খুলনার রেলের শিডিউল ব্যাপক বিপর্যয়, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ৬:২১ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০১৯

শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা: খুলনা-ঢাকা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস। যাত্রার সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিট। ট্রেনটি সিডিউল অনুযায়ী যাত্রার পূর্বেই স্টেশনে প্রবেশ করে। অথচ গতকাল শনিবার (১৫ জুন) রাত ৮টায় খুলনা রেল স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সুন্দরবন এক্সপ্রেস।

রেল কর্মকর্তারা বলেন, ট্রেনটি খুলনায় এসে পৌঁছাবে রাত ৯টা ৩০ মিনিটে। এরপর অন্তত ২ ঘন্টা সময় লাগবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য। সেক্ষেত্রে ট্রেন যাত্রা করার সম্ভাব্য সময় রাত ১১টার পর। একই অবস্থা সীমান্ত এক্সপ্রেসেরও। চিলাহাটির উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে সীমান্ত এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়া কথা রাত ৯টা ১৫ মিনিটে। অথচ খুলনায় প্রবেশ করবে রাত সাড়ে ১০টার পরে। সেটি ছাড়তে ১২টার বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্টেশনের দায়িত্বরত মাস্টার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক।

এদিকে ১০ দিন ঈদ শেষ হলেও থামেনি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। এই শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেল ভ্রমণে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। ঈদের দু’দিন পর থেকেই ফের শিডিউল ভেঙে পড়ে। ট্রেন যাত্রায় যাত্রীদের দুর্ভোগ দিন দিন আরো বাড়ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনা।

যাত্রীদের অভিযোগ ট্রেন দেরিতে আসবে বা কখন ছাড়বে এ বিষয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত মাস্টার বা কর্মকর্তাদের কক্ষ ঘুরেও কোন জবাব মেলে না। ফলে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় প্লাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে। রেল কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ট্রেনসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন দেরিতে আসার কারণে খুলনার থেকেও ট্রেনগুলো ছাড়তেও দেরি হচ্ছে।

গতকাল শনিবার রাত ৮টায় স্টেশনে দেখা যায়, প্লাটফর্মে যাত্রীরা সীমান্ত ও সুন্দরবন এক্সপ্রেসে যাত্রার উদ্দেশ্যে অপেক্ষায় রয়েছে। কেউ বা প্লাটফর্মে বসে আছেন। অনেকেই এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। আবার কেউ কেউ দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষের সামনে এসে ট্রেন এসেছে কিনা জানতে চাইছেন। দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষের প্রবেশমুখেই দেখা যায় যাত্রীদের হট্টগোল। সেখানে যাত্রীরা রেলের কর্মকর্তাদের সাথে বাক-বিতন্ডা করছেন। তারা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সীমান্ত এক্সপ্রেসের সিডিউল বিষয়ে কয়েক দপ্তর ঘুরেও সঠিক জবাব না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শরিফুল ইসলাম নামে ঢাকার এক যাত্রী বলেন, সুন্দরবন ট্রেন যাত্রার সময় ৮টা ৩০ মিনিটে অথচ রাত ৮টা বাজে এখনো খুলনায় আসেনি। ট্রেনটি কখন খুলনায় আসবে বা যাত্রার সময় বিষয়ে জানার জন্য রেলের কর্মকর্তাদের তিনটি কক্ষে ঘুরেও জবাব মেলেনি। ফলে দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টারের সাথে কথা বললে সেখানে থাকা কয়েকজন খারাপ আচরণ করেন। এ জন্য যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

খুলনা রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটীগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। অথচ ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায় সকাল ১০টায়। ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে খুলনা থেকে ছেড়ে যাওয়া কথা থাকলেও ছেড়ে যায় এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট দেরিতে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। পারবর্তীপুরগামী রকেট এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রার কথা থাকলেও দেড় ঘন্টা দেরিতে বেলা ১১টায় যাত্রা করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেন বেলা ১১টা ১০ মিনিটে যাত্রার কথা থাকলেও ৫০ মিনিট দেরিতে দুপুর ১২টায় ছেড়ে যায়। এদিনের বেনাপোলগামী কমিউটার ট্রেনটি দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এক ঘন্টা ২৫ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায় দুপুর ২টায়। গত শুক্রবারও বেশকিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ছিলো।

খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার জানান, ঢাকা, রাজশাহী, চিলাহাটী, বেনাপোলসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন দেরিতে আসার কারণে খুলনার থেকেও ট্রেনগুলো ছাড়তে দেরি হচ্ছে। ট্রেনগুলো স্টেশনে আসার পর ওয়াশফিডে পাঠাতে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কারণে প্রায় এক-দেড় ঘন্টা সময় লেগে যায়। এরপর প্লাটফর্মে আনা হয়। যাত্রী উঠানো শেষে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন