

চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আয়োজনে দুইদিন ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলন চলছে। সম্মেলনের উদ্বোধনী দিবসে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দেশের বরেণ্য আলেম-ওলামাগন বয়ান করেছেন। বয়ানে বক্তারা “নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে আজীবন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন”।
আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাদ জোহর থেকে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে দু’দিন-ব্যাপী শা’নে রেসালত সম্মেলন শুরু হয়। চার অধিবেশনে বিভক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা নোমান ফয়জী, মাওলানা মোহাম্মদ ইদরিস ও মাওলানা লোকমান হাকীম।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, জামেয়া পটিয়ার শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ, দারুল উলুম হাটহাজারীর সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা শায়খ আহমদ, তাহাফফুজে খতমে নবুয়তের মহাসচিব মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম, মাওলানা সাজেদুর রহমান বি বাড়িয়া, তাবলিগের মুরুব্বী মুফতি নজরুল ইসলাম কাসেমী, ড.আ ফ ম খালিদ হোসেন, মুফতি কুতুবুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মোস্তাকুন্নবী কুমিল্লা, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা আবু বকর বাশখালী, মাওলানা হাজী ইউসুফ, মাওলানা মাহববুর রহমান হানিফ প্রমূখ।
শানে রেসালত সম্মেলনে উপস্থিত জনতার একাংশ
শা’নে রেসালত সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, নাস্তিক, মুরতাদ ও কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে আজীবন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, মুসলমানরা নিজের জীবনের চাইতেও মহানবী সা. কে বেশি ভালোবাসেন। নবীপ্রেম ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত অস্বীকারকারীরা কাফের। ভন্ড মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর অনুসারী আহমদিয়া জামাত নাম দিয়ে সাধারণ মুসলমানদের ঈমান হারা করছে। কুরআন, হাদীস ও উম্মতের ঐক্যমত হলো কাদিয়ানী সম্প্রদায় মুসলমান নয়। তাই এদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে আমাদেরকে তাগুতি, কুফরী, সাম্রাজ্যবাদী, ইসলাম ও দেশ বিরোধী শক্তির মোকাবেলা করতে হবে।
২০১৩ সালের হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শাপলা চত্বর মনে করে দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে যারা রক্ত দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, তারা কেবল মহান আল্লাহ ও প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সা. এর ভালবাসা নিয়ে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ দফা দাবি নিয়ে সেদিন ময়দানে নেমেছিল সে দাবি আজও পূরণ হয়নি। ঈমান রক্ষার আন্দোলনে যারা শাহাদত বরণ করেছেন তারা আমাদেরই ভাই, তাদেরকে আমরা ভুলে যেতে পারি না।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক কোন এজেন্ডা নেই, তাই ধর্মীয় ও ঈমানী কোন বিষয়ে ছাড় দিতে পারিনা। সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস, ধর্ম ও রাসূলের সা. অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তির জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস এবং কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণাসহ হেফাজতের তের দফা ঈমানী দাবী বাস্তবায়ন করুন। অন্যথায় যে কোন কঠিন আন্দোলনের জন্য তৌহিদী জনতা প্রস্তুত রয়েছে।
হেফাজতের শানে রেসালত সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী
“তাহাফফুজে খতমে নবুয়তের” মহাসচিব মাওলানা হাফেজ নুরুল ইসলাম বলেন, মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা বিনষ্ট করার বহুমুখী চক্রান্ত চলছে। কাদিয়ানীবাদ মুসলিম উম্মাহর জন্য জঘণ্যতম ফিতনা। এই ফিতনা প্রতিরোধে আলেমসমাজ ও ধর্মপ্রাণ জনগনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বি বাড়িয়ার মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, সাস্কৃতিক আগ্রাসন দ্বারা আমাদের সন্তান-সন্ততিদের চরিত্র নষ্ট করা হচ্ছে। দুর্নীতি-সুদ-ঘুষ-ব্যাভিচার সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। মানুষের জীবন থেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ এবং খোদাভীতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন-নাস্তিক, মুরতাদ ও ধর্মদ্রোহীরা মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) এর শানে বেয়াদবি করছে। আমরা তা সহ্য করতে পারিনা। নাস্তিক মুরতাদদের বিরুদ্ধে তাই আমাদের আজীবন আন্দোলন চলবে।
জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আয়োজনে দুইদিন ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনের প্রথম দিন শেষ হল আজ। কাল শুক্রবার (১ মার্চ) সম্মেলন দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফী। এছাড়াও দেশ বরেণ্য আরো অনেক ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত থেকে বক্তৃতা দেবেন।