

ইবনে মুসা
ক্ষমতাসীন দলের দাপুটে নেতা বলে পরিচিত তিনি। বেশ দক্ষতার সঙ্গেই ইউনিয়ন পরিচালনা করেছেন চেয়ারম্যান হিসেবে। জীবনে কোনোদিন জুব্বা পড়েননি। সাপোর্ট করেননি কোনো ইসলামী দলকেও। বরং ওলামায়ে কেরাম বা হুজুরদের দেখলে— এড়িয়ে চলতেন। ওলামায়ে কেরামের বয়ান বা কথা শুনতে ছিল তার অনীহা। দলীয় কোন্দলের দুই গ্রুপের সক্রিয় গ্রুপের নেতাও তিনি।
বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের মূল কমিটির ইউনিয়ন সভাপতির দরজা— তার জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উন্মুক্ত। কিন্তু গত চরমোনাইর ফাল্গুনের মাহফিলের আগে (২০, ২১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) কী মনে করে যেন থানা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতিকে আগেই জানিয়ে রাখেন— এবার চরমোনাই যাবেন তিনি।
ওয়াদা রক্ষা করেছেন। চরমোনাইতে গিয়েছেন একদিন আগেই। সময় যত গড়ায়, ততই মুগ্ধ হন তিনি। আপ্লুত হন নিয়ম-শৃঙ্খলা, বয়ান ও অনুষ্ঠানসূচি দেখে। সচেতন মানুষ তিনি। বংশীয় প্রতিপত্তিও উল্লেখ করার মতো।
উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিমের উদ্বোধনী বয়ানেই কেঁদে কেঁদে একাকার। বয়ান এরকম হতে পারে, শক্ত মানুষকে এভাবে কাঁদাতে পারে, বয়ানের মাধ্যমে মানুষকে এত আকৃষ্ট করা যায়— এটা জানতেন না। সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন আরও কয়েকজন রাঘববোয়াল; যারা প্রত্যেকেই বড় বড় ব্যবসায়ী। কেঁদেছেন তারাও।
রাতের বয়ান শেষে তিনি আরও পেরেশান হয়ে পড়েন। নিজের অপরাধের জন্য লজ্জিত। জীবনে কখনও জুব্বা না পড়া মানুষটি প্রথম দিন রাতের বয়ানের পরই জুব্বা কেনেন। তওবা করেন— দুনিয়ার পদ-পদবির পেছনে আর দৌড়াবেন না বলে। তিনি হতে চান ইসলামের সৈনিক
পরদিন শায়খে চরমোনাই মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের বয়ান শুনে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ প্রায়! শায়খে চরমোনাইর সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ দেখি তাদের থানা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতিকে নিয়ে হাজির! সাধারণ মানুষের মতো একপাশে অসহায়’র মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ মানুষ এখানে কেন? হয়ত ঘোরতে আসছেন। কিন্তু পরিধানে জুব্বা দেখে হিসাব মিলাতে পারছিলাম না।
থানা ইসলামী আন্দোরনের সভাপতি বললেন— শায়খে চরমোনাইর কাছে দোয়া নিতে আসছেন। আমি হুজুরের সঙ্গে তাকে দেখা করালাম। শায়খে চরমোনাই তার মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন। খোঁজখবর নেন। জানতে চান— কোনো অসুবিধা আছে কী না।
এতে তিনি আরও মুগ্ধ হন। এত বড় দল ও দরবারের একজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্ব__ ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন মানুষের এভাবে খোঁজখবর নিতে পারেন! এটা তার কাছে বিরল মনে হয়েছে। কারণ, তাদের দল বা বাংলাদেশের প্রচলিত কোনো দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের কেয়ারই করেন না।
পরবর্তিতে দেখা হয় তার সঙ্গে। কথা হয় রাতভর। তার কথা শুনে হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণের কথা মনে পড়ছিল বারবার। তিনি যেভাবে মনের বাসনা ব্যক্ত করেছিলেন— তাতে মনে হয়েছে, ইসলামী হুকুমতের জন্য স্বপ্নে বিভোর তিনি।
আমরা যারা নিয়মিত চরমোনাইতে আসা-যাওয়া করি__ এখন আর সেভাবে প্রভাবিত করে না আমাদের; এটাই বাস্তবতা। কিন্তু তাকে দেখে অবাক হই, ভিন্ন ধারার একজন মানুষ আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবত কতটা পরিবর্তন হতে পারে— দীনের প্রতি কতটা ঝুঁকতে পারে। এবাদতের প্রকৃত স্বাদ কী, তা এদের থেকে জানা উচিৎ।
তিনি বলেন— প্রত্যেক দরবারই টাকা চেয়ে থাকে। সে হিসেবে আমিও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাই চরমোনাই। অপেক্ষা করেছি চারদিন। কিন্তু কোনো টাকা চাইলেন না তাঁরা! শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের জন্য কিছু টাকা চাওয়া হয়েছে। অবাক হয়েছি__ বাংলাদেশে চরমোনাই দরবার অদ্বিতীয় দরবার।