‘বিবাহর্পূ্ব প্রেম-পরকীয়া দাম্পত্য জীবনের অভিশাপ’

প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০১৯

শাইখ মাহমূদ হাসান

প্রাপ্ত বয়সে যৌনচাহিদার ক্ষুধা মিটাতে বর্তমান প্রজন্মের তরুন-তরুণিরা প্রেম নামক মরন ফাঁদে পা বাড়ায়। অনলাইন- অফলাইনে নিজের একাকীত্ব দূর করতে অনেকই বেঁচে নেয় প্রেমের পথ। কখনো কখনো সহজ সরল ছেলে-মেয়েটা শয়তানের ধোঁকা ও বন্ধুদের পিড়াপিড়িতে কারো সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। যা এক সময় তার সুখের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশে ক্ষেত্রে নির্জন আড়ালে যখন প্রিয় দুটি মানুষের সাক্ষাত হয় তখন অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হতে একটুও তারা চিন্তা করেনা। বিবাহের আগে মা- বাবা, ভাই-বোন ও নিকটতম ব্যক্তিদের ফাঁকি দিয়ে প্রেম করাকে যারা কোনো রকম খারাপ কিছু মনে করে না তাদের কপালে বিবাহের পর দুর্গতি ছাড়া আর কী থাকতে পারে? যে সকল ছেলে-মেয়েরা প্রেমের নামে একে অপরকে মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে টাইমপাস করে তাদের তাকদিরে হতাশা ছাড়া আর কী লিখা থাকতে পারে? যারা প্রেমকে পবিত্র বলে রমনা, টিএসসি ও বোটানিক্যাল গার্ডেন- এ অবৈধ সন্তান জন্ম দেয় তাদের দাম্পত্য জীবন কতটা প্রেমময় হয় তা তাদের চেহারা দেখলেই অনুমান করা যায়।

‘আসলে বিবাহের আগে ছেলে-মেয়ের পরস্পর প্রেম- ভালোবাসা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম এমন সম্পর্ককে হারাম বলে। আর ইসলাম অসমর্থিত বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কেউ কখনো সুখি হতে পারে না। যারা জলন্ত দৃষ্টান্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নীর স্বামী রিফাত শরীফের হত্যাকান্ড। উল্লেখ্য যে, গতকাল বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সাবেক প্রেমিক নয়ন ও তার বন্ধুরা অসংখ্য মানুষের সামনে কুপিয়ে জখম করে। এবং ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত দেহে রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে’।

সেখানকার সিসি ক্যামারার ভিডিও ফুটেজ- এ দেখা যায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার করার সময় তার স্ত্রী মিন্নী তাকে তার সাবেক প্রেমিকা ও বন্ধুদের হাত থেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। খালি পায়ে অসহায় অবস্থায় চিৎকারে করে আশপাশের মানুষদের থেকে সহযোগীতা চায়। কিন্তু কেউ তার স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসনি। বরং রাস্তায় চলমান সকল মানুষই নিরব নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমনকি মিন্নীর ব্যাগ তার স্বামীর হত্যাকারীদের হাতে হেফাজতে আছে। আর তাকেও হত্যাকারীরা কোনো রকম আক্রমন করেনি। ফলে জনমনে সন্দেহ রিফাতের হত্যাকন্ডের সাথে সেও জড়িত কি না- এবং তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার জোর দাবী ওঠেছে।

রিফাত হত্যাকান্ড সম্পর্কে ভিডিও ফুটেজ- এর মাধ্যমে ঘটনা এতটুকুই জানা গেলেও আজকে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়া মারফতে বের হয়ে এসেছে অনেক অজানা তথ্য। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে যে, রিফাতের হত্যাকারীর মা বলেছেন মিন্নী তার ছেলের বিবাহিতা স্ত্রী। আর নয়নও মিন্নীকে তার সাবেক স্ত্রী দাবী করেই রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আর উভয়ের বন্ধুরাও তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছে।

প্রিয় পাঠক!
আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাকে যে বিষয়টা বুঝাবার জন্য চেষ্টা করছি তা হলো- এই যে, বর্তমান সময়ে অনেক তরুণ-তরুণিরা বিবাহের আগে প্রেম করলেও বিবাহের পর দাম্পত্যজীবনে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে। অনেকে তা ভুলেও যায়। বাবা-মা ও নিকটতম সবাই মিলে যার সাথে যাকে বিবাহ দেয় সে তাকে নিয়েই আগামীতে সংসার করার স্বপ্ন দেখে বাধ্য হয়ে। অপারগ হয়ে অতীতকে ভুলে বর্তমানকে নিয়ে সুখি হতে চায়। মিন্নীও হয়তো এমনটি চেয়েছিলো। কিন্তু অধিকাংশ সময় ছেলে মা বা মেয়ের পক্ষ থেকে যে তার নিজ ভালোবাসার মানুষের থেকে অবহেলা কিংবা দূরে সরে যাওয়া দেখে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কখনো নিজেই নিজের জীবনকে নিয়ে ভয়ংকর মৃত্যুর খেলা করে কিংবা বিষিয়ে তোলে নিজের জীবন। কখনো আবার হিংস্র হয়ে ওঠে প্রতিশোধ নেশায়। সেজন্যই সাবেক প্রেমিকা কিংবা নয়নের দাবি অনুযায়ী সাবেক স্ত্রীর স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করতে উদ্ধত হয় নয়ন। আর যখনই তার ওপর আক্রমণ করা হচ্ছিলো তখন মিন্নি তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষমেশ সাবেক প্রেমিকের অমানবিক পশুত্বের আচরণে সে তার স্বামীকে বাঁচাতে পারেনি।

এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেছে তা দ্বারা এতটুক বলতে পারি যে, এই হত্যাকান্ডের সাথে মিন্নীর কোনো রকম সম্পৃক্ততা থাকলে মিন্নী হয়তো এসময় তার স্বামীর সাথে না থাকতে পারত। কিংবা স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে সে পালিয়ে যেত। অথবা হত্যাকান্ডের পর সাবেক প্রেমিকের হাত ধরে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারত। এখন পর্যন্ত সে তো এসবের কোনোটিই করেনি। বরং সে তার স্বামী রিফাত হত্যার বিচার দাবী করেছে। এবং হত্যাকারীদেরকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানিয়েছে। তাই আপতত এমন সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকা চাই। এবং সামনে কোনো ধরনের তথ্য বের হয় তা জানতে আরো কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

দ্বিতীয়ত আপাতত যতটুক বুঝে আসে তা হলো, মিন্নী হলো নয়নের কলিজার টুকরা। তাকে পাবার নেশায় সে রিফাতকে হত্যা করেছে। এখন মিন্নীকে কোপানো হলে সে প্রেমিকাহীন হয়ে যাবে বিধায় তাকে সে প্রহার করেনি। আর মিন্নীর ব্যাগ হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলে তার বন্ধুমহলের পরিচিত কেউ তা হাতে রাখে। যা এখন সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল।

‘তৃতীয়ত যারা বলছেন উপস্থিত মানুষগুলো কেন প্রতিরোধ গড়ে তুলেনি? কেন সেখানকার প্রতক্ষদর্শীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রিফাতকে বাঁচাতে আসেনি? আমি তাদের কাছে জানতে চাই যে, আপনি সেখানে থাকলে কি করতেন? আপনি কি নিজের জীবনের পরোয়া না করে রিফাতকে বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের সামনে নিজেকে কুরবান করতেন? পারতেন কি রিফাতকে বাঁচাতে? নাকি নিজেকে বাঁচাতে অন্য পথ ধরতেন? অথবা মনে করেন আগামী দিনে কোনো একদিন আপনি রাস্তায় হাঁটছেন আর আপনার সামনে এমন কোনো ঘটনা ঘটতেছে তখন আপনি কি করবেন- একবারো কি তা ভেবে দেখেছেন?’

আসলে দূর থেকে ফেইসবুকে লেখালেখি করা খুবই সহজ। মিডিয়ায় গরম লেকচার দেওয়া আজ আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। আর সামনে কোনো পরীক্ষা আসলে তখনি উল্টো পথে ভোঁ-দৌঁড়। তথাপিও যারা রিফাত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদের অন্তর থেকে সুধাবাদ জানাই। ধন্যবাদ দিচ্ছি তাদেরকেও যারা এই হত্যাকান্ডের কারণে উম্মতের মানবিক বিপর্যয় উপলব্ধি করতে পেরেছেন। কারণ, আগামী দিনে আপনাদের মতোও হয়তো কোন মানুষ দুর্বিন দিয়ে খোঁজে পাওয়া যাবে না। হয়তো শোনা যাবে না কারো মুখে প্রতিবাদের আওয়াজ। এমনি এখন যতটুক মানবতা আছে সামনে হয়তো এতটুকও বাকী থাকবে না। ফলে অদূর ভবিষতে আবার প্রাচীনতম জাহিলিয়াত ফিরে আসবে সারা বিশ্বময়। আর কায়েম হবে কিয়ামত। তাই সবশেষ পাঠকের দরবারে আরজি বিবাহপূর্ব এসব প্রেম ভালোবাসা নামক মরণব্যাধি রোগে যেন কেউ আক্রান্ত না হই। এসব থেকে দূরে থাকি। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

মন্তব্য করুন