

বাইজিদ আল হাসান: স্যাটেলাইটের সাহায্যে গোটা বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত। ইন্টারনেটের অবদানে সারা দুনিয়ার সকল তথ্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্য এমনকি জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসার ঘটছে অবিরত। তথ্য প্রযুক্তির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে সত্য ইনসাফের বিপরীতে। ইনসাফভিত্তিক ন্যায়পরায়ন মানুষজনের সোনালী ইতিহাসকে ধামাচাপা দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রদায় তথা শান্তির ধর্ম ইসলাম বিদ্বেষীরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে চলেছে ক্রমাগত। এর বিপরীতে ইসলামের চিরসত্য বাণী ও উত্তম আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মানসিকতাই তৈরী হচ্ছে না উম্মাহর। এই মিডিয়াকেই ব্যবহার করে গোটা বিশ্বে চলছে অপপ্রচার আর মিথ্য গুজবের হিড়িক।
এই সময়ের মানুষ বিশেষত তরুণ সমাজ পুরোপুরি ভার্চুয়ালনির্ভর। ধর্মীয় বিষয়াশয় নামাজ-রুজা এমনকি গোসল ফরজের তথ্যটাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে জেনে নিতে বেশ আগ্রাহী। গুগলে সার্চ দিলে কিংবা ইউটিউবে সার্চ করলেই দুনিয়ার সকল তথ্য ও ইতিহাস চলে আসছে হাতের মুঠোয়। উইকিপিডিয়ার মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে দুনিয়ার সকল তথ্য। এক্ষেত্রে আমরা অর্থাৎ মাদারিসে কওমীয়া সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী বিস্তর পিছিয়ে।
ইতিহাস ঐতিহ্য কিংবা প্রকাশযোগ্য তথ্যের দিক থেকে হতাশাজনকভাবে আমাদের অবস্থান অন্ধকারে। এই সুযোগকে কাজে লাগচ্ছে আমাদের শুত্রুগোষ্ঠী। মাহফিল কিংবা সম্মেলনে অংশগ্রহাণ করার সময় নেই যেই সকল যুবক যুবতীদের, সেই সকল যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরাই মূলত ভার্চুয়াল বিশ্বকে নিজের ঘর হিশেবে ব্যবহার করছে। যার ফলে তাদের হাতের মুঠোয় যাই পাচ্ছে তাতেই তারা তৃপ্ত হচ্ছে।
আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্টির প্রতিনিধিত্বকারী মাদারিসে কওমীয়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট রয়ে গেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কওমীমাদরাসা শিক্ষার অবদান, এবং এর সোনালী ইতিহাস এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে অসম্পূর্ণভাবে উপস্থাপিত।
“কওমীপিডিয়া” গোটা বাংলাদেশের সকল মাদরাসার তথ্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও অবদান বিভাগ-জেলা-উপজেলাভিত্তিক এক প্লাটফর্মে এনে জমা করে ছড়িয়ে দেবে সারা বিশ্বের সকল বাংলাভাষী মানুষের কাছে। ইসলাম সম্পর্কে অনভিজ্ঞ, কমঅভিজ্ঞ এবং অন্যায় এলার্জিযুক্ত সকল প্রকার মানুষের কাছে কওমী মাদরাসার সফল কার্যকলাপ ও স্বর্নোজ্জল ইতিহাস পৌছে দেবে সহজে। মাদরাসমূহের তথ্যবিবরণি ও মাদরাসার ছবিসহ প্রকাশ থাকবে। প্রত্যেক মাদরাসার ছাত্রসংখ্যা, শিক্ষকবৃন্দের নাম ও মাদরাসা পরিচালনার ফান্ড, মাদরাসার নির্দিষ্ট শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসায় সমাপনি ক্লাস অর্থাৎ দাওরায়ে হাদীস (ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স সমমান) ছাত্রসংখ্যা নামসহ, হাফেজে কুরআনদের নাম সাল-সহ উল্লেখ থাকবে। এই সকলপ্রকার তথ্য কর্তৃপক্ষের অনুমতিস্বাপেক্ষ সংরক্ষিত থাকবে কওমীডিয়ায়।
“কওমী মাদরাসায় জঙ্গি তৈরী হয়” এমন একটা গুজবী-স্লোগান ছড়ানো হতো এককালে। মাদারিসে কওমীয়া সম্পর্কে যখন সরল মানসিকতা নিয়ে অবজার্ব করা হলো, দেখা গেলো গোটা দেশের কোনো কওমী মাদরাসায়ই জঙ্গি তৈরী হয় না, বরঞ্চ জঙ্গিবাদ ও বিশৃংখলার বিরুদ্ধেই কওমী মাদরাসা শিক্ষার অবস্থান।
“কওমিপিডিয়া” গোটা দেশের মাদরাসাসমূহের চলমান অবস্থা ও নিরক্ষরতা দূরীকরণে সমাজে মাদরাসাসমূহের অবদান সম্পর্কে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ধারণা দেবে। পঞ্চাষোর্ধ সকল ওলামায়ে কেরামের জীবনবৃত্তান্ত ছবিসহ সংরক্ষিত থাকবে। ওলামায়ে কেরামের সরল জীবন ও জটিল সংগ্রাম সম্পর্কে মুটামোটি একটা ধারণা নেয়া সম্ভব হবে কওমীপিডিয়ার মাধ্যমে।
এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই মূলত “কওমীপিডিয়া” নামক তথ্যকোষের যাত্রা। আশাকরি কওমীসংশ্লিষ্ট সকল ভাই বন্ধুগণ কওমীপিডিয়ার কাজে সহযোগিতা করবেন। এবং কওমী মাদরাসার ইতিহাস সংরক্ষণ ও অবদান নিয়ে কাজ করে কষ্টের সহযোগি হবেন।