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। তাহলে কি সাদপন্থীরা টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে সফল হতে চলেছে? নাকি ওলামায়ে কেরাম ইজতেমা করতে সাদপন্থীদেরকে বাধা প্রদান করবে? সাদপন্থীরা ইজতেমা করতে চলেছে, এই বিষয়টি তো স্পষ্ট কিন্তু ওলামায়েকেরাম তাদের বাধা দেয়ার ঘোষণা দিবে কি না, বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
এই নাজুক পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে ১ লা ডিসেম্বর ২০১৮ ইং- এর মতো ওলামায়েকেরাম মাঠ দখল করে অবস্থান গ্রহণ করবে? নাকি সাদপন্থীদেরকে ইজতেমা করার সুযোগ প্রদান করবে? যদি ওলামায়েকেরাম সাদপন্থীদেরকে বাধা প্রদান করতে যায়, নিশ্চিত ১১ জানুয়ারী এক ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, ওলামায়েকেরাম ১লা ডিসেম্বর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাগে ক্ষোভে ফুঁসে আছে। সাদপন্থীদেরকে সামনে পেলে তারা কমে ছাড়বে না।
কঠিন প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার সৃষ্টি হবে। অপরদিকে সাদপন্থীরা তো আগে থেকেই রণসাজে সজ্জিত। পরিস্থিতি কতোটা ভয়ানক আকার ধারণ করবে, তা অনুমেয়। এহেন পরিস্থিতিতে ওলামায়েকেরাম এবং সাদপন্থী তাবলীগী ভাইয়ের পায়ে পড়ে আমার অনুরোধ হলো, আপনারা বসুন প্লিজ। যদি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একসাথে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় তবে আলহামদুলিল্লাহ। যদি এক হওয়ার সুযোগ না থাকে তবে দ্বন্দ নয়, যুদ্ধ নয়।
কাকরাইল মসজিদে যেমন উভয় গ্রুপ পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করে দাওয়াতের মেহনতকে এগিয়ে নিচ্ছে, টঙ্গীর ময়দানেও পালাক্রমে উভয়গ্রুপ ইজতেমা পালন করুন শান্তিপূর্ণভাবে। এতে উভয়পক্ষের লোকজনই নিরাপদে ইজতেমা অনুষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে এবং জাতি ভয়াবহ একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে নিষ্কৃতি পাবে। যদি পরস্পরে বসাও সম্ভব না হয় তবে আমার ছোট্ট মাথায় যেটা বলে, তা হলো ওলামায়ে কেরামকে কঠিন ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
ওলামায়ে কেরাম কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে না তুলে চুপচাপ থাকবেন। ১১ জানুয়ারী থেকে সাদপন্থীরা ইজতেমা করে চলে যাবে। এর পর ঘোষিত ১৯ তারিখ থেকে ওলামায়েকেরাম ইজতেমা আরম্ভ করবে। সাধারণ মুসলমান যে যেটাকে পসন্দ করে, তারা ইজতেমায় শরিক হয়ে দাওয়াতের মেহনতে জুড়ে থাকবে। দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়া চরম অনাকাঙ্খিত তারপরেও সময়ের পরিবর্তনে এমন বিভেদকে মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি বলুন আর শিক্ষা মাধ্যম, শুদ্ধধারার বিবিধ কার্যক্রম বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। এখন থেকে তাবলীগ জামাতও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে, বিষয়টি মেনে নিয়ে আমাদেরকে সংঘাত এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যথায় অমুসলিমরা আমাদের ঘরের দ্বন্দের সুযোগ গ্রহণ করে ইসলামের বড় ধরণের ক্ষতি করার সুযোগ পাবে।
আসুন, আমরা এক হই। আসুন, আমরা নেক হই।

মন্তব্য করুন