

আবিদুর রহমান
ইমাম, জামিউল জুমাই মসজিদ জেদ্দা, সৌদিআরব
৫ রবিউল আউয়াল বৃহ:বার ১৪৩৯ হিজরী। ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ঈসায়ী। বাদ এশা জেদ্দা থেকে রওয়ানা হলাম মসজিদে নববীর দিকে। গাড়িতে উঠেই দুরুদ পড়তে শুরু করলাম ।
গাড়ি যতো সামনে আগাচ্ছে দুরুদ ততো শুধু পড়ছি আর ভাবছি। আহ! আজ আমি যাচ্ছি গাড়িতে বসে বসে কি আরামে। কি প্রশান্তচিত্তে। কিন্তু দুজাহানের সরদার ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন ‘ শাফিউল মুযনিবীন, আকায়ে নামদার, তাজদারে মদীনা, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন মক্কা থেকে বাহির করে দেয়া হয়েছিলো তখন কতো কষ্ট করে কতো পাহাড়, জংগল অতিক্রম করে যেতে হয়েছিলো।
আরো ভাবছি, হয়তো আমি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি ওই রাস্তা দিয়ে হতে পারে প্রিয় নবীজীর আগমন ঘটেছিলো কোনো এক সময় দাওয়াত দেওয়ার প্রাক্কালে।
আরো কতো কিছু যে ভাবছি, সবকিছু তো বলা যায়না এবং লেখাও যায়না শুধু হৃদয়ে অনুভব করতে হয়। যেতে যেতে পৌঁছুলাম মদীনার শহরে। কি আনন্দঘন মুহুর্ত কে দেখবে আমার অবস্থা! আর কেউ পাশে বসে থাকলেও দেখার কথা নয় সে তো এক অন্য জগতের কথা। রহস্যঘেরা সব অবলোকন।
গাড়ি আমার মদীনার দিকে যতোই এগুৃচ্ছে, আমি নয়নাভিরাম দৃষ্টিতে দেখছি পাহাড় আর পাহাড়। ভাবছি, এইতো ১৪ বা সাড়ে ১৪শত বছর আগেও পাহাড়গুলো দিয়ে অতিক্রম করেছেন আমার পেয়ারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন নিজের সর্বস্ব সমর্পণ করে। উদ্দেশ্য একমাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকা উড্ডীন করা।
আর কোনো লক্ষ নেই। সেই নবীর উত্তরসূরি দাবি করছি আমরা আর আমাদের কার্যকলাপ…? একটি মসজিদের সামনে আমাদের গাড়ি দাঁড়ালো। একটু আগাতেই দেখি মসজিদে কুবা। ইসলামের প্রথম মসজিদ। রাত তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় তিনটা।
নামলাম। নেমে দেখি মসজিদের প্রধান গেইটে লেখা মসজিদে কুবা এবং মসজিদের দেয়ালে লেখা কোরআন মাজীদের এই আয়াত-
(অর্থ-)
অর্থাৎ- যে মসজিদের ভিত্তি করা হয়েছে তাকওয়ার উপর। (সূরা তাওবা: ১০৭)
তখন মনে হয়ে গেলো সেই সাড়ে চৌদ্দশত বছরের পূর্বের এই আয়াত নাযিলের কথা। বিভিন্ন অজুহাতে মুনাফিকরা একটা মসজিদ নির্মাণ করে ইসলাম এবং মুসলমান কে ধ্বংস করার জন্য নীলনকশা অাঁকছিলো।
তাই তারা নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ পড়ানোর মাধ্যমে এই মসজিদ উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নিলো। তাদের কাজে যাতে কোনোরকম ব্যাঘাত না ঘটে, তাই তারা নবীজীকে দাওয়াত দিয়েছিলো মসজিদে নামাজ পড়ে মসজিদটি উদ্বোধন করে দিতে।
ঠিক এইসময় নবীজী এক সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাদেরকে বললেন, ঠিকাছে সফর থেকে ফেরারা পথে আপনাদের সাথে আমার সাক্ষাত হবে। সফর থেকে ফেরার পথে যখন নবীজী ওই মসজিদের কাছাকাছি এসে পড়লেন, তখন (আহকামুল হাকীমীন; তিনি তো জানেন তাদের বক্ষে কি ষড়যন্ত্র ধারণ করছে) এই মসজিদ কে কীসের জন্য তারা নির্মাণ করছে তা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দিলেন।
বললেন, আপনার জন্য উচিৎ! যে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তি তাক্বওয়ার উপর, সেই মসজিদে নামাজ আদায় করা। আর সেই মসজিদে দাঁড়াবেন না, যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে আল্লাহ এবং তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। এবং মুমিনদের মাঝে বিভক্তিকরণের জন্য।
চলবে…
#এনাইকিউ