আরব বসন্ত: একটি বিপ্লবের ব্যর্থ সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ৪:২৯ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০১৯
  • আরব বসন্ত ইতিহাসে মরিচিকাময় এক রক্তাক্ত বিপ্লব।
  • মিশরের ড. মুরসির মৃত্যুর পর আরব বসন্ত আরও প্রাসঙ্গিক হয়েছে।
  • আরবদের ভাগ্য পরিবর্তনের এই প্রচেষ্টা আন্দোলন সফলতার মুখ দেখেনি।
  • ইসলামের লেবাসের আড়ালে স্বৈরতন্ত্র ও ইসলাম ধ্বংশের পায়তারা চালানো আরব শাসকদের পতন জরুরী এখনও।


(১)

পৃথিবীর ইতিহাসে যে সকল বড় বড় পরিবর্তন হয়েছে তার অধিকাংশই সাধিত হয়েছে বিপ্লবের মাধ্যমে। তাই বিপ্লবকে প্রগতির জন্য এক আশীর্বাদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিপ্লবকে এখনো পৃথিবীর ইতিহাসে মোড় পরিবর্তক হিসেবে ধরা হয়। সকল বিপ্লব সমর্থনকারী ব্যক্তির মনে বিপ্লব মানেই হল সাধারণ মানুষের মুক্তি, অধিকার প্রতিষ্ঠা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। ইতিহাসও অনেকটা তাই সমর্থন করে। কিন্তু কখনো কখনো এর বিপরীতও হতে পারে। অর্থাৎ মানুষের মুক্তি, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা নাও হতে পারে। তারই সাক্ষ্য বহন করে একবিংশ শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় বিপ্লব “আরব বসন্ত”। আরব বসন্ত যে লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল অর্থাৎ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জনসাধারণের অধিকার রক্ষা, বেকারত্ব ঘোচানো ও স্বৈরশাসনের অবসান করা এসবের সব কিছুই আজ প্রায় মরিচিকা।

আরব বসন্তের সূত্রপাত ঘটে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিউনিসিয়ায় “বুয়াজিজি” নামক এক শিক্ষিত মুদি দোকানদার প্রকাশ্য নিজ শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন। আর এটি ছিল তৎকালীন তিউনিসিয়ার বিদ্যমান দুর্নীতি, অপশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ। বুয়াজিজি ছিলেন একজন শিক্ষিত যুবক পড়াশুনা শেষ করে চাকরীর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন চাকুরী না পেয়ে স্বল্প পুঁজি নিয়ে মুদি দোকান নিয়ে বসেন। কিন্তু পুলিশের দুর্নীতি ও ঘুষের স্বীকার হয়ে তার এই সামান্য ব্যবসাও পণ্ড হয়ে যায়। ফলে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরেও ন্যায় বিচার না পেয়ে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে বেন আলী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। এই আগুন নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে সকল তিউনিস প্রতিবাদীর রক্তে। ফলে আন্দোলন দানা বাঁধে।

২৬ ডিসেম্বর বুয়াজিজি মৃত্যুবরণ করলে এই আন্দোলন নতুন মাত্রা লাভ করে। প্রথমে এই আন্দোলন সমগ্র তিউনিসিয়া কে উত্তাল করে তোলে। পরবর্তীতে তা সীমান্ত ছাড়িয়ে মিশর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, লিবিয়াসহ প্রায় সমগ্র আরব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। হরতাল, অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, মিছিল-মানববন্ধন চলতে থাকে সমান তালে। এদিকে পশ্চিমা মিডিয়ার ক্যামেরার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় আরবের ওই রাষ্ট্রগুলো। আন্দোলনকারীদের পক্ষে বৈশ্বিক জনমত তৈরি করতে এসব মিডিয়া প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য মোড়ল রাষ্ট্রগুলোও শর্তহীন সমর্থন দিতে থাকে আন্দোলনকারীদের। চলে সাহায্য-সহযোগিতাও। এর মধ্য দিয়েই বেন আলীর পতন হয় এবং একইসাথে তথাকথিত অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানদের পতনও শুরু হয়ে যায়।

২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে তিউনিসিয়ায় আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে ১৪ জানুয়ারি বেন আলী তার দীর্ঘদিনের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি নেন এবং পালিয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। এতে আপাত দৃষ্টিতে বিদ্রোহীরা সফলতা লাভ করলে এর ঢেউ পার্শ্ববর্তী দেশেও আঘাত হানে। প্রথমেই এই খড়গ উঠে মিশরের উপর। মিশরে প্রায় ৩০ বছর ধরে একক শাসন পরিচালনা করে যাওয়া স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের সরকারের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিশরের সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে এবং তাহারির স্কয়ারে একত্রিত হয়। ফলে বাধ্য হয়ে হোসনি মোবারককে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা থেকে নেমে আসতে হয়। এতে জনগণ উল্লাসে ফেটে পড়ে। প্রায় একই সময়ে অন্যদিকে লিবিয়ার সাধারণ জনগণও দীর্ঘস্থায়ী একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। কিন্তু গাদ্দাফি এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। তিনি আন্দোলনকারী জনগণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি বরং আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীদের কে ইউরোপ ও আমেরিকা জোট অস্ত্র সরবরাহ করে ফলে লিবিয়াতে গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করে। এই অবস্থা দীর্ঘ নয় মাস চলার পর ২০ অক্টোবর গাদ্দাফি পরাজিত ও নিহত হন। অপরদিকে সিরিয়ার সরকার বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু বাশার আল আসাদ বিদ্রোহীদের কে মাথা তুলে ধারাতে দেননি। ফলে বাশার আল আসাদ বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকে যা আজও বিদ্যমান রয়েছে। একইভাবে ইয়েমেনে স্বৈরাচারী শাসক আব্দুল্লাহ সালেহের পতন ঘটে এবং ক্ষমতায় আসেন আব্দুরাব্বে মানসুর। বাহরাইনে বিদ্রোহ দেখা দিলেও তা ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। তবে সেখানেও অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়াও আরবের অন্যান্য অঞ্চলেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পরছিল যদিও ঐসব অঞ্চলে এই বিপ্লব ততটা সাফল্য লাভ করতে পারেনি।

(২)

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আরব বসন্তের ৮ বছর পর আরবরা কি ফলাফল পেল?

অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়েই পশ্চিমা মিডিয়া তিউনিসিয়ায় শুরু হওয়া বিপ্লব কে আরব বসন্ত হিসেবে প্রচার করে এবং এই বিপ্লবকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। আরব বসন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আট বছর পরে এসে এখন অনেকেরই জানার ইচ্ছা যে আসলে আরব বসন্ত তার কাঙ্ক্ষিত দাবী পূরণ করতে পেরেছে কিনা? বা আরব বসন্তের প্রভাব কতটুকু?

যে তিউনিসিয়ায় সুশাসন, মানবাধিকার ও বেকারত্ব নিবারন করে সমাজে আলো জ্বালানোর জন্য নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন বুয়াজিজি সেখানে এখনো পূরণ হয়নি বুয়াজিজির স্বপ্ন। ১৪ জানুয়ারি ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বেন আলী পদত্যাগ করার পর গনতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতায় আসেন ঘানুচি। তিনিও পরিবর্তিত হয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেজি সাঈদের আগমন হয়। কিন্তু তিউনিসিয়ার জনগণের জীবনমানের কোন উন্নতি হয়নি। এখনো সেখানে সাত লক্ষ লোক বেকার। তার উপরে মুদ্রাস্ফীতি ও সাধারণ জনগণের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ। সব মিলিয়ে তিউনিসিয়া খুব ভাল অবস্থানে নেই। মিশরে মোবারক কে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুড গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসেন। হাফেজ মুহাম্মদ মুরসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বছর শাসন পরিচালনার পর সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেন এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে সিসির উত্থান হয়। ফলে মিশরে আবার জনগণের স্বাধীনতা খর্ব হয়। এদিকে মুরসীসহ তার দলের বহু নেতা কর্মী এখন জেলে দিনাতিপাত করছে। লিবিয়াতে অবস্থা আরও খারাপ। গাদ্দাফি থাকা কালে লিবিয়াতে গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকলেও লিবিয়ার সাধারণ জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণ ও জীবন যাত্রার মান নিশ্চিত ছিল। কিন্তু আরব বসন্তের পর লিবিয়াতে গৃহ যুদ্ধ দেখা দেয়। লিবিয়ার সাধারণ জনগণের হাতে পশ্চিমারা অস্ত্র তুলে দেয় এবং ন্যাটোর হস্তক্ষেপের কারণে লিবিয়ার কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠীর শাসন গড়ে উঠে যা বর্তমানেও বজায় রয়েছে। ফলে লিবিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন আজ বিপর্যস্ত। একইভাবে সিরিয়াতে আজ হাজার হাজার নারী শিশুর রক্তের স্রোত আরব বসন্তের মূল্য দিচ্ছে।

আরব বসন্তের সূচনালগ্ন হতে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ কে উৎখাত করার জন্য সাধারণ জনগণ বিদ্রোহ করে। তাদের কে মার্কিনীরা অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে আন্দোলন কে আরও বেগবান করে তোলে। অপরদিকে যখন বাশার পরাজিত হওয়ার পথে তখনই তার পাশে এসে দাঁড়ায় রাশিয়া ও ইরান। ফলে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়। যা আজও জীবিত। ফলে আরব বসন্ত সিরিয়ার সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবার পরিবর্তে তাদের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস করে দিয়ে কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার তাজা প্রাণ। একইভাবে ইয়েমেন ও বাহরাইনে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ভাবে জন্ম নিয়েছে সশস্ত্র যুদ্ধ। বিপর্যস্ত হয়েছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। কিন্তু ফিরে আসেনি আরব বসন্তের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। নিশ্চিত হয়নি সাধারণ মানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকার।

এক কথায় আরব বসন্ত ছিল গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মূলা ঝুলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে পশ্চিমা বিশ্বের অস্ত্র ব্যবসা, তেল আমদানি ও তাদের মদদপুষ্ট শাসকের ক্ষমতায় বসানোর একটি এজেন্ডা মাত্র। যা আজ বর্তমান বিশ্বের সামনে স্পষ্ট। কোটি কোটি মুক্তিপ্রেমী মানুষের ওই জাগরণ কার্যত বিফল হয়েছে। বসন্তকাল তো আসেই নি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে তারা মুখোমুখি হয়েছে ঘোর শৈত্যপ্রবাহের। মধ্যপ্রাচ্যকে আরও কতদিন এই আরব বসন্তের মূল্য পরিশোধ করতে হয় তাই এখনো বলা মুশকিল।

সবগুলো আরব মুসলিম রাষ্ট্রেই আরব বসন্তের বিপ্লবীদের মাঝে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার তাগিদ ছিলো না। এরা সবাই পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা নিয়েই নেমেছিল। তাই পশ্চিমারাও তাদের আরব বসন্তের নামে প্রমোট করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে মিশরের ক্ষমতায় চলে আসা ইসলামী বিপ্লবী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুড। ১ বছরের মাথায় মিশরে আরব বসন্তের সুবাদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিপুল জনসমর্থন পেয়ে ক্ষমতায় বসা মুরসি (মৃত্যু : ১৭ জুন, ২০১৯) সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয় সে দেশের সেনাবাহিনী। মুক্তিপ্রেমী মানুষের কাছে এই ঘটনা ছিল অনাকাঙ্খিত। কিন্তু এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি রহস্যের আবরণে ঢাকা পড়ে যখন সেনা অভ্যুথানের কোনোরূপ বিরোধিতা না করে আমেরিকা, সৌদি আরব এবং ইসরাইল মিশরের সেনাপ্রধানকে হাজার হাজার ডলার আর্থিক সাহায্য পাঠায়। এমনকি পশ্চিমারা সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণকে প্রাথমিকভাবে সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে মানতেও ছিল নারাজ। কারণ সেনা অভ্যুত্থান হিসেবে মেনে নিলে আর্থিক সাহায্য পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী হতো। সব মিলিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, মিশরে সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে পশ্চিমা সমর্থন ছিল এবং আজ পর্যন্ত সে সমর্থন অব্যাহত আছে। জেনারেল সিসি আবির্ভূত হয়েছে নব্য হোসনে মোবারকের ভূমিকায়। দুর্নীতি ও হত্যার অভিযোগ তুলে যে স্বৈরশাসককে ক্ষমতা থেকে নামাতে গিয়ে শত শত মিশরীয় প্রাণ হারালো সেই হোসনে মোবারককে এখন নির্দোষ প্রমাণ করতে দেখা যাচ্ছে। মিশরের একটি আদালত ২০১১ সালের গণজাগরণে সরকারি বাহিনীর গুলিতে প্রায় আট শতাধিক মানুষের প্রাণহানির অভিযোগ থেকে হোসনে মোবারককে অব্যাহতি প্রদান করে। রায়ে বলা হয়, জনতার উপর গুলি চালাবার নির্দেশ উচ্চ পর্যায় থেকে আসেনি। গণমাধ্যমসূত্রে জানা যাচ্ছে, এই রায় মিশরের মুক্তিকামী মানুষ মেনে নিতে পারেনি। এতদিনে হয়তো মিশরবাসী বুঝে উঠতে পারছে যে, মুক্তি তাদের ভাগ্যে জোটেনি, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের সাথে এক প্রকার ছলনা করেছে মাত্র।

আরব বসন্ত আরবদের কিছুই দেয়নি, অথচ নিয়ে গেছে সর্বস্ব। পশ্চিমা প্রচারিত কথিত আরব বসন্ত আজ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি কেড়ে নিয়েছে, নিরাপত্তা কেড়ে নিয়েছে, বহু নিষ্পাপ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। পৃথিবীকে দিয়েছে অনিরাপত্তার নতুন মাত্রা। এর ধকল কাটাতে ভাবি পৃথিবীকে হয়তো আরও বহু সময় অতিক্রম করতে হবে। এই যে এতকিছু হলো এবং হচ্ছে- এর জন্য প্রধানত কে দায়ী? আমি বলব সাম্রাজ্যবাদ। এ সব কিছুর মূলে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ উদ্ধার। এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনকে রুখে দিতে না পারলে এমন পরিস্থিতি ঘুরে ফিরেই অবতীর্ণ হবে। তাই শান্তিপূর্ণ ও মুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আরব বসন্তের সুফল শুধু মাত্র ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে আসতে পারে। সারে ১৪শত বছর পূর্বে অশান্ত আরবদের ইসলামই স্বস্তি ও শান্তি দিয়েছিল। শতভাগ মুসলিম দেশ গুলোতে পুঁজিবাদী গণতন্ত্র নয় ইসলামই একমাত্র সমাধান। মানবতাকে ধ্বংস ও বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম কে পাঠিয়েছে। মহানবী সাঃ দুনিয়াতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার দুর্জয় সংগ্রাম চালিয়েছেন।

মানব জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব, সর্বযুগের সকল মানুষের মুক্তিদূত, মানবতার মহান বন্ধু হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী রাসূলদের সর্বশেষ ব্যক্তিত্ব, আখেরী নবী। আইয়ামে জাহেলিয়াতের সমাজে আবির্ভূত হয়ে তিনি বিশ্ব ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব সাধন করে প্রতিষ্ঠা করেন শান্তির সমাজ। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থার অনুকরণে গড়ে উঠে ‘খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুয়াত’ বা নবুয়াতের পদ্ধতিতে খেলাফত ব্যবস্থা। কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমদের জন্য ইসলামি খেলাফত ছাড়া মুক্তির কোন মন্ত্র নেই। আজ মুসলিম দেশগুলোতে বিভিন্ন ধরণের সরকার চালু রয়েছে। ক্ষমতার হাত বদলই ইসলামী বিপ্লবের মূলকথা নয়। নিছক ক্ষমতা দখল ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তন আনয়নই উদ্দেশ্যে। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত মহানবী সা-এর জীবনী ও কর্মপন্থা, খুলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টান্ত, বিগত প্রায় দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের ইতিহাস, ইমাম মুজতাহিদগণের সংগ্রামী সাধনার অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে রয়েছে। মদীনার দুই গোত্রের লড়াই বন্ধ করে ইসলাম দিয়েছিল শান্তির সমাজ। সেই থেকে শুরু, গোটা আরবে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাম্য, মানবতা, ন্যায়বিচার, সভ্যতা আর সমৃদ্ধির এক কল্যাণরাষ্ট্র। ধীরে ধীরে অর্ধ পৃথিবী জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ইসলামী সম্রাজ্য। অমুসলিমরা পর্যন্ত এসে আবেদন করতো তাদের রাষ্ট্রে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে। শান্তি আর নিরাপত্তার রাজ্যে কে না থাকতে চায়? স্পেনের ইতিহাস তো সে কথাই বলে। ভারত বর্ষের ইতিহাসও তো অভিন্ন নয়।

তাই বলা যায়, আরব বসন্তের সুফল এনে দিতে পারে একমাত্র ইসলামী বিপ্লব।

লেখকঃ সামছ্ আল ইসলাম ভূঁইয়া। কলামিস্ট, রাজনৈতিক, শিক্ষক।

মন্তব্য করুন