

ফৌজিয়া অনু
বতর্মানে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর অন্যতম একটি বড় ও ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে শিশু শ্রম। শিশুদের বেতন, মুনাফা বা বিনা বেতনে কোনো পারিবারিক খামার, বা সংস্থায় কাজের জন্য নিয়োগ করা ইত্যাদি শিশু শ্রমের আওতায় পড়ে। ২০০৬ সালের ‘জাতীয় শ্রম আইন’ অনুযায়ী ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের এসকল কাজ করানো হলে তা শিশু শ্রম বলে গণ্য হবে।
১৫ বছরের নিচে বিশ্বে প্রায় এক-দশমাংশ শিশু (১৫০ মিলিয়ন) বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত আছে। এর মধ্যে কিছু পেশা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কর্মজীবী শিশুদের বেশিরভাগই চরম দরিদ্র ও বঞ্চনার মধ্যে বড় হয়। তারা উন্নত জীবনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ ও দক্ষতা উন্নয়নের কোনো সুযোগ পায় না। শিশু শ্রমের প্রধান কারণই হচ্ছে মূলত দারিদ্র্য।
আমাদের দেশ শিশু মৃত্যুর হার প্রশংসনীয়ভাবে কমাতে পারলেও, তাদের স্বপ্ন বাচাতে পারেনি। প্রতিদিন তাই অভাবের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে গ্রেট ব্রিটেনে কারখানা চালু হলে সর্বপ্রথম শিশু শ্রম একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পূর্বাঞ্চাল ও মধ্যপশ্চিমাতে গৃহযুদ্ধের পর এবং দক্ষিণে ১৯১০ সালের পর এটি একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। বিট্রেনেই প্রথম ১৮০২ সালে সংসদে আইন প্রণয়ন এর মাধ্যমে এ সমস্যার নিরসন করা হয়। তবে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় উৎপাদন বৃদ্ধির আবশ্যকতা বহু শিশুকেই আবার শ্রম বাজারে টেনে নিয়ে আসে।
যাইহোক, আমাদের দেশে ২০০৬ সালের শিশু সনদে ১৪ বছরের কম বয়সীদের শিশুশ্রম ও ১৮ বছরের কম বয়সীদের কম ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে গভর্নমেন্ট ন্যাশনাল চাইলড সার্ভে (২০০৩) অনুযায়ী ৫-১৪ বয়সী ৩.২ মিলিয়ন শিশু বাংলাদেশে কাজ করে।
সরকার ও প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১0 -এ শিশুশ্রম বিলোপ সাধনে যথাযথ পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে শিশুশ্রম রোধে।
ILO জাতিসংঘের একটি বিষেশায়িত সংস্থা। ১৯৯২ সালে ILO- এর আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম দূরীকরণ কর্মসূচি [আইপেক] যাত্রা শুরু করে। বতর্মানে ৮০টি দেশে এই কর্মসূচি চালু আছে। এছাড়াও ইউনিসেফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে শিশুদের তাদের প্রাপ্য অধিকার দেয়ার বিষয়ে।
তবে একাধিক আইন, নীতি থাকলেও শুধুমাত্র আমাদের গুরুত্ব ও সচেতনতার অভাবের কারণে দিন দিন আমাদের দেশে শিশু শ্রম বেড়েই চলেছে; প্রতিদিন ফুটিবার আগেই ঝরে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন, ধবংস হচ্ছে হাজারো রঙিন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত।
শুধু কতৃপক্ষ কিংবা সরকার নয়; এ দায় আমাদেরও। কারণ দেশটা আমাদের। আমাদের একটু সচেতনতা ও ইচ্ছাই পারে এই হাজারো সোনামুখে সোনালী হাসি ফুটাতে। এই সোনালী হাসিই আমাদের ভবিষ্যৎ সোনার বাংলার কারিগর।