সতর্কবার্তা দেয়া ১৫ বক্তার কারো কারো কথায় উসকানি থাকে: আল্লামা মাসঊদ

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০১৯

গত মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে তৈরি করা এ প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে ১৫ জন ইসলামী আলোচক ও বক্তাদের উপর ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য, জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেয়া, ধর্মের নামে বিভিন্ন উপদল ও শোবিজ তারকাকে নিয়ে কটূক্তি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে এসব বক্তাদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। আলোচিত সেসব বক্তাদের বিভিন্ন ওয়াজের ক্লিপস নিয়ে তা থেকে এ ধরণের সিদ্ধান্তে আসা হয়েছে বলে মন্ত্রনালয়ের সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে দেয়া সে প্রতিবেদনে বিভিন্ন মতের ১৫ জন ইসলামী আলোচকের বিষয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল উলামার চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, হ্যাঁ এটা ঠিক ওই ১৫ জন মাওলানার মধ্যে কারও কারও ওয়াজে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা থাকে যা সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দিতে পারে এবং অমুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক কাজে তারা উদ্বুদ্ধ হতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে নাম উল্যেখ না করে  মাওলানা মাসঊদ বলেন, এসব বক্তাদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক দল করে তবে তারা কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জড়িত কী না আমি জানি না। [সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা]

তবে এর আগে গত ২ এপ্রিল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আল্লামা মাসঊদ বলেছিলেন, ঢালাওভাবে আলেম উলামার ওয়াজ বা বয়ান নিয়ন্ত্রণ ঠিক হবে না। আলেমগণ সমাজের আয়না। তবে যদি সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

পড়ুন বিস্তারিত :

নির্দিষ্টভাবে কোনো বক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিন: আল্লামা মাসঊদ

তবে তালিকায় থাকা বক্তাদের সে লিস্ট নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন কারণ তালিকায় দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে দল-মত নির্বিশেষে পছন্দের তালিকায় থাকা কিছু বক্তারাও রয়েছেন। অনেকে মতামত দিয়েছেন তাদের থামিয়ে দিতেই বিতর্কিত কিছু বক্তাদেরও যোগ করা হয়েছে এ তালিকায়। এমনকি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ছয়টি সুপারিশ গঠন করা হয়েছে।

সুপারিশগুলো হলো –

১. ওয়াজি হুজুররা যেন বাস্তবধর্মী ও ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।
২. যারা ওয়াজের নামে হাস্যকর ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে ধর্মের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করার চেষ্টা চালান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রো-অ্যাকটিভ উদ্বুদ্ধকরণ করা।
৩. অনেক আলেমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রির মতো উচ্চশিক্ষা ব্যতীত যারা ওয়াজ করে তারাই জঙ্গিবাদ ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষিত ওয়াজকারীদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা।
৪. অনেকেই আছেন, যারা হেলিকপ্টারযোগে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন এবং ঘণ্টাচুক্তিতে বক্তব্য দিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তারা নিয়মিত ও সঠিকভাবে আয়কর প্রদান করেন কিনা তা নজরদারির জন্য আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা।
৫. ওয়াজি হুজুরদের বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া এবং উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বক্তব্য দিলে তাদের সতর্ক করা। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়াজ করার অনুমতি না দেওয়া।
৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনা।

সম্প্রতি তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সব বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি আকারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এ বিষয়ে আলেমদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
আলেমদের মতামতসমূহ পড়ুন লিংকগুলো থেকে :

– দেশের প্রবীণ আলেমদের মতামত

– মুফতী ফয়জুল করীমসহ তালিকায় থাকা কয়েকজনের মতামত

– ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী রেজাউল করীমের মতামত

– ওয়াজ-মাহফিলে তামাশা, দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত

– ওয়াজ মাহফিল : একাল-সেকাল

– সোশ্যাল মিডিয়া প্রাপ্ত মতামত

মন্তব্য করুন