

সকালে ময়লার ভাগাড় অপসারণের প্রচেষ্টা বিকেলে নিজে উপস্থিত থেকে কাঠের পুল নির্মান। এই হলো ব্যারিষ্টার সুমনের একদিনের ছুটিতে ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার পর দিনের রুটিন।
নিজ খরচে আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) তিনি নিজে উপস্থিত থেকে ২৪ তম কাঠের ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করেছেন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার ৯ নং ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওয়ার্ড মেম্বারকে উপস্থিত রেখে তিনি নিজেই কাজের তদারকি করছেন।
ব্যারিষ্টার সুমন গ্রামের সহজ সরল মানুষের জন্য একের পর এক কাজ করে যাচ্ছেন এবং তা সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষকে উৎসাহ দিতে প্রকাশ করছেন। সাথে সাথে যার যার সাধ্যমতো মানুষের উপকার করার প্রতি তিনি উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে লাইভ ভিডিওতে এসেছেন এবং তার কাজের বর্ণনা দিচ্ছেন। “নিজের প্রশান্তির জন্য এসব কাজ করেন” উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, “আমি একদিনের ছুটিতে ঢাকা থেকে সিলেট এসেছি এবং আমার করা ২৪ তম কাঠের ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করছি”। এখানের কাজ শেষ করেই আমি ঢাকায় চলে যাবো রবিবার অফিস করার জন্য।
ভিডিওতে দেখা যায় ; এলাকার মেম্বার বলছেন, এ ব্রিজ কয়েকশ নারী পুরুষ ও শিশুদের চলাচলের পথ সহজ করবে। এর আগে সেখানের খালের পানি পার করে লোকজনের যাতায়াত করতে হতো। তিনি ব্যারিষ্টার সুমনকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “সবাই যদি এভাবে নিজ নিজ এলাকার কথা ভাবেন তবে বাংলাদেশ একটি সুন্দর দেশে পরিণত হবে।
ব্যারিষ্টার সুমন এর আগে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় জলাধার এবং খালে প্রায় ২৩টি কাঠের ব্রিজ নির্মান করেছেন। বেশিরভাগ স্থানেই তিনি নিজে কাঁদাপানিতে নেমে পুলগুলো নির্মান করেছেন।
ব্যারিষ্টার সুমনের নির্মিত কিছু ব্রিজের বিবরণ : ছবির সাথে সাথে বিবরণ দেওয়া হলো। তথ্য : সংগ্রহিত।
ব্যারিষ্টার সুমন নির্মিত ব্রিজ
বিবরন : এ ব্রিজটি চুনারুঘাট উপজেলাধীন দেওরগাছ ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন ৩ নং ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে। চন্দিচড়া চা বাগান সংলগ্ন রামগঙ্গা নামক স্থানে এই কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। ছোটখাটো পাহাড় বেষ্টিত এ অঞ্চলে প্রচুর চা বাগান রয়েছে। চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক এবং কর্মকর্তাবৃন্দ ৩ নং ওয়ার্ডে বসবাস করে। এ ব্রিজটি নির্মাণের পূর্বে উক্ত স্থানে একটি সাঁকো পর্যন্ত ছিল না। তাই, ৩ নং ওয়ার্ডে বসবাসরত প্রায় ৫০০০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করতো । উক্ত স্থান পারাপারের সুযোগ না থাকায় তাঁরা প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তাঁদের গ্রামে যেতে হতো। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের নিকটবর্তী হওয়ায় এ এলাকাটিতে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় । দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই পাহাড়সংলগ্ন সবুজে ঘেরা রামগঙ্গা গ্রামটি দর্শন করতে চায় । তবে,উক্ত স্থান পারাপারের সুযোগ না থাকায় তাঁরা এ গ্রামে যেতে পারতো না । উক্ত স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে ৩ নং ওয়ার্ডের জনসাধারণ সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার গেলেও কোন সমাধান মেলেনি। এলাকার মানুষের দুর্দশার কথা চিন্তা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত স্থানে দৃষ্টিনন্দন একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেন। উক্ত স্থানে এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণের ফলে উক্ত এলাকার মানুষ তাঁদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি লাভ করে । জনসাধারণের পাশাপাশি উক্ত এলাকার স্কুলগামী বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা এখন অতি অল্পসময়ে তাঁদের বিদ্যালয়ে যেতে পারে ।
ব্যারিষ্টার সুমন নির্মিত ব্রিজ
বিবরণ : এ ব্রিজটি চুনারুঘাট উপজেলার উজ্জ্বলপুর ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত স্থানে এ ব্রিজটি নির্মাণের পূর্বে উক্ত গ্রামের প্রায় ১২০০০ গ্রামবাসীর প্রতিদিন অনেক সমস্যা হতো যার ফলে সকল গ্রামবাসী একত্রে মিলিত হয়ে একটি মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছিল। উক্ত স্থানে ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করলেও সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয় এলাকার হতদরিদ্র গ্রামবাসী।এই দৈন্যদশা দেখে সমাজে থাকা সমাজপতিদের প্রতি চাপা ক্ষোভে যখন তাঁরা আচ্ছন্ন থাকতো উক্ত এলাকার যুবসমাজ। উজ্জ্বলপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষজন এ স্থান দিয়ে পারাপার হতে বেশ দুর্ভোগের শিকার হতো। উক্ত স্থান দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেত শ খানেক ছাত্রছাত্রী । কিন্তু নদী পারাপারের জন্য না ছিল কোন ব্রিজ না ছিল কোন সাঁকো । ফলে তাঁরা বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলত । এলাকার মানুষের দুর্ভোগ যখন চরম পর্যায়ে তখন তাঁরা ব্যারিস্টার সুমন সাহেবের দ্বারস্থ হয় । এলাকার মানুষের চরম দুঃখদুর্দশার বর্ণনা শুনে ব্যারিস্টার সুমন তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে উক্ত স্থানে এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করেন। উক্ত স্থানে এ ব্রিজটি নির্মাণের পর থেকে জনজীবনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে ।
ব্যারিষ্টার সুমন নির্মিত ব্রিজ
বিবরণ : ছবিতে প্রদর্শিত কাঠের ব্রিজটি ৯নং রানীগাও ইউপি এর আওতাধীন কালিকাপুর গ্রাম সংলগ্ন করাঙ্গি নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে । উক্ত স্থানে ব্রিজটি না থাকায় কালিকাপুর গ্রামের প্রায় পাঁচশত শিক্ষার্থী প্রতিদিন প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। তাঁরা করাঙ্গি নদী পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেত। কিন্তু নদী পারাপারের জন্য না ছিল কোন ব্রিজ না ছিল কোন সাঁকো । তাই, বিদ্যালয় যেতে তাঁদের প্রতিদিন বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো । ব্রিজ কিংবা সাঁকোবিহীন এ নদী পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই তাঁদের বইখাতা পানিতে ভিজে যেতো । এ ভেজা অবস্থায় নিয়মিত ক্লাস করতে যেতো চুনারুঘাট কালিকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ।এতো বাধাবিপত্তি থাকা সত্ত্বেও ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্নে বিভোর এই অর্ধশত শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে তাঁদের জন্মভূমির প্রতি অভিমান জমিয়ে রাখতো। প্রতিনিয়ত নিজ এলাকার এই দৈন্যদশা দেখে তাঁদের সমাজে থাকা সমাজপতিদের প্রতি চাপা ক্ষোভ কাজ করতো। এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে সবসময়ই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না তাঁদের । নিজ এলাকার এই দৈন্যদশা দেখে সমাজে থাকা সমাজপতিদের প্রতি চাপা ক্ষোভে যখন তাঁরা আচ্ছন্ন থাকতো ঠিক তখনই বাংলাদেশের রাজনীতির বিস্ময় বালক খ্যাত ‘ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন’ তাঁর স্বেচ্ছাশ্রম এবং নিজ অর্থায়নে কালিকাপুর গ্রাম সংলগ্ন করাঙ্গি নদীর উপর এই কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন । উক্ত স্থানে এ ব্রিজটি নির্মাণের ফলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উপকৃত হয়েছেন উক্ত এলাকার অতি সাধারণ কৃষকসমাজ ।

ব্যারিষ্টার সুমন নির্মিত ব্রিজ
বিবরণ : ব্রিজটি ৪নং ইউপির উজ্জ্বলপুরে নির্মাণ করা হয়েছে। উক্ত স্থানে এই কাঠের ব্রিজটি নির্মাণের ফলে একসাথে চারটি গ্রামের মধ্যে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়েছে। উক্ত স্থান পারাপারের জন্য কোন সুযোগ না থাকায় উজ্জ্বলপুরবাসী প্রায় তিন কিলোমিটার পথ বেশি হাঁটা লাগতো। তবে,এই ব্রিজটি নির্মাণের ফলে মানুষজন মাত্র ১০ মিনিটে তাঁদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারে যেখানে আগে সময় লাগতো কমপক্ষে এক ঘণ্টা। যেহেতু উক্ত ব্রিজের মাধ্যমে চারটি গ্রামের মানুষের সংযোগ হয়েছে সেহেতু প্রতিদিনই উক্ত স্থানটি লোকে লোকারণ্য হয়ে থাকে। ব্যারিস্টার সুমনের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচক্ষণতার ফলেই এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। কৃষকরা এখন অতি অল্প সময়ে তাঁদের প্রয়োজনীয় কৃষিসামগ্রী আনয়ন করতে পারে। ব্রিজটি করার ফলে মানুষজন এখন অটোরিক্সা চালাতে পারে । ফলে, এলাকাবাসী অটোরিক্সার মাধ্যমেও তাঁদের গন্তব্যে যেতে পারে যা পূর্বে কল্পনারও বাইরে ছিল। ব্যারিস্টার সুমন যখন উক্ত স্থানটি পরিদর্শন করেন তখনই তিনি এই ব্রিজটি নির্মাণের সুপ্রয়াস হাতে নেন । ব্রিজটি নির্মাণের ফলে এলাকাবাসী স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থানীয় বাজারে যাতায়াত করতে পারে। এতে এলাকাবাসী অর্থনৈতিকভাবেও অনেক লাভবান হয়েছেন । এ গ্রামে দুটি বিদ্যালয় এবং কয়েকটি মাদ্রাসা আছে । ব্রিজটি নির্মাণের ফলের শিক্ষার্থীরাও তাঁদের স্কুল কিংবা বিদ্যালয়ে কম পরিশ্রমে যেতে পারে ।
ব্যারিষ্টার সুমন নির্মিত ব্রিজ
বিবরণ : উপরোক্ত ব্রিজটি ৫নং শানখলা ইউপি এর চিনাই বিল নামক স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ব্রিজটির খুবই কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত ‘লালচান্দ বাগান’ । উক্ত এলাকায় প্রায় ১০০০০ লোকের বসবাস রয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত । বর্ষা মৌসুমে উক্ত স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় । শুষ্ক মৌসুমেও অল্প বৃষ্টিতেও এ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় । বিশেষ করে, এখন যে স্থানে কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখানেই মানুষের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হতো। যেহেতু,উক্ত স্থানে একটি খাল রয়েছে সেহেতু মানুষজন অনেক কষ্ট করে রাস্তাটি পারাপার করতো । স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো । উক্ত স্থানে ব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থীদের জামাকাপড় এবং শিক্ষাসামগ্রী পানিতে ভিজে যেতো।এসব সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো বলেই অভিভাবকগণ তাঁদের বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করতো না। ফলে,অকালেই অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতো। কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজনীয় কৃষিসামগ্রী সময়মতো নিয়ে যেতে পারতো না।ফলে,কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে । এলাকার জনসাধারণের গণদাবির প্রতি আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে উক্ত স্থানে ব্যারিস্টার সুমন তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করে দেন । এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন উক্ত এলাকার সর্বস্তরের আপামর জনসাধারণ ।
এছাড়াও সারাদেশে ঘুরে ঘুরে তিনি বিভিন্ন অসঙ্গতিগুলো চোখের সামনে নিয়ে আসছেন সবার। বেশ কিছু সমস্যারও সমাধান করিয়েছেন তিনি। পুরান ঢাকায় এক ময়লার ভাগাড় নিয়ে লাইভ করে সেটিকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। যেন এ সকল অসঙ্গতি ব্যারিষ্টার সুমনের চোখেই পড়ছে। দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী যিনি কি না বসে থাকার কথা কোনো এসি রুমে বা আদালতপাড়ায় সেই তিনি যেখানেই কোনো অসঙ্গতি দেখেন সেখানেই নিজ থেকেই এর ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ছুটে যান। তার এইসব কাজ যুব সমাজকে প্রচুরভাবে উদ্বুদ্ধ করছে সামাজিক কাজকর্মসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতে। নিজ উদ্যোগে তারা অনেকেই এখন এসব কাজ করছেন সারাদেশে।
আরও পড়ুন : শ্রীমঙ্গলে রাস্তায় ময়লার স্তুপ; ব্যারিষ্টার সুমনের চোখেই পড়ে এসব অসঙ্গতি
©এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস