

এম ওমর ফারুক আজাদ
চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেনস্থ জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া ও জামিয়া আবু বকর আছ-ছিদ্দিক মাদ্রাসা দীর্ঘদিন সন্ত্রাসীদের দখলে থেকে পূণরুদ্ধারকৃত মাদরাসার মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়া ও দখলমুক্ত করতে সহায়তা করায় স্থানীয়দের মুসুল্লিদের উপর হামলা করেছে সন্ত্রাসীরা।
শুক্রবার (১৭মে) দিবাগত রাত ৯টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কফিল এর অনুসারী সুমনের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে জানায় স্থানীয়রা। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে তার মধ্যে একজনের হাতের আঙ্গুল কেটে পড়ে যায়।
অক্সিজেন নজরা পুকুর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ ফোরকান জানান, আজ মাগরিবের আগে স্থানীয় কাউন্সিলর কফিল এর অনুসারী কিছু যুবক এসে যারা ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদরাসা সন্ত্রাসীদের দখলমুক্ত করতে সহায়তা করেছিলো ও শুক্রবার আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর ইমামতিতে জুমু’আর নামাজ পড়তে গিয়েছিলো তাদের নানা ধরনের হুমকি দিতে থাকে। মাগরিবের পর তাদের একজন সুমনকে স্থানীয় মুরুব্বিরা ডেকে গালাগাল ও হুমকির কারণ জানতে চাইলে সে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় একজন সাক্ষি দিলে তার উপর হামলে পড়ে সুমন। পরে আমি মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে সুমনের নেতৃত্বে রিপন, এরশাদসহ একদল সন্ত্রাসী দা কিরিচ নিয়ে আমার উপর হামলা করে। আমি বাঁচার জন্য দৌড়ে মসজিদে (গুন্না মিয়া জামে মসজিদ) আশ্রয় নিলে তারা আমিসহ মসজিদে থাকা মুসল্লিদের উপর হামলা করে। এসময় তারা ইমাম সাহেবের রুম ভেঙ্গে ফেলে।
ফোরকান আরও জানান, সন্ত্রাসীদের হামলায় আব্দুর রহিম, আব্দুস সালাম, বাদশা ড্রাইভারসহ অন্তত ১০জন আহত হয়। এছাড়াও সন্ত্রাসীদের দা’র কোপে বাদশা ড্রাইভারের ছেলের হাতের আংগুল পড়ে যায়।
এদিকে আহতদের চিকিতসা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে এলাকার কয়েকজন।
এ ব্যাপারে বায়োজিদ বোস্তামি থানার ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত এখনো জানি না। তবে শুনলাম মসজিদের ইমাম সাহেবকে গালি দেয়াকে কেন্দ্র করে সুমন ও রিপন নামের কিছু যুবক মুসল্লীদের উপর হামলা করে। তবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
আরও পড়ুন : দখলমুক্ত সেই মাদরাসা মসজিদে জুমার নামাজ পড়ালেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী
প্রসঙ্গত : উক্ত মাদরাসাটি সম্পর্কে স্থানীয় একজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৮-১০ বছর পূর্বে এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন কাতার প্রবাসী আলহাজ্ব ওমর ফারুক সওদাগর। তাঁর অর্থায়নে ও কিছু দান-সদকা নিয়েই চলত মাদ্রাসাটি। বালক শাখার পাশাপাশি মাদরাসাটির বালিকা শাখাও দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত চালু রয়েছে। গত ১০ মার্চ খতমে বোখারীর আখেরী দরস প্রদান করেন শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
৬ তলা বিশিষ্ট শিক্ষাভবন, ৪ তলা সুবিশাল মসজিদ সহ মহিলা বিভাগের আলাদা ক্লাসরুম ও সুন্দর পরিবেশ নিয়ে নিয়ে এ মাদরাসা। মাদরাসাটি সুনামের সাথে পরিচালিত হয় কওমী মাদরাসার শিক্ষা সিলেবাস অনুযায়ী। তবে কওমী মাদরাসাবিরোধী একটি মহল মাদরাসাটিকে নিয়ে বিভিন্নমূখী ষড়যন্ত্র শুরু করে।
মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া, মাইকে ওয়াজ নছিহত না করা, এমনকি মাইকে আযান না দেওয়ার হুমকি সহ মাদ্রাসা শিক্ষক- ছাত্রের উপর হামলা করার ঘটনাও হয়েছে অনেকবার। নাম প্রকাশ না করার সূত্রে এমন অভিযোগ করেছেন এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তি।
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, বিগত ক’য়েক বছর আগে মাদ্রাসাটির উপদেষ্টার দায়িত্বরত চট্টগ্রাম পটিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হাফেজ যাকারিয়া আল আযহারি’কে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো।
এরপর গত ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে মাদ্রাসার একটি ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা আইনি তদন্তের আগেই মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রের উপরর পরেরদিন (১১ এপ্রিল) সকালে অতর্কিতভাবে হামলা করে বসে এলাকার কমিশনারের মদদপুষ্ট কিছু সন্ত্রাসীরা। যে হামলায় ১৫-১৬ জন শিক্ষক-ছাত্র গুরুতর আহত হয়। এবং সেদিন ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২টার মধ্যেই সকলকে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যায় তারা।
জানের নিরাপত্তার শিক্ষকরা পুলিশ থাকাকালীন সময়ে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর ছাত্রদের অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যায়। ফলে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরিক্ষা দেওওয়া হয়নি। এমনকি সরকারী কওমী স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়াতুল উলইয়ার অংশগ্রহন করা শিক্ষার্থীরাও তাদের পরীক্ষা দিতে পারেনি।
এদিকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিতে থানায় মাদ্রাসার ক’য়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করতে গেলে হত্যা মামলার আসামী বলে তাৎক্ষণিকভাব পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
গোপনসূত্রে জানা যায়, কমিশনার কফিল উদ্দীন খান মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ওমর ফারুক সওদাগরে কাছে এককোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। তা না হলে মাদ্রাসা করতে দিবে না এবং মাদ্রাসার দখল থেকে ছাড়বে না বলেও হুমকি দেয় তখন।
এরপরই বিষয়টি নিয়ে সামনে আসে অরাজনৈতিক সংগঠন “হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ”। হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা বাবুনগরী ও চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলামসহ আরও নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গত ১৫ মে বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ মাদরাসার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এখন সেখান থেকে নির্দিষ্ট চারটি দাবিসহ সবকিছুর সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে আল্টিমেটাম দেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর আল্টিমেটামের পর ২৪ ঘন্টা না যেতেই অবৈধ দখলমুক্ত হয়েছে চট্রগ্রামে অক্সিজেনের ওমর ফারুক আল জামিয়া মাদরাসাটি। উগ্রপন্থী মাজারপূজারী চাঁদাবাজদের দখল থেকে প্রশাসনের উপস্থিতিতে ওমর ফারুক আল জামিয়া মাদরাসা ওলামায়ে কেরামের হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর মাদরাসার মসজিদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী জুমার নামাজ পড়ান। এলাকাবাসী অনেকের সাথে কথা বলে দেখা গেছে তারাও আলহামদুলিল্লাহ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কিন্তু পরবর্তিতে শুক্রবার রাতেই আবার সন্ত্রাসীরা মুসুল্লিদের ওপর হামলা করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও সন্ত্রাসীরা মুসুল্লিদের যেখানে পাচ্ছে সেখানেই অপদস্থ করছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামীয়া মাদরাসা নিয়ে হেফাজতের সংবাদ সম্মেলন