

এহসান সিরাজ
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান রহ. তখন জীবিত। ‘জীবন্তিকা’ প্রথম সংখ্যা মাওলানা মুহিউদ্দিন খান কে নিয়ে করবো। সেই কাজে গেলাম সিলেটে। উঠলাম স্থানীয় এক হোটেলে। লেখার জন্য গেলাম বিভিন্ন মাদরাসায় নানা জনের কাছে। হজরত খান সাহেবের নাম শুনে অনেকেই উচ্ছ্বসিত হলেন, আদর আপ্যায়ন করলেন। কেউ কেউ আবার তিরস্কার করে দূরেও সড়িয়ে দিলেন! ওই সফরের অনেক স্মৃতি, সে প্রসঙ্গ থাক।
তখনই গিয়েছিলাম সুবহানিঘাটস্থ জামিয়া মাহমুদিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায়। দেখা করলাম জামিয়ার প্রিন্সিপাল, শায়েখ মাওলানা শফিকুল হক আমকুনী সাহেবের সঙ্গে। হজরত আমাকে আগমনের উদ্দেশ্য ও কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর জানতে চাইলেন, কবে এসেছেন সিলেটে? বললাম, দুই দিন হলো। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় উঠেছেন? বললাম, হোটেলে। হুজুর আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘ইন্নালিল্লাহ! আপনি একজন আলেম মানুষ, এসেছেন মাসিক মদীনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেবকে নিয়ে কাজ করতে, হোটেলে উঠেছেন? আপনি আলেম হয়ে আমাদের সবাইকে ছোট করলেন। এটাতো কিছুতেই মানা যায় না!’
আমি থ হয়ে হজরতের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আরও বললেন, ‘মাওলানা মুহিউদ্দিন খান জাতির অনেক বড় সম্পদ। তার কদর আমরা করতে পারিনি পরবোও না। আপনাদের কিছু খেদমত করার সুযোগতো দেবেন! এখনই হোটেল ছেড়ে আমাদের মাদরাসার মেহমানখানায় উঠুন। জীবনে যতো বার সিলেটে আসবেন সুবহানিঘাট মাদরাসার মেহমানখানা আপনার জন্য উন্মুক্ত!’ সেদিন ছিল আমার সিলেটের শেষ দিন। তাই হোটেল ছেড়ে আর মাদরাসায় ওঠা হয়নি। রাতেই ঢাকা ফিরেছিলাম। জমিয়তের এক সময়ের তুখড় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ওই দিন বলেছিলেন রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার কারণ। এরপর থেকে যখনই সিলেট যাওয়ার কথা ভাবতাম হুজুরের চেহারাই আমার চোখে প্রথম ভেসে উঠতো!
দীর্ঘদিন পর গত নভেম্বরে ‘জীবন্তিকা’ আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা. বা. সংখ্যার কাজে গিয়েছিলাম সিলেটে। থাকার জন্য সুবহানিঘাট আর যাওয়া হয়নি। প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান রহ. ভাস্তে মাওলানা ফাহাদ আমানের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় কাজিরবাজার মাদরাসায় থেকেছি। তবে আমকুনী হজরতের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সুবহানিঘাট মাদরাসায়। শরীরটা ভাল ছিলো না। তাই একটু আগেভাগেই বাসায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। দেখা হয়নি হুজুরের সঙ্গে। তবে দেখা হয়েছে হজরতের দুই ছেলে মাও. হাফিয আহমদ কবির ও মাও. হাফিয আহমদ সগির-এর সঙ্গে। তারাও বাবার মতো আপন করে নিয়েছিলেন আমাকে। সেই অসুস্থতা নিয়ে কিছুদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হুজুর। ফোনে খবর নিয়েছিলাম একদিন। ইচ্ছে ছিলো হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে যাবো। আর যাওয়া হয়নি।
গতকাল সকালে নিউইয়র্ক দারুল উলুম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি ইয়ামিন সাহেব ফোন করে লম্বা সময় কথা বলেছিলেন। সেই কথার মধ্যে বাংলাদেশের আলেম-উলামাদের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা তুলেছিলেন। বরেণ্য জনের মধ্যে সুবহানিঘাট এর শায়েখ আমকুনী সাহেবের কথাও এসেছিলো! মুফতি ইয়ামিন সাহেবকে বলেছিলাম, হুজুর অসুস্থ, দোয়া করবেন। দশ ঘণ্টা পর নিউইয়র্ক থেকে মুফতি ইয়ামিন সাহেবই ফোন করে বললেন, মাওলানা! আমকুনী সাহেবের কথা বলেছিলাম আমরা। তিনি এখন আর আমাদের মাঝে আর নেই! মুহুর্তের মধ্যে মনে হলো, আমাদের আকাবিরের তসবির ছড়াটা যেনো সিলেট থেকেই ছিড়ে গেলো! প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান সাহেবের পর চলে গেলেন দরগাহ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া সাহেব। সেই তসবিহ দানারই একটি রত্ন শায়েখ মাওলানা শফিকুল হক আমকুনীও আর নেই! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজিউন।