হেফাজত ও আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে বই লিখে বহিস্কৃত নেতার খেলাফত আন্দোলনে যোগদান

প্রকাশিত: ১১:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৯

হেফাজতে ইসলাম ও আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে বই লিখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং নৈতিক পদস্খলন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে বহিস্কৃত হওয়া নেতা নারায়ণগঞ্জের আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি তার কিছু সমর্থকদের নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেছেন।

আজ (১৩ এপ্রিল) তিনি তার ফেসবুক পেজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন। খেলাফত আন্দোলনের আমীরের হাতে হাত রেখে সংগঠনের সদস্য ফরম পূরণ করে যোগদান করেন বলে জানান তিনি। যোগদানের বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেন, “আলহামদুলিল্লাহ অদ্য ১৩/০৪/২০১৯ ইং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর দাঃবাঃ হাতে হাত রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক সহ ওলামায়ে কেরামদের এক জামাত নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন” যেখানে তিনি তার এ আনুষ্ঠানিক যোগ দেওয়ার ছবিও সংযুক্ত করে দিয়েছেন।

আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি দেশের বৃহত ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের” একজন আলোচিত নেতা। বিভিন্ন কারণেই ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন তিনি। এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে একটি অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে নান্নু মুন্সির বেশকিছু বিষয়ে জানতে পারে আমাদের প্রতিবেদক।

হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বিতর্ক :

২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উত্তাল সময়গুলোতে যখন দেশের সকল ইসলামী দল এক প্লাটফর্মে এসে নাস্তিকবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নারায়নগঞ্জ জেলার তৎকালীন দায়িত্বশীল আতিকুর রহমান নান্নু মুন্সি সংগঠনের কাউকে না জানিয়ে আল্লামা আহমদ শফীর বিরুদ্ধে একটি বই লিখেন “হেফাজতে ইসলামের আড়ালে হেফাজতে জামায়াত” নামে। যেখানে তিনি আল্লামা আহমদ শফী ও হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে বিষদ্গার করেন। যা নিয়ে হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চ পরবর্তি সমাবেশের মঞ্চে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীমকে উঠতে না দেওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। পরবর্তিতে জানা যায়, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাঝে দূরত্বের কারণ ছিল ঐ বই। যখন জানা যায় বই’র প্রকাশক এই নান্নু মুন্সী, তখন বিনা নোটিশে তাকে সংগঠন থেকে শোকজ করা হয় এবং আর এক কেন্দ্রীয় নেতাকে তখনই বিনা নোটিশে বহিস্কার করা হয়। তবে নান্নু মুন্সী তখন “নিজে লিখতে পড়তে জানেন না বলে বই লিখেননি মর্মে” আত্মপক্ষ সমর্থন করেন, ফলে তাকে চূড়ান্ত বহিস্কার করা হয় না। মূলত তার সঙ্গে তখন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

নৈতিক পদস্খলন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চূড়ান্ত বহিস্কার :

জানা যায়, হেফাজতের ঐ ঘটনার পরও তিনি কিছুদিন সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন। নারায়নগঞ্জ জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। কিন্তু তখন সামনে আসে বরিশালে তাঁর একটি বিয়ে কেন্দ্রিক ঝামেলার খবর। যা নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হয়। যেখানে তাঁর নৈতিক পদস্খলনের বিষয়গুলো সামনে আসে। এসব নিয়ে সংগঠনের মাঝে দ্বিধাবিভক্তি শুরু হয়। পরে দেশের পরিচিত এক আলেমের মাধ্যমে তার এসব বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সাময়িকভাবে বিষয়টা মিমাংসা হয় । কিন্তু তিনি এরপরও সংগঠনের বিভিন্ন নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজ খেয়াল-খুশিমতো কাজ করতে থাকেন। যেসব কারণে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সংগঠন থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কার করা হয় তাকে।

এর কিছুদিন পর ২০১৫ সালের দিকে যখন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার কমিটি গঠন করা হয়, তখন তিনি পূণরায় সংগঠনে আসার চেষ্টা করেন এবং কমিটি গঠন অনুষ্ঠানে তার কিছু সমর্থকদের নিয়ে অপ্রিতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেন। কিন্তু তাকে কমিটিতে রাখা হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং তাকে ছাড়াই শ্রমিক আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তিতে তিনি নিজে একটি সংগঠন করে ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে শুরু করেন। সর্বশেষ সে সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন।

তবে তিনি যোগদান প্রসঙ্গে ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশের নাম উল্যেখ করে যা লিখেছেন সে বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা কেহই সংগঠনের সাথে এখন সম্পৃক্ত নেই এবং তাদের সাথে সংগঠনের কোনো যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেন ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। তবে তাঁর যোগদান প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

এসব বিষয় নিয়ে নান্নু মুন্সীর সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনের তিনটি ফোন নম্বরে কল করা হলে একটি বন্ধ পাওয়া যায় এবং বাকি দুইটা রিসিভ হয় না। ওই নম্বরগুলোতে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

মন্তব্য করুন