কাতারে ড. জসিম নাদভীর ‘জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৯

কাতারে অবস্থান করা বাংলাদেশী ওলামায়ে কেরামের আহবানে প্রবাসীদের নিয়ে গত ১২ এপ্রিল, শুক্রবার, দাপনা গার্ডেনের পার্শস্থ মাসজিদ আবিদ দারদা’তে জামেয়া দারুল মা’আরিফের সহকারী পরিচালক, রাবিতা আদাবুল ইসলামী বাংলাদেশ ব্যুরোর সেক্রেটারী, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও আরবী সাহিত্যিক মাওলানা ড. জসিম উদ্দীন নাদভীর মৃত্যূতে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

মাও: জমির বিন মাহমুদের সঞ্চালনায় উক্ত মাহফিলে সভাপতিত্ব ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ওজারাতুল আওক্বাফ কাতারের ঈমাম ও খতিব, মাজলিসে দাওয়াতুল হকের আমীর মাও: ওবাইদুল্লাহ।

এতে কাতারের বাংলাদেশ কমিউনিটির ওলামা ও সর্বস্থরের মানুষ উপস্থিত হন এবং মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা করেন।

বক্তাগণ বলেন, জাতির একজন আলেম রাহবার হিসেবে যখন ড. জসিম নাদভী নিজেকে মেলে ধরার জন্য প্রস্তুত করে এনেছেন, তখনই তিনি মহান আল্লার ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি দিলেন।

আলোচনায় অংশ নেন ইসলামীক ইন্সূ্রেন্স কাতারের শরীয়াহ সুপারভাইজ মরহুমের ঘনিষ্ট বন্ধু মাওলানা শফিউল হক। তিনি বলেন, মৃদুভাষী অমায়িক আখলাকের অধিকারী মরহুম ড. জসিম নাদভীর মত আলেমকে হারিয়ে জাতি সম্ভাবনাময় একজন ধর্মীয় রাহবার হারাল।

আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ সেন্টার (ফানার) এর গবেষক মাওলানা ক্বামার বলেন, তিনি ছিলেন, জ্ঞান সাধনায় নব প্রজন্মের মাইল ফলক। ওজারাতুল আওক্বাফের ঈমাম ও খতিব মাও: আব্দুল হালিম বলেন, গতানুগতিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে মরহুমের অসমাপ্ত কর্মগুলোর উপর বাস্তবতার আলোকে গুরুত্ব দেয়া দরকার এবং একান্ত সময়ে তাঁর জন্য দোয়া করা দরকার।

মরহুমের শ্যালক মাওলানা এমদাদুল্লাহ বিন যাওক আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, তিনি জামেয়া দারুল মা’য়ারিফের অভিভাবক ছিলেন তা শুধু নয়, আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সময়ে উপযুক্ত অভিভাবক হারিয়েছি। বক্তব্য রাখেন, বি’ছাতুল হাজ্জ, কাতার এর কর্মকর্তা আওকাফের ঈমাম মাও: আহসান উল্লাহ।

প্রধান আলোচক, কাতার ইউনিভার্সিটির গভেষক, মরহুমের ঘনিষ্ট ছাত্র হোসাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, মরহুম ওস্তাদ জসিম নাদভীর আলোচনা পূর্ণাঙ্গ করার জন্য আমাদেরকে শায়খ হযরত মাওলানা সোলতান যাওক নাদভীর (হাফিজাহুল্লাহ) আলোচনায় যেতে হবে। আজকের মরহুম জসিম নাদভী হলেন আল্লামা সুলতান যওক নাদভীর হাতেগড়া সম্পদ। তাঁর তত্বাবধানে থেকে তিনি নিজেকে আজকের পর্যায়ে এনেছেন। এক পর্যায়ে তিনি তার মেয়েও বিয়ে করেছেন।

এতটুকু শুধু নয়, শায়খ যাওক নাদভীর ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান জামেয়া দারুল মা’রিফের হাল ধরেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে সুলতান যওক নদভীর যত স্বপ্ন, তিনি মনে প্রাণে সেগুলো বাস্তবায়ন করাকে নিজের কর্তব্য মনে করতেন। তিনি ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্ত হতেন না; ব্যবস্থাও করতেন। যার ফলস্বরূপ কাতার মা’হাদ হয়ে অনেকের কাতার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হয়েছে।
তাঁর আশা ছিল আন্তর্জাতিক মানের একটি লাইব্রেরি করবেন। তিনি জামেয়াতে তা করেছেন। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে তাঁর আকাশ সমান স্বপ্ন ছিল। ওস্তাদ জসিম নাদভী (র) স্বপ্ন দেখতেন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দিতেন আর এখানেই তিনি ব্যতিক্রম এবং আমাদের মাঝে আজকে আলোচ্য।

সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বন্ধুবর মাওলানা জসিম নাদভীর ইন্তিকালের সংবাদ শুনে দু’রাকাত নামাজ পড়লাম এবং আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম; বাইতুল্লাহর পাশে যেন মৃত্যূ নসিব করেন। তার মৃত্যূটি একটি ঈর্ষণীয় মৃত্যূ। ওমরা করলেন। অসুস্থ হলেন। নিজে কালিমা পড়তেছিলেন এবং তার পরিবারের সবাইবে বলতেছিলেন কালিমা পড়ার জন্য। পবিত্র হারামে জানাযা পেলেন। মাকবারায়ে মুয়াল্লায় দাফন হলেন। আমরা তাঁর জন্য দোয়া করি।

এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী জনকল্যাণ সংস্থাপন সভাপতি মাওলানা আসাদউল্লাহ, মাওলানা রশিদ আহমাদ, মাওলানা সোলাইমান, মাও: জহিরুল ইসলাম, হাফেজ আমানউল্লাহ ও কমিউনিটি নেতৃবর্গ ।

শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মরহুমের জন্য দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

উল্লেখ্য, ড. জসিম উদ্দিন নদভী গত ৮ এপ্রিল রাত ১ টায় স্বপরিবারে ওমরা পালন শেষে অসুস্থ হলে কিং ফায়সাল হসপিটালে ইন্তিকাল করেন এবং কাবা চত্বরে জানাযা দেওয়ার পর জান্নাতুল মুয়াল্লায় তাকে দাফন করা হয়।

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন