প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পড়তে বিধি-নিষেধ; যা বলছে কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০১৯
প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পড়তে বিধি-নিষেধ; যা বলছে কর্তৃপক্ষ

স্বনামধন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি “প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে” ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ নারীদের পর্দা বিধান বোরকা/হিযাব/নেকাব পড়ায় বিধি-নিষেধের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বোরকা পড়তে বাধা থাকার কারণে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিজের ভর্তি বাতিলের আবেদন করার কপি প্রকাশ হয়ে পড়লে বিষয়টি সামনে আসে এবং এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে প্রাইম ইউনিভার্সিটির রেজিস্টার অফিসে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ডেপুটি রেজিস্টার অফিসার মুহা. সাইফুল্লাহ পাবলিক ভয়েসকে বলেন, “এটাকে যেভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা নয়। আপনি জানেন, হলি আর্টিজেনের ঘটনার পর থেকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর নিরাপত্তাজনিত একটি বড় চাঁপ রয়েছে। তাই আমাদের কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ রয়েছে।

“আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের বোরকা পড়া নিষিদ্ধ কি না” জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামিক দেশ, ইসলামি মূল্যবোধের উপর আমাদের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তবে আমাদের নিজস্ব পলিসি রয়েছে এবং নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কিছুর ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকতে চাই বলেই আমাদের নিজস্ব কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। কিন্তু সেভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা নিষিদ্ধ নয়”।

‘রোরকার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ না থাকলে এক ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের আবেদন কেন প্রকাশ হলো’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবশ্যই; সে যদি তাঁর এই নিকাব পড়ার অসুবিধার কারণে আবেদনপত্র দিয়ে থাকে তাহলে তা প্রকাশ্যে যাবে কেন?, তার সমস্যা থাকলে সেটা কর্তৃপক্ষ দেখবে। কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে তারা সমাধান করবে। সেটা ফেসবুকে বা মিডিয়ার কাছে পৌছানোর বিষয়টি আমরা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হিসেবে দেখছি। আমাদের এখানে বোরকা পড়া বা ইসলামের পর্দা করার ক্ষেত্রে সেভাবে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। প্রয়োজনে আপনি ক্যাম্পাসে এসে দেখতে পারেন”।

বিষয়টি নিয়ে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েজন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থীই বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক হিজাবের ক্ষেত্রে তেমন বিধি-নিষেধ না থাকলেও মুখ ঢেকে রাখার বোরকা বা নেকাব পড়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয় এবং ক্যাম্পাসে বোরকা বা নেকাব অনেকটা নিষিদ্ধের মতোই। নেকাব পড়ে আসলে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে তা খুলতে বাধ্য করার ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের কোন অনুসঙ্গ বা ইসলামের মূল্যবোধের কোনোকিছুর বিষয়ে যেমন নামাজ পড়া বা অন্যান্য বিধান পালনে তেমন কোনো বিধি-নিষেধ নেই।

প্রসঙ্গত : “প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের এক ছাত্রী ক্রেডিট ট্রান্সফার করে ভর্তি হওয়ার পর জানতে পারলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা/হিজাব/নেকাব পড়ার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার বরবার ভর্তি বাতিলের আবেদন আবেদন জানান।

তিনি তার আবেদনপত্রে লেখেন;
স্যার, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি প্রাইম ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টে তৃতীয় সেমিস্টারে ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভর্তি হই। ভর্তির পর জানতে পারি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ভিতরে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার অজুহাতে মেয়েদের নেকাব পরা নিষিদ্ধ যা আমার ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক এবং পোশাক নির্বাচনে ব্যক্তি স্বাধীনতা হস্তক্ষেপের শামিল।
যেহেতু ইসলামের বিধান লংঘন করে পর্দা পালনে শিথিলতা প্রদর্শন করতে আমি অপারগ তাই আমি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার ভর্তি বাতিলের আবেদন করছি।

এরপর বিষয়টি আলোচনায় আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছে এ তরুণী। তার এ সাহসীকতা ও ইসলামপ্রেম সম্পর্কে অনেকেই পজেটিভ মন্তব্য করছেন এবং তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। সাথে সাথে প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ থাকার বিষয়টাতেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

© এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরকা পড়তে মানা; ভর্তি বাতিল চাইলো সাহসী ছাত্রী

মন্তব্য করুন