পর্দা প্রথা অবরোধ নয়; পাপের প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০১৯

ফারজানা ইসলাম মিম

মানুষের জীবন ধারণের জন্য যেরকম ভাবে খাদ্য ও পানির প্রয়োজন, খাদ্য ও পানীয় ব্যতিরেকে যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে পর্দাও নারী জাতির জন্য এক অপরিহার্য বিষয়। অত্যাবশ্যকীয় বিধান। খাদ্য পানীয় অভাবে জীবননাশের আশংকা যতবেশি, পর্দার অভাবে সমাজ ও জাতির নির্মল, স্বচ্ছ-সুন্দর সাবলীল শান্তিপূর্ণ সচল প্রবাহ অবরুদ্ধ হওয়ার আশংকা তার চাইতেও বেশি। কেননা যার খাদ্য বা পানির অভাব হয় সে শুধু নিজে মারা যায়, অথচ একজন পর্দাহীনা লজ্জাহীনা নারীর দরুণ শুধু তার নিজেরই ধ্বংস সাধিত হয় না বরং সাথে সাথে সে ধ্বংস করে সামাজিক পরিবেশ। ধ্বংস করে অজানা, অচেনা অসংখ্য মানুষের জীবন। ধ্বংষ করে একাধিক পরিবার কিংবা সমাজ। সমাজ জীবনকে করে তোলে কলুষিত, ও দুর্বিষহ। আর সে নিজেতো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, লাঞ্ছিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় অনেক আগেই। এটাই পর্দাহীনতার খোদায়ী অভিশাপ ও ভয়াবহ পরিণতি।

প্রিয় পাঠক!
আজ এ পর্দার বিধান অনুসরণ না করার কারণেই পত্র পত্রিকা খুললেই দেখতে পাই নারী ধর্ষণ, খুন, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপের মতো চরম দুঃখজনক ও লোমহর্ষক সংবাদ। এ পর্দাহীনতার কারণেই আজ সমাজের ঘরে ঘরে স্বামী-স্ত্রীতে হচ্ছে মনোমালিন্য ঘটছে ঝগড়া-কলহ, চলছে বিবাদ-বিসংবাদ, অবশেষে সোনার সংসার ভেঙে হচ্ছে খান খান। এ পর্দাহীনতার বিষফলেই সমাজে চলছে জেনা-ব্যভিচার। লিপ্ত হচ্ছে যুবক যুবতীরা অবৈধ কর্মকাণ্ডে, হারাচ্ছে নারী তার সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ নারীত্ব, আর কুমারী খোয়াচ্ছে তার অমূল্য সতীত্ব। এ পর্দাহীনতার দরুণই মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে পরকীয়া প্রেম, লিভ টুগেদার, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কালচার, অশ্লীল পত্র পত্রিকা, পর্ণো সাহিত্য (?) ইত্যাদি।

এ পর্দাহীনতার কারণেই ৪ সন্তানের জননী রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাচ্ছে দেবরের হাত ধরে, আবার ৬ সন্তানের জনক নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে আপন শ্যালিকার সাথে। এ পর্দাহীনতার কুপ্রভাবেই উদ্ভব হচ্ছে নিত্য নতুন রোগ। মরণব্যাধি এইডস ও অন্যান্য ভয়ংকর ব্যাধি। যদ্দরুণ এশিয়া থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে আমেরিকা সর্বত্রই মৃত্যুর হিম শীতল কোলে ঢলে পড়ছে লাখো বনী আদম। আপনারাই বলুন! এসব পর্দাহীনতার নগদ অভিশাপ নয় কি? ইসলাম নারী জাতিকে পর্দার যে বিধান দিয়েছে। কুরআনে কারীম সুস্পষ্ট ভাষায় পর্দাপালনের যে নির্দেশ দিয়েছেন। সায়্যিদুল মুরসালিন খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদ সা. আজ থেকে চৌদ্দশ বছর পূর্বেই যে পর্দানীতি প্রচলন করেছেন এটা কি বর্বর প্রথা, মধ্যযুগীয় বিধান, কিংবা সেকেলে নিয়ম হতে পারে? হতে পারে কি এটা প্রগতি ও উন্নতির পথের প্রতিবন্ধক বা অন্তরায়? না, কস্মিনকালেও না।

পাঠক বৃন্দ!
আমি প্রগতির ধ্বজাধারী ঐসব নারীবাদীদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই ‘প্রগতির’ অর্থ যদি হয় স্বেচ্ছাচারিতা, উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা। প্রগতির মানে যদি হয় উলঙ্গ অর্ধোলঙ্গ হয়ে হায়ওয়ান জানোয়ারের মতো অপরের হাত ধরে নাইটক্লাব আর ডিস্কোবারে গিয়ে পেয়ালার পর পেয়ালা শ্যাম্পেন- হুইস্কি গিলে ঢলাঢলি নাচানাচি আর মাতামাতি! প্রগতির উদ্দেশ্য যদি হয় ব্যভিচার-বহুগামিতা আর ফ্রী সেক্স বা জরায়ুর স্বাধীনতা!! তাহলে একথা অবশ্যই ঠিক যে, চিরসুন্দর চিরশাশ্বত পর্দার বিধান ও ধরণের তথাকথিত প্রগতির প্রধান অন্তরায়। আর তাই এ ধরণের ঘৃণিত ও নোংরা তথাকথিত প্রগতিকে আমরা জানাই ধিক শতাধিক। থুথু ফেলি আমরা ঐ প্রগতির উপর, যে প্রগতি মানুষকে পরিণত করে পশুতে, যে প্রগতি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বনী আদমকে করে নির্লজ্জ মল খেকো প্রাণী বিশেষের ন্যায় অসভ্য। যে প্রগতি ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে দেয় বিবাহ বিচ্ছেদ আর অশান্তির বহ্নিশিখা, যে প্রগতি হাজার হাজার সাজানো সোনার সংসার ভেঙে করে চুরমার।

সুস্থ বিবেক সম্পন্ন প্রিয় পাঠক!
‘ইতিহাস কালের নীরব সাক্ষী’। আমরা কি জানি? টানা ৮০০ বৎসর দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন করার পরও কেন মুসলমানদের হাত থেকে ফসকে গিয়েছিলো তদানীন্তন শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, তাহজিব-তামাদ্দুন, কৃষ্টি-কালচার, আর চোখ ধাঁধানো-মন মাতানো অপূর্ব সুন্দর নৈসর্গিক দৃশ্যের দেশ উন্দুলুস বা আজকের স্পেন? কেন সুদীর্ঘ ৭০০ বছর জাঁকজমকের সাথে সিংহাসন দখলে থাকার পরও উপমহাদেশের স্বাধীনতা রক্তিম সূর্য অস্তমিত হয়েছিলো। হ্যাঁ, এর কারণ আর কিছু নয়। এর মূল কারণ হচ্ছে ইসলামের চিরদুশমন ঐ ইয়াহুদী খৃষ্টান হিন্দু ও বৌদ্ধ গোষ্ঠী ভালো করে জানে যে, বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে, পাশবিক নির্যাতন করে মুসলমানদের প্রাণের চেয়েও বেশি মূল্যবান ‘ঈমান’ কে খতম করা যাবে না। এটম, হাইড্রোজেন বোম আর মিসাঈল ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে মুসলমানদের মুসলমানিত্ব ধ্বংস করা যাবে না।

বরং তারা বহু আলোচনা, পর্যালোচনা, গবেষণা ও রিসার্চের পর এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, মুসলমানদের ইমান-আমল, মুসলমানিত্ব, জিহাদি জজবা, দীনি চেতনা ও আত্নাভিমানের জন্য বিধ্বংসী এটম আর সর্বনাশা মারণাস্ত্র হচ্ছে পর্দাহীন অর্ধোলঙ্গ নারী। এ নারীদের দ্বারাই মুসলমানদের ঈমান ও ইসলামকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিতে হবে। আর তাইতো আজ ঐসব মগজবেচা, বুদ্ধিবেচা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা রুশ-আমেরিকার টাকা খেয়ে, দেশে এনজিও নামধারী কিছু কুচক্রী গ্রুপের মাধ্যমে আমাদের চির সম্ভ্রান্ত পর্দানশীন মা-বোনদেরকে বাড়ির জান্নাতি পরিবেশ থেকে টেনে হেচড়ে বের করে সুখের সোনার হরিণ পাইয়ে দেয়ার রঙ্গিন রঙ্গিন স্বপ্ন দেখিয়ে পর্দাহীন অর্ধনগ্ন করে, পেট পিঠ অনাবৃত করে রাস্তা ঘাটে নামাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে শ্লোগান দেয়াচ্ছে- ‘আমার দেহ আমার মন-তাতে কেন অন্যজন’? ‘কিসের ঘর কিসের বর-সব হলো স্বার্থপর’!!

পাঠক বন্ধু!
আমি বিদ্রোহী কলমে জানিয়ে দিতে চাই; ধৈর্যের সীমা আছে, সহ্যের শেষ আছে। এতদিন পর্যন্ত তোমরা আঘাত হেনেছ আমাদের আমল ও আখলাকের ডাল-পালায়, শাখা-প্রশাখায়, কিন্তু এখন তোমরা সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে, পুরোপুরি হতাশ হয়ে আমাদের ‘ঈমান’ নামক বৃক্ষের গোড়া কাটতে উদ্যত হয়েছ কিন্তু তোমরা খুব ভালো ভাবে স্বরণ রেখো, দিলের কর্ণে শুনে রাখো; আমরা আমাদের শরীরের আখেরি কাতরা লহু দিয়ে হলেও, জীবনের বাজি লাগিয়ে হলেও, সর্বোচ্চ শক্তি নিংড়ে দিয়ে হলেও আমাদের এ সুন্দর ও স্বাধীন সবুজ দেশকে, আমাদের ঈমান ও আকায়েদকে, আমাদের বিশ্বজয়ী তাহজিব ও তামাদ্দুনকে, আমাদের কালজয়ী সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে, আমাদের প্রভু প্রদত্ত ও পর্দা বিধানকে, আমাদের মা বোনদেরকে তোমাদের সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হতে হিফাযত করবোই করবো।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী

মন্তব্য করুন