লাল লিপস্টিকে ভিডিওতে এসে প্রিয়া সাহার সাফাই ; আমজনতার প্রতিক্রিয়া

প্রিয়া সাহার সাফাই ; আমজনতার প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৯

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভূয়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মতো অপরাধ করা প্রিয়া সাহা সরাদেশে নিন্দিত হওয়ার মধ্যেই চরম ঔদ্ধত্বপূর্ণভাবে নিজের কৃতকর্মের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সারাদেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই একজনের সাথে অনলাইন ভিডিও আলাপকালে তিনি তার বক্তব্যের ব্যাপারে কোনো ধরণের দুঃখ প্রকাশ তো করেননই নি বরং তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে জড়িয়ে আরও বিভ্রান্তমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, লাল লিপস্টিক লাগিয়ে বেশ পরিপাটি আকারে তিনি ভিডিওটি তৈরি করেছেন সাথে সাথে বেশ সাহসিকতার সাথেই তিনি একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কথা বলছেন।

তার বক্তব্যে একটা ব্যাপার অনেকটাই স্পষ্ট আকারে বুঝা গেছে যে, তিনি সিকিমের লেন্দুপ দর্জির মতো এদেশেও আমেরিকার সৈন্য মোতায়েনের সিড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন কোনো সাম্রাজ্যবাদী গোষ্টির দ্বারা। দেশের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে তার এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

তেমন কিছু সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিক্রিয়া এখানে তুলে ধরা হলো :

নাগরিক টিভি, চ্যানেল নাইন, এসএ টিভিসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে কর্মরত সিনিয়র রিপোর্টার ফারহাদ হোসাইন তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন,

ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগের ব্যাখ্যায় প্রিয়া সাহা যা বললেন, তাতে বোঝা গেল দেশ জুড়ে সব পক্ষ থেকে নিন্দার ঝড় বইলেও তিনি তার অবস্থানে অটল। কোন ধরনের ভুল স্বীকার কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেননি তিনি। বরং তার তথ্য যে সঠিক তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো, এই ধরনের অভিযোগ কিন্তু বলে যে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই। আপনি কি সেটাই বোঝাতে চান? জবাবে, তিনি পাশ কাটিয়ে অন্য বক্তব্য দিয়েছেন। তার মূল উদ্দেশ্য মৌলবাদীদের হটাতে সরকারকে সহায়তা করা। কিন্তু সরকারের প্রধানমুখপাত্র কিন্তু বলেছেন, তার অভিযোগ দেশদ্রোহিতার শামিল। তার সংগঠন-হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদও কিন্তু প্রিয়া সাহার অভিযোগকে স্বীকার করে না। সংগঠনটি বলেছে, ট্রাম্পের কাছে প্রিয়ার বক্তব্য একান্ত তার নিজস্ব। আর সংগঠনও তাকে সেখানে পাঠায়নি। সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে তিনি দাওয়াত পেয়ে সেখানে গেছেন। এমনকি জানতেন না, ট্রাম্পের সাথে তার দেখা হবে। যখন দেখা হলোই, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সরকার যেহেতু দেশে মৌলবাদের উত্থান চায় না, সেই বিষয়ে যাতে আমেরিকা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে এজন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। (তথ্যসূত্র: প্রিয়া সাহার ৩৫ মিনিটের ইউটিউব বক্তব্য)

তানভির শাহরিয়ার রিপন নামে একজন মন্তব্য করেছেন,

মামলা খারিজ হয়েছে, দেশেও ফিরতে পারবেন তিনি ! যদিও সরাসরি বিদেশী শক্তির কাছে নিজের দেশের নামে নালিশ করা কতটা গর্বের আর যৌক্তিত সে তর্কে না গিয়েও বলা যায়, ভৌগলিক অবস্থান এবং পাশ্ববর্তী দেশের কাছে জিম্মি বলে কৌশলগত একটা সুবিধা প্রিয়া সাহা পেয়ে যাবেন । তবে একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো কোনো ভাবেই সংখ্যালঘু নির্যাতন যেমন সমর্থন যোগ্য নয় তেমনি দেশের বদনাম বিদেশী শক্তির কাছে করাও কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না ।

মঈনুদ্দিন খান তানভীর নামে একজন সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট তার আইডিতে লিখেছেন,

ভাবতে পারেন! রানা দাশগুপ্ত তার (প্রিয়া সাহা) পক্ষে সাফাই গাইল, কাজল দেবনাথ তার বক্তব্যের ব্যখ্যা দিল। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নীতিগতভাবে তার পাশে দাঁড়ালো। হিন্দু আইনজীবী পরিষদ পাল্টা মামলা করার হুমকি দিল। বাংলাদেশ হিন্দু জোট শক্তভাবে তার পক্ষে অবস্থান নিল। এতবড় অপরাধের পর ও যেরকম একতার সাথে তা মোকাবেলা করছে। তাকে মাফ চাওয়ার আহবান জানানোর বদলে তার পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নিচ্ছে। তাতে একথা মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, এদের প্রায় সবার মানসিকতাই কাছাকাছি। সুযোগ পেলে এরা কেউই কম যায় না। একটা ষড়যন্ত্র তো প্রকাশ হয়ে গেছে। আড়ালে আবডালে আরো কত শত রাষ্ট্রবিরোধী কাজে তারা জড়িত, আল্লাহ মালুম!

ইমন ইকবাল নামে একজন প্রিয়া সাহার বক্তব্য দেখে মন্তব্য করেছেন,
“আপনি এই কথা গুলা য়ে আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন, চোখের ইশারাই তার প্রমান দিলেন”

মাহবুবুল হক নামে একজন মন্তব্য করেছেন,
ইতিহাস সাক্ষী স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে ছোট খাটো ঘটনা ছাড়া এরকম জঘন্য ঘটনা ঘটেনি এটা সুকৌশলে মুসলমান এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

খালেদ পারভেজ নামে একজন মন্তব্য করেছেন,
পরের যে ভিডিও দেখলাম সেখানে কিছু রাজনীতির গন্ধ পাওয়া যায়, সে বলল ২০০১ থেকে হিন্দু নির্যাতন, আওয়ামিলীগ নির্যাতন, অথচ ট্রাম্পের কাছে কিন্তু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বলেছেন, এর অর্থ হল এই মহিলার পিছনে আরো কেউ আছেন খুবই শক্তিমান।

আবদুজ জহির নামে একজন মন্তব্য করেছেন,
প্রিয়া সাহা যাদের স্বার্থে এই কাজটি করেছে তারাই তাকে রক্ষা করছে। এটা একটা রাজনৈতিক গেইম। বাংলাদেশের মুসলমানদের উগ্র প্রমাণ করতে পারলেই একটি রাজনৈতিক দল ও একটি দেশের বিশেষ সুবিধা আছে। আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করা যাবে হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ রা ঐ নিদিষ্ট রাজনৈতিক দল ছাড়া অন্য কোন দল ক্ষমতায় গেলে নিরাপদ নয়। কৌশলী ভূমিকা কৌশলেই হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব জায়গাতেই প্রিয়া সাহার পরবর্তি বক্তব্যকে ঔদ্ধত্বপূর্ণ ও রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবেই দেখছেন সবাই। তবে সংখ্যালঘুদের মধ্যে কাউকে কাউকে দেখা গেছে প্রিয়া সাহার পক্ষে অবস্থান নিতে। তারা অনেকেই মনে করেন, প্রিয়া সাহা যা করেছেন তা সঠিক করেছেন। সংখ্যালঘুদের স্বার্থেই করেছেন।

মন্তব্য করুন