
বরিশালের বোরহান উদ্দিন উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ‘ব্লাড ডোনার’ নাঈম শরীফ নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত বারোটার দিকে বিদ্যুতের খুঁটির ঘোড়ায় লাইন ঠিক করতে গিয়ে এদুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নাঈম শরীফ বোরহান উদ্দিন উপজেলার বিশিষ্ট বক্তা মাওলানা আব্দুল হাই শরিফ সাহেবের ছয় ছেলের মধ্যে তিনি তৃতীয়। হাস্যজ্জল চেহারা, ছোট হোক বড় হোক সকলের বিপদে পাসে দাঁড়াতো যুবকটি। অন্যের বিপদ থেকে মুক্ত করতে বন্ধুদের কাছে ছোট হওয়াই স্বভাবগত অভ্যাস ছিল ‘ব্লাড ডোনার’ নাঈম শরীফের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত বারোটায় বাসার বিদ্যুতের লাইনে সমস্যা দেখা দিলে নাঈম শরীফ ও ভাই আতিক মিলে বাঁশ নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির ঘোড়ায় লাইন ঠিক করতে যায়। এসময় বাঁশটি ভিজা থাকার কারণে নাঈম বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে মারাত্মক জখম অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আর নেই! কে দিবে জোগাড় করে অসুস্থ রোগীদের রক্ত? বিদ্যুতের নির্মম থাবায় কেড়ে নিল তার তাজা প্রাণটি। তিনি চলে গেলেন ২৫ বছর বয়সে তার কৃতকর্ম রেখে না ফেরার দেশে।
তার রক্ত এখনো চলমান! কিন্তু নিজ দেহে নয় এক প্রসূতি মায়ের দেহে। মর্মান্তিক ঘটনার দিন রোজা রেখে ক্লান্তির কাছে হার না মেনে অসুস্থ রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্য চলে গেলেন ভোলা সদর হাসপাতালে।
স্থানীয়রা জানান, নাঈম শরীফ মর্মান্তিক ঘটনায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে এটা কারো বিশ্বাস হচ্ছে না। তিনি যেন এখনো হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় আমাদের সামনে দাঁড়ানো। অসুস্থ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা রক্ত শূন্য মানুষকে রক্ত দেওয়াই ছিল তার একমাত্র নেশা।
নাঈম শরীফের বন্ধু রাজিব হাসান জানান, মাত্র ২৫ বছর বয়স। কিন্তু তার কর্ম যেন শত বছরের। প্রতিনিয়ত তার কাছে অসুস্থ রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে কল আসতো। কখনো তিনি হার মানেননি, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে যার কাছে রক্ত পাওয়া যেত তাকে নানাভাবে রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে আসতেন। এ পর্যন্ত আমিও কয়েকবার তার মাধ্যমে রক্ত দিয়েছি।
তার বন্ধু সাখাওয়াত জানান, আমাদের বন্ধুদের কার রক্তের গ্রুপ কি তার কাছে পাওয়া যেত। একদিন আমাকেও বাসা থেকে এক অসুস্থ রোগীর জন্য নিজ গাড়ি ড্রাইভিং করে রক্ত দেওয়ার জন্য নিয়ে আসেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।
তার মর্মান্তিক ঘটনা বড় ভাই আতিক জানান, রাত ১২ টায় বাসার কারেন্ট লাইন সমস্যা দেখা দিলে বাঁশ নিয়ে বাড়ির পাশের কারেন্টের খুটি কাছে যাই। বাঁশ ভেজা থাকায় বিদ্যুৎ লাইনের সাথে তার শরীর জড়িয়ে পড়ে মর্মান্তিক জখম হয়। এরপর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে মৃত ঘোষণা করে।
নাঈম শরীফ অকাল মৃত্যুতে নিজ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রী ও ছোট পুত্র সন্তান ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে যান।
জিআরএস/পাবলিক ভয়েস

