চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে চরমোনাইর নমুনায় তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০১৯

ইবনে মুসা

বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি। মুজাহিদ কমিটি মানেই সুশৃঙ্খল ও জৌলুশহীন একদল নিবেদিতপ্রাণ কাফেলার নাম। চরমোনাইতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক মাহফিলে কয়েক কিলোমিটার ঘেরা__লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জমায়েতের আঞ্জামদাতা এই মুজাহিদ কমিটিই। যে কাজগুলো সম্পাদন করতে অনেক সময় প্রশাসনের লোকও হিমশিম খায়— সে কাজগুলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছুটে আসা মুজাহিদ কমিটির সদস্য তথা স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ খুব সহজেই সম্পন্ন করতে পারেন। এটা তাদের বিশাল এক দক্ষতা। পারদর্শিতাও বলতে পারেন।

চরমোনাই মাহফিলের নমুনায় বাংলাদেশে আরও কয়েকটি “তিনদিন ব্যাপী” ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। যার প্রত্যেকটির আঞ্জাম দিয়ে থাকেন মুজাহিদ কমিটির সাধারণ স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। তাদের মধ্যে নেই কোনো লৌকিকতা, নেই কোনো ভনিতা— যা করেন মন থেকেই করেন এবং আল্লাহকে খুশি করার জন্যই করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে প্রতিবারের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চরমোনাইর নমুনায় তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির। মাহফিলটি ইতোমধ্যে শুরুও হয়ে গেছে। আজ ৭ মার্চ বৃহস্পতিবার বাদ যোহর মুজাহিদ কমিটির আমীর চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে মাহফিলটি। চলবে ৯ তারিখ পর্যন্ত। তবে ১০ তারিখ সকালে আখেরী মুনাজাত হবে বলে জানিয়েছেন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি।

ঢাকার ধুপখোলা, গোলারটেক, খুলনার গোয়ালখালী, রংপুরের কুড়িগ্রাম—সহ প্রতিটি বিভাগে চরমোনাইর নমুনায় তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল ডাক্তার মোখতার হুসাইনের দিকনির্দেশনায় লক্ষাধিক স্বেচ্ছাসেবকের স্বেচ্ছাশ্রমে মাহফিলগুলো বাস্তবায়ন হয়।

তবে চট্টগ্রাম মুজাহিদ কমিটির আয়োজনে ও ব্যবস্থাপনায় তিনদিন ব্যাপী মাহফিলটি একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে তিনদিন ব্যাপী মাহফিল মানেই ভিন্ন কিছু— ডেকোরেশন, পেন্ডেল, আয়োজন, সাউন্ড সিস্টেম, আপ্যায়ন, সবকিছুই গোছালো এবং দৃষ্টিনন্দন। আয়োজনটি জাম্বুরী মাঠ দিয়ে শুরু হলেও এ বছর জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঝে পলোগ্রাউন্ডেও হয়েছে দুইবছর।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় মুজাহিদ কমিটির সদর আলহাজ্ব সেলিম মাহমুদ জানান— প্রায় দুই লক্ষ মানুষের আয়োজন করেন তারা। এ বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে লোকসমাগম আরও বেশি হবে। তিনি আরও জানান— পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের ওয়াজ শোনার জন্যও থাকে বিশাল ব্যবস্থাপনা এবং ৫০ হাজারের ওপর মহিলা জমায়েত হন উক্ত মাহফিলে। এত মহিলা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন বা কোনো সমস্যা হয় কী না, কোনো মহিলা যৌন হয়রানির শিকার হয় কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন— সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গেই মহিলাদের ব্যবস্থা করা হয়। মহিলা প্যান্ডেল থেকে তাদের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। কারণ, প্রয়োজনীয় সবকিছু মহিলা প্যান্ডেলের ভেতরেই ব্যবস্থা থাকে। বাথরুম, গোসলখানা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য মহিলাদের তত্ত্বাবধানে সবকিছু ভেতরে আছে। প্যান্ডেলের চারপাশ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়— যাতে কোনো পুরুষ মহিলা প্যান্ডেলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি না করতে পারে। মহিলা প্যান্ডেলের জন্য প্রায় পাঁচ’শ মহিলা স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে ভেতরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। জমিয়াতুল ফালাহ বিশ্ব মসজিদের নিচতলা, ৪র্থ ও ৫ম তলা এবং মসজিদের বাইরেও মহিলাদের বসার জায়গা করা হয়েছে।

তা ছাড়াও তিনদিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকিরের সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় প্রায় একহাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন বলেও জানান সেলিম মাহমুদ

পুরো এরিয়া প্রায় ১০০ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। চরমোনাই দরবারের মাহফিল এর মতোই মাহফিলগুলো প্রথমদিন বাদ যোহর পীর সাহেব চরমোনাইর উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়। মূল বয়ান হিসেবে ৭টি বয়ান ধরা হয়। প্রথম দিন বাদ যোহর, বাদ এশা; পরদিন বাদ ফজর, বাদ এশা; পরদিন বাদ ফজর, বাদ এশা এবং পরবর্তী দিন ফজরের পর শেষ বয়ান ও আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয় মাহলটি। পাঁচটি বয়ান করেন আমীরুল মুজাহিদীন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এবং দ্বিতীয় দিন বাদ এশা ও তৃতীয় দিন বাদ ফজর বয়ান করেন নায়েবে আমীরুল মুজাহিদীন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই। এছাড়াও দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা—মাশায়েখ ও ওয়ায়েজীনে কেরাম বয়ান করে থাকেন।

এক নজরে তিন দিনব্যাপী মাহফিলের কার্যক্রম :

  • পীর সাহেব হুজুরের বয়ান: প্রত্যেহ ফজর ও এশার নামাযের পর হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই বয়ান পেশ করবেন।
  • শ্রমিক সমাবেশ: ৮ মার্চ (শুক্রবার), সকাল ৯ ঘটিকায়, মাহফিলের ময়দানে। প্রধান অতিথি: হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই।
  • ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন: ৮ মার্চ (শুক্রবার), বাদ জুমা, মাহফিলের ময়দানে। প্রধান অতিথি: হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই।
  • ছাত্র গণজমায়েত: ৯ মার্চ (শনিবার), সকাল ৯ ঘকিটায় মাহফিলের ময়দানে। প্রধান অতিথি: হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই।
  • আখেরি মুনাজাত: ১০ মার্চ (রোববার), ফজরের নামাযের পর বয়ান ও আখেরি মুনাজাত, পরিচালনা করবেন: হযরত পীর সাহেব হুজুর চরমোনাই।

মন্তব্য করুন