

মাওলানা আবদুর রাজ্জাক
আলেম লেখক ও গবেষক
প্রিয়া সাহা! মোবাইলে দেয়া আপনার পুরো সাক্ষাতকারটি আমি শুনেছি। আপনি বলেছেন,
(১) আপনার নাকি আমেরিকা যাবার কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না, হঠাৎ গেলেন। আর যাবার পরও ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের যে সুযোগ পাবেন এবং তার সাথে কথা বলতে পারবেন এমন কোন ধারণা বা প্রত্যাশা আপনার ছিল না। তাহলে ঘটনাক্রমে ঘটে যাওয়া জীবনের প্রথম সাক্ষাতে এমন অঘটন কেন ঘটালেন?
(২) আপনি আপনার দেয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেছেন, কিন্তু ট্রাম্পের কাছে দেয়া আপনার বক্তব্যটি পরোক্ষভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে একটি নালিশ তা একজন অবুঝ শিশু বুঝে।
(৩) আপনি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, বর্তমান সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্মসূচি হল অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া এবং সরকার মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আছে। তাহলে আপনার থেকে জানতে ইচ্ছে করছে, আপনি সরকারের কাছে অভিযোগ না দিয়ে ট্রাম্পের কাছে কেন নালিশ করলেন? তাহলে বোঝাই যাচ্ছে আপনার সরকারের উপর আস্থা নেই।
(৪) আপনি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, দেশের ৯৯% মানুষ অসম্প্রদায়িক। সল্প কিছু দুষ্কৃতীকারি রয়েছে। দেশের ৯৯% মানুষ যদি শান্তিপ্রিয় অসম্প্রদায়িক হয় তাহলে অল্প কিছু দুষ্কৃতীকারির জন্য কি বিশ্বমোড়ল ট্রাম্পের কাছে নালিশ করার কোন প্রয়োজন আছে?
(৫) আপনি বারবার স্বীকার করেছেন, সরকার অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং আপনারা এর সুফল পাচ্ছেন তাহলে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে এরকম আত্মহারা হয়ে গেলেন কেন? আপনি একজন দায়িত্ববান মানুষ। একটি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক। একটি এনজিও সংস্থাও চালিয়ে আসছেন। তাহলে এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কেন করলেন?
(৬) আপনি বললেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকাকালীন সময় এমন অভিযোগ করেছিলেন, সেখান থেকে আপনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। দেশের মানুষ আপনার থেকে জানতে চায়, আপনিও কি এখন বিরোধীদলে আছেন? প্রধানমন্ত্রী যদি বিরোধী দলে থাকাকালীন অভিযোগ করে থাকেন তাহলে তিনি তা এখন করতে পারেন না কারণ এখন তিনি রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আছেন। এখন তার দায়িত্ব অসম্প্রদায়িক দেশ গড়া। আপনার দায়িত্ব শুধুমাত্র তার কাছে আবেদন নিবেদন করা এবং যা করার তার মাধ্যমে করা। আপনি কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যে বলেছেন যারা আপনাদের উপর নির্যাতন করছে তারা মৌলবাদী এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে থাকে। তাহলে আপনি প্রধানমন্ত্রীর সম্মান কোথায় রাখলেন?
(৭) আপনি বারবার একটি কথা বলেছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনি ট্রাম্পের কাছে নিবেদন করেছেন। আপনি তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষকে গুম করার কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প এর নিকট। অথচ সাক্ষাৎকারে বলেছেন ৯৯% মানুষ অসম্প্রদায়িক। মাত্র কিছু দুষ্কৃতিকারী নির্যাতন করে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন ৯৯% শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে অল্প কিছু মানুষ কি এত দীর্ঘ সময় এত বড় বড় অপরাধ করে যেতে সক্ষম?
(৮) আপনি দায়ী করছেন মৌলবাদীদের কে। মৌলবাদীর কি সংজ্ঞা আপনার কাছে, তা আমি জানিনা। মৌলবাদ বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো, যারা ধর্মের মূল এর উপর চলে। যারা ধর্ম পালনে সক্রিয়। দেশের আলেম সমাজ সবচেয়ে বেশি ইসলাম পালনে সক্রিয়। আপনি কি দেখাতে পারবেন কোন আলেম অন্য কোন ধর্মের মানুষকে নির্যাতন করেছে? আপনার ঘর বাড়ি যদি কেউ পুড়ে থাকে, জায়গা জমি যদি কেউ দখল করে থাকে তারা কেউ কি আলেম?
(৯) আপনার স্বামী বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক। আপনার বাড়ি ঘর যারা ক্ষতি করেছে তাদের ব্যাপারে আপনি আপনার স্বামীরও সহযোগিতা নিতে পারতেন। তা না করে বিশ্ব মোড়লের নিকট বড় করে উপস্থাপন করে আপনি কি খাল কেটে কুমির আনার আয়োজন করছেন না?
(১০) সাক্ষাৎকারে আপনি বারবার বলেছেন, ট্রাম্পের কাছে আপনার দেয়া বক্তব্যের উদ্দেশ্য হলো আমেরিকা এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে যেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ে। অথচ আপনি যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক তা একটি সাম্প্রদায়িক দল। সে দলের নামই সাম্প্রদায়িকতার বড় প্রমাণ। তাহলে আপনি কোন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াতে চান?
(১১) যে দেশে আপনারা মাত্র ৯% হয়েও সরকারি চাকরিতে ৩০% ভোগ করছেন, এর চেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িকতার নজির হতে পারে না। অথচ সে দেশকে বিশ্বের কাছে আপনি সাম্প্রদায়িক বানিয়ে ছাড়লেন!
প্রিয়া সাহা! ট্রাম্পের কাছে দেয়া আপনার বক্তব্য অসাম্প্রদায়িক নয় বরং চরম সাম্প্রদায়িক।