

মাত্র চার বছর বয়স তাসলিমা তুবার। কথা বলতে শিখার আগেই বাবা নেই। ঠিক বেঁচে নেই এমন না। বাবা বেঁচে আছেন। কিন্তু তুবার বাবা থাকার পরেও নেই। মা তাসলিমা রেনুর সাথে প্রায় দুই বছর আগে বিচ্ছেদ হয়। নিজের বড় ভাই ১১ বছর বয়সী আল মাহি বাবার সাথেই থাকে। তুবার আপন বলতে মা রেনুই ছিলো একমাত্র ভরসা। খেলার সাথী আর যাই বলি ওই মা-ই ছিলো একমাত্র আপন যে তাকে আগলে রাখবে। যার কাছে সে সবচে বেশি নিরাপদে থাকতে পারবে। সেই মা! নেই। ছেলে ধরা গুজবের শিকার হয়ে রাস্তায় মানুষের কিল, ঘুষি, লাথি খেয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছে।
গত শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে গিয়েছিলেন নিহত রেনু (৪০)। খোঁজ নিতে চাচ্ছিলেন নিজের মেয়ে তাসলিমা তুবাকে (৪) ভর্তি করা সংক্রান্ত তথ্য। সেখানেই ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে তাসলিমা বেগম রেনুকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্থানীয়রা। (উল্লেখ্য, এ ঘটনায় গতকাল বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেনন নিহতের ভাগিনা নাসির উদ্দিন)। সংশ্লিষ্ট খবর পড়তে ক্লিক করুন….
১ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলো রেনু। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। মাস্টার্স পাশ করেছিলেন। পড়ালেখা শেষে ঢাকায় আড়ং ও ব্র্যাকে চাকরি করেছিলেন। বিয়ের পরও স্বামীর সাথে ঢাকাতেই থাকতেন। এক ছেলে আর এক মেয়ে হয় তাদের সংসারে। এরপর প্রায় দুই বছর আগে স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ছেলে আল তাসফিক আল মাহি (১১) বাবার সাথে থাকে। মেয়ে তুবাকে (৪) নিয়ে ছিলো রেনুর বেঁচে থাকার লড়াই। টিউশনি করিয়ে চলছিলেন মেয়ে তুবাকে নিয়ে।
হত্যার ভিডিওসহ মূল খবর পড়তে এখানে ক্লিক……..
একমাত্র ভাই আজগর আলী থাকে আমেরিকায়। সেখানেই যাওয়ার কথা ছিলো রেনুর। সেদিনও পাসপোর্ট-ভিসার কাজে নিজের পরিচয়পত্র সাথে নিয়ে বেরিয়েছিলেন। সেই সাথে খোঁজ করতে গিয়েছিলেন স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করার বিষয়। কিন্তু না মেয়েকে ভর্তি করতে পেরেছেন আর না আমেরিকায় যাওয়া হলো তার। ছেলেধরা গুজবে প্রান হারিয়ে রেনু এখন কবরে শায়িত। বাবা-মা হারানো তুবা (৪) যেন এখন পৃথিবীর সবচে অসহায় শিশু। নিজের মাকে বাঁচাতে পারেনি তুবা। এখন তার কান্না থামানোর কেউ নেই। মাকে হারিয়ে অঝরে কাঁদছে তুবা। কে দিবে তাকে শান্তনা? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে আস্থা হারানো রাষ্ট্রে আইন হাতে তুলে নেওয়া জনতা? নাকি রাষ্ট্র? কে নিবে তুবার কান্না থামানোর দায়িত্ব?
তুবার কান্না….
/এসএস