

প্রিয় সন্তান!
আমি তোমায় ৩টি কারণে এই চিঠিটি লিখছি—
১. জীবন, ভাগ্য এবং দুর্ঘটনার কোনো নিশ্চয়তা নেই, কেউ জানে না সে কতোদিন বাঁচবে।
২. আমি তোমার বাবা, যদি আমি তোমায় এ কথাগুলি না বলি, অন্য কেউ বলবে না।
৩. যা লিখলাম, তা আমার নিজের ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা; এটা হয়তো তোমায় অনেক অপ্রয়োজনীয় কষ্ট পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। জীবনে চলার পথে এগুলো মনে রাখার চেষ্টা কোরো—
১. যারা তোমার প্রতি সদয় ছিলো না, তাদের ওপর অসন্তোষ পুষে রেখো না। কারণ তোমার মা এবং আমি ছাড়া তোমার প্রতি সুবিচার করা কারো দায়িত্বের ভেতর পড়ে না। আর যারা তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে, তোমার উচিত সেটার সঠিক মূল্যায়ন করা এবং কৃতজ্ঞ থাকা। তবে তোমার সতর্ক থাকতে হবে, কারণ প্রতিটি মানুষেরই প্রতি পদক্ষেপের নিজ নিজ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একজন মানুষ আজ তোমার সঙ্গে ভালো; তার মানে এই নয়, সে সবসময়ই ভালো থাকবে। কাজেই খুব দ্রুত কাউকে প্রকৃত বন্ধু ভেবো না।
২. জীবনে কিছুই কিংবা কেউই ‘অপরিহার্য’ নয়, যা তোমার পেতেই হবে। একবার যখন তুমি এ কথাটির গভীরতা অনুধাবন করবে, তখন জীবনের পথচলা অনেক সহজ হবে; বিশেষকরে যখন বহু প্রত্যাশিত কিছু হারাবে কিংবা তোমার তথাকথিত আত্মীয়-স্বজনকে তোমার পাশে পাবে না।
৩. জীবন সংক্ষিপ্ত; আজ তুমি জীবনকে হেলা করলে কাল জীবন তোমায় ছেড়ে চলে যাবে। কাজেই জীবনকে তুমি যতো তাড়াতাড়ি মূল্যায়ন করতে শিখবে, ততোই বেশি উপভোগ করতে পারবে।
৪. ভালোবাসা একটি ক্ষণস্থায়ী অনুভূতি ছাড়া কিছুই নয়। মানুষের মেজাজ আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অনুভূতি বিবর্ণ হবে। যদি তোমার তথাকথিত কাছের মানুষ তোমাকে ছেড়ে চলে যায়, ধৈর্য ধরো, সময় তোমার সব ব্যথা-বিষণ্নতা ধুয়ে-মুছে দেবে। কখনও প্রেম-ভালোবাসার মিষ্টতা এবং সৌন্দর্যকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, আবার ভালোবাসা হারিয়ে বিষণ্ণতায়ও অতিরঞ্জিত হবে না।
৫. অনেক সফল লোক আছেন, যাদের হয়তো উচ্চ শিক্ষা ছিলো না; এর অর্থ এই নয়, তুমিও কঠোর পরিশ্রম বা শিক্ষালাভ ছাড়াই সফল হতে পারবে! তুমি যতোটুকু জ্ঞানই অর্জন করো না কেনো, তা-ই হলো তোমার জীবনের অস্ত্র। কেউ ছেঁড়াকাঁথা থেকে লাখটাকার অধিকারী হতেই পারে, তবে এজন্য তাকে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে।
৬. আমি আশা করি না, আমার বার্ধক্যে তুমি আমায় আর্থিক সহায়তা দেবে। আবার আমিও তোমার সারাজীবন ধরে তোমায় অর্থ সহায়তা দিয়ে যাবো না। যখনই তুমি প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখনই বাবা হিসেবে আমার অর্থসহায়তা দেবার দিন শেষ। তারপর তোমাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তুমি কি পাবলিক পরিবহনে যাতায়াত করবে নাকি নিজস্ব লিমুজিন হাঁকাবে! গরিব থাকবে নাকি ধনী হবে!
৭. তুমি তোমার কথার মর্যাদা রাখবে; কিন্তু অন্যদের কাছে তা আশা কোরো না। মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে; তবে অন্যরাও তোমার সঙ্গে ভালো থাকবে, তা প্রত্যাশা করবে না। যদি তুমি এটি না বুঝতে পারো, তবে শুধু অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রণাই পাবে।
৮. আমি অনেক বছর ধরে লটারি কিনেছি, কিন্তু কখনও কোনো পুরষ্কার পাই নি। তার মানে হলো, যদি তুমি সমৃদ্ধি চাও, তবে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বিনামূল্যে কোথাও কিছু জুটবে না।
৯. তোমার সঙ্গে আমি কতোটা সময় থাকবো, সেটা কোনো ব্যাপার না; বরং চলো, আমরা আমাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো উপভোগ করি, মূল্যায়ন করি।
ইতি-
ভালোবাসাসহ তোমার বাবা
পুনশ্চ : বাবাটি হলেন একজন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট এবং হংকং-এর প্রখ্যাত টিভি সম্প্রচারকারী। তার কথাগুলো বয়োজ্যেষ্ঠ, বয়োকনিষ্ঠ, বৃদ্ধ কিংবা তরুণ, শিশু, আমাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য।