আমার মেয়েকে নিয়ে নাটক সিনেমা বানিয়ে তাকে দোজখে নেবেন না : নুসরাতের মা

প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৯

ফেনী সোনাগাজী মাদরাসার শিক্ষক অধ্যক্ষ লম্পট সিরাজুল কর্তৃক শ্লীলতাহানীর শিকার হয়ে কঠোর প্রতিবাদ করায় তার লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা নুসরাত জাহানকে নিয়ে কয়েকটি নাটক কোম্পানি ও ফিল্ম প্রডিউসররা সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকাই সিনোর প্রবীণ পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। ‘নুসরাত’ শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নির্মাতা ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি নেয়াও শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।

নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু বলেন, বাংলাদেশে ক্রমশ নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানি বেড়েই চলছে। আর তার ধারবাহিকতায় প্রাণ দিতে হয় নুসরাতের। একজন মানুষ হিসেবে, একজন পরিচালক হিসেবে তার এমন করুণ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে ছবিটি নির্মাণ করব।

কিন্তু তার এই পদক্ষেপের ঘোর বিরোধিতা করেছেন নুসরাত জাহানের ‘মা’সহ তার পরিবার। নুসরাতের মা বলেছেন, আমার মেয়ে মারা গেছেন। শুনতেছি কেউ কেউ নাকি আমার মেয়েকে নিয়ে নাটক ও সিনেমা বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। সিনেমা-নাটক বানিয়ে তাকে দয়া করে দোজখে নেবেন না। তাকে নিয়ে সিনেমা ও নাটক বানালে তার আত্মা কষ্ট পাবে। আমরা আখেরাতে তার কাছে জবাব দিতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, আমরা অর্থের দিক দিয়ে গরীব হতে পারি। কিন্তু ধর্মের দিক দিয়ে আমরা গরিব নই। আমার মেয়েকে প্রথমে নূরানী মাদ্রাসায়, পরে মহিলা মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে দাখিল পাস করার পর সোনাগাজী মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। এই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর সে ওই মাদ্রাসায় আর পড়ত না।

প্রনমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় নুসরাতের মা। সাথে আছেন নুসরাতের বাবা ও দুই ভাই। ছবি : ফোকাস বাংলা

নুসরাতের মা বলেন, নুসরাতের বাপ, দাদা, চাচা ও ভাই সবাই আলেম। দুনিয়াতে কিছু না পেলেও আখিরাতে আমার মেয়ে শহীদি মর্যাদা পাবে।

তিনি বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে অনেকে ওয়াজ ও গজল বানিয়েছেন। আরও বানাতে পারেন। কিন্তু কোনো সিনেমা বা নাটক বানিয়ে আমার মেয়েকে কষ্ট দেবেন না। অনেকে আমার কাছে এসেছেন এমনকি কয়েকজন মেয়েও এসেছে তাকে নিয়ে সিনেমা বানানোর জন্য কিন্তু তাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছি।

প্রসঙ্গত : গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় বোরকা পরা ৪/৫ জন নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে হাত-পা বেঁধে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর ১০ এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফি। যা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয় সারাদেশে। প্রধানমন্ত্রী নিজে তার প্রতি হওয়া অত্যাচারের বিচারের দায়িত্ব নেন এবং তার পরিবার থেকে তার এক ভাইকে ব্যাংকে চাকরি দেন।

ভিডিও দেখুন : 

https://www.facebook.com/1934148316680638/posts/2275911612504305/

মন্তব্য করুন