বিএনপি ছেড়ে দেওয়ায় পার্থকে ধন্যবাদ দিলো মুফতী আমিনী রহ. প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট

প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০১৯

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দেওয়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোট।

মঙ্গলবার (৭ মে) এক বিবৃতিতে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও খেলাফতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বিজেপি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেরিতে হলেও তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মতো একজন ব্যক্তি বিশ দলীয় জোটে থাকা উচিত না।

বিবৃতিতে মুফতী আমিনীর ছেলে আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, শরিকদের প্রতি বিএনপির অবজ্ঞা, অবহেলা ও অবমূল্যায়নের কারণে ২০১৬ সালে ২০ দল ছেড়েছিল ইসলামী ঐক্যজোট। পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)-সহ বেশ কয়েকটি দল বিএনপি জোট ছাড়ে। বিএনপির অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়া, ২০ দলীয় জোটের নিষ্ক্রিয়তা ও শরিকদের অবমূল্যায়নের অভিযোগে বিজেপি চেয়ারম্যান ২০ দল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিবৃতিতে হাসানাত আমিনী আরও বলেন, বিএনপি জোট ছাড়ার মাধ্যমে বিজেপির পথচলা আরও মসৃণ হবে।
ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বিবৃতিতে আরও বলেন, ২০ দলকে স্থবির রেখে বিএনপির ড. কামাল ও ঐক্যফ্রন্টপ্রীতি জনগণ ভালো চোখে দেখছে না।

প্রসঙ্গত : বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ ভালো আলোচনা সৃষ্টি করতে পারা মরহুম মুফতী আমিনী রহ. এর হাত ধরে ইসলামী ঐক্যজোটের রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়।নানা ঘটনা অঘটনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে ছিলো এবং কড়া আওয়ামী বিদ্ধেষী দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো। কিন্তু ২০১৬ সালে তারা ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ত্যাগ করে এবং প্রেসক্লাবে টাকা পাচারকারী ও মানি লন্ডারিংয়ে জড়িতদের বিচার দাবি করে। তখন বাংলাদেশে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার মানি লন্ডারিং নিয়ে আলোচনা চলছিলো। এ ছাড়াও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনীকে আ. লতিফ নেজামীসহ অনেকের সাথে মিলে গণভবনে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে হাস্যরত অবস্থায় দেখা গেছে। যে ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হয়েছে।

এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ। এর মধ্যদিয়ে বিএনপির সাথে বিজেপির দীর্ঘ ২০ বছরের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেল।
গত সোমবার রাতে আন্দালিভ রহমান পার্থ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোট ছাড়ার ঘোষণা আসে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০ দল ছাড়ার কারণগুলোও উল্লেখ করেছেন পার্থ।

এতে বলা হয়, বিজেপি ১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট এবং পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমশই স্থবির হয়ে পড়ে। বিরোধীদলীয় রাজনীতি অতিমাত্রায় ঐক্যফ্রন্টমুখী হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে সংলাপসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ২০ দলীয় জোটের বিএনপি ছাড়া অন্য কোনও দলের সম্পৃক্ততা ছিল না।

আরো বলা হয়, কেবল মাত্র সংহতি এবং সহমত পোষণের জন্য ২০ দলীয় জোটের সভা ডাকা হতো। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের সবার সম্মতিক্রমে এই নির্বাচন প্রত্যাখান করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুজন এবং বিএনপির সম্মতিতে চারজন সংসদ সদস্য শপথ নেয়ায় দেশবাসীর মতো বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিও অবাক এবং হতবাক। শপথ নেয়ার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিএনপি ছাড়া ২০ দলের অন্য কোনও দলের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে আন্দালিভ রহমান পার্থ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি মনে করে, এই শপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ৩০ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। যে কারণে ২০ দলীয় জোটের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিজেপি ২০ দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বেরিয়ে আসছে।

২০ দল ছাড়া প্রসঙ্গে মঙ্গলবার রাতে পার্থ গণমাধ্যমকে বলেন, নিজেদের সম্মান বিকিয়ে দিয়ে অন্যদের সঙ্গে জোট করার মনমানসিকতা আমার নেই। একই অভিমত বিএনপি ছাড়া ২০ দলীয় জোটের অপর শরিক দলগুলোরও। এখন বিজেপি তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্য দলগুলো এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় তা তাদের বিষয়।

২০০০ সাল থেকে আন্দালিব রহমান পার্থ তার বাবা নাজিউর রহমান মঞ্জুর সাথে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। মূল দল জাতীয় পার্টি থেকে বিভক্ত হয়ে ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) গঠন করেন মঞ্জু এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ হয়ে নির্বাচনে যান। ২০০৪ সালের এপ্রিলে বাবার মৃত্যুর পর বিজেপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পার্থ। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে পরাজিত করে বিজয়ী হন পার্থ।

মন্তব্য করুন