জিএসপি প্রত্যাহার করে নিল আমেরিকা, হুমকিতে ভারতের বাণিজ্য

প্রকাশিত: ৩:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০১৯

আমেরিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভারত অন্যায্য আচরণ করছে এমন অভিযোগ তুলে দেশটিকে দেওয়া বিশেষ বাণিজ্যসুবিধা জেনেরালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্সেস (জিএসপি) প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কংগ্রেসকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি জিএসপির আওতা থেকে ভারতকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, ভারত সরকার ওয়াশিংটনকে এমন নিশ্চয়তা দেয়নি যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোকে ভারতের বাজারে ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রবেশাধিকার দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পরিষদের অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, কংগ্রেসকে দেওয়া ট্রাম্পের এ চিঠির পর ৬০ দিন পার হওয়ার আগে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এর পাশাপাশি তুরস্ককেও জিএসপি সুবিধা থেকে বাতিল করা হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। কারণ দেশটি অর্থনৈতিকভাবে এখন যথেষ্ট উন্নত, ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের বিশেষ প্রবেশাধিকারের প্রয়োজন নেই।

ভারতে যখন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—এর কয়েক সপ্তাহ আগে এমন একটি ঘোষণা আসায় তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য একটি রাজনৈতিক ধাক্কা হিসেবেই ধরা হচ্ছে। ট্রাম্প কয়েক বছর যাবৎই যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ভারতের উচ্চ শুল্কের সমালোচনা করে আসছিলেন। গত শনিবারও বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে ভারতের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। এদিন দলীয় একটি সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ভারতকে ‘উচ্চ শুল্কের দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। হুমকি দেন দিল্লির ওপর ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপের।

যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপির আওতায় বিশ্বের ১২১ উন্নয়নশীল দেশ পণ্য রপ্তানিতে নিম্ন শুল্কসুবিধা পায়। যার সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী ভারত।

ভারতের আট হাজার কোটি ডলার রপ্তানির মধ্যে ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্যে এ সুবিধা পায়। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রভাব ভারতের রপ্তানিতে খুব বেশি পড়বে না জানিয়ে দেশটির বাণিজ্যসচিব অনুপ ওয়াধাওয়ান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপির আওতায় ভারত মাত্র ১৯০ মিলিয়ন ডলার সুবিধা পায় বছরে। এটা একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে। তিনি জানান, ভারতের তিন হাজার ৭০০ পণ্য রপ্তানির বিপরীতে মাত্র এক হাজার ৭৮৪ পণ্যে শুল্কসুবিধা রয়েছে।

ওয়াধাওয়ান বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যৌক্তিক ও অর্থপূর্ণ বাণিজ্য প্যাকেজের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হতে পারেনি। এর বাইরে তাদের কিছু অতিরিক্ত অনুরোধ ছিল, যার ব্যাপারে একমত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ভারত কোনো ব্যবস্থা নেবে না, নিয়মিত বাণিজ্যিক আলোচনায়ও এ বিষয়টি রাখা হবে না।

গত এপ্রিলে বেশ কিছু আমেরিকান কম্পানি অভিযোগ করেছিল ভারতে তাদের দুগ্ধপণ্য ও মেডিক্যাল ডিভাইস রপ্তানি অশুল্ক বাধার মুখে পড়ছে। তখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছিল তারা ভারতকে দেওয়া জিএসপি পর্যালোচনা করবে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক ভারতের ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব তৈরি হয়। ভারতের ই-কমার্স বাণিজ্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামাজন ও ওয়ালমার্ট। কিন্তু সম্প্রতি নতুন ই-কমার্স নীতি করেছে ভারত। এর ফলে উন্মুক্ত বাজারে আর আগের মতো ব্যবসা করতে পারবে না অ্যামাজন এবং ওয়ালমার্টের ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্ট। এ নীতির ফলে গ্রাহকদের ছাড় দেওয়া, পণ্য বিক্রি বা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিক্রি সব ক্ষেত্রেই বাধা তৈরি হয়েছে। ফলে এ বাজারে আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো বড় অঙ্কের বিনিয়োগ হুমকিতে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি প্রত্যাহার নিয়ে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অজয় শাহি বলেন, ‘আমরা ভয় পাচ্ছি এর ফলে আমাদের শ্রমঘন খাত যেমন কৃষি, সামুদ্রিক পণ্য ও হস্তশিল্প ইত্যাদি রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ছিল ১২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের।
রয়টার্স, সিএনএন মানি, এএফপি।

মন্তব্য করুন