মুফতী ফয়জুল করীম : যা বললেন তার আলোচিত চরমোনাই মাহফিলের বয়ান নিয়ে

প্রকাশিত: ১১:০২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
লাইভ বক্তব্যরত মুফতী ফয়জুল করীম

সদ্য সমাপ্ত হওয়া ঐতিহাসিক চরমোনাইর ফাল্গুনের মাহফিলে হযরত ওসমান রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু সম্পর্কে দেওয়া আলোচিত সেই বক্তব্যের খোলাসা করেছেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি বাদ এশা একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বক্তব্যটির খোলাসা করেন।

খোলাসা বক্তব্যে তিনি বলেন;

“সেদিনের বক্তব্যে আমার যদি কোনোভাবে সাহাবায়ে কেরামদের প্রতি কোনো ভুল ধারণা বা অন্যায় কিছু সৃষ্টি হয়, তবে সে বিষয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং হক্কানী ওলামায়ে কেরাম যেভাবে বলবেন— সেভাবেই যে কোনোকিছু করতে রাজি আছি”

পাবলিক ভয়েসকে তিনি আরও বলেন, “সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অবস্থান’, আমরা সাহাবায়ে কেরামকে মে’ইয়ারে হক মনে করি এবং তাদের বিষয়ে যেকোনো সমালোচনা অন্যায় মনে করি”।

—সেদিনের বক্তব্যে অসতর্কতামূলক এমন কিছু কথা বের হয়েছে, যা ভুল। আমি এমন ব্যক্তি নই, যে ভুলের ওপর স্থির থাকব। বরং আমি তো এমন ব্যক্তি, যে চাই “মানুষ আমার ভুল ধরিয়ে দিক” এবং আমি শুধরে যাব। আমার যেকোনো বিষয়ে ভুল হতেই পারে। ভুল হওয়াটাই মানুষের স্বভাব। তাই ভুল ধরিয়ে দিলে— তা থেকে রুজু করতে কোনো আপত্তি নেই আমার।

হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বিষয়ে তিনি বলেন— হযরত ওসমান বাদি. হলেন মস্তবড় একজন সাহাবী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই কন্যার স্বামী। তাঁর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সরাসরি জান্নাতের ফয়সালা দিয়েছেন। তিনি রাসুল স. -এর সাথে জান্নাতের সঙ্গীও হবেন। এমনকি তিনি নবীদের পর তৃতীয় মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী। এমন একজন সাহাবীর ব্যাপারে কোনোধরণের গোস্তাখীমূলক কথা বলার সাহস বা শক্তি কোনোটাই আমার নেই।

সেদিনের বক্তব্যে দেখা গেছে— অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কথা বলতে গিয়ে অসতর্কতাবশত এমন কিছু কথা বের হয়ে গেছে, যা হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শানের খেলাফ। তাই আমার বক্তব্যের মধ্যে যেটুকু ভুল হয়েছে, আমি সেটুকু প্রত্যাহার করছি এবং আল্লাহ তাআলার কাছে সরাসরি ক্ষমা চাইছি। আমার যেকোনো ভুল যেকেউ ধরিয়ে দিলে, তা আমি মেনে নিতে প্রস্তুত এবং যেকোনো বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অবস্থানই আমার অবস্থান।

মূল ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে—

গত ২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ঐতিহাসিক চরমোনাইর ফাল্গুনের মাহফিলের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অধিবেশনের বক্তব্যে মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম সমসাময়িক নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে হযরত ওসমান রাদি. এর বিশ্বস্ততা ও নম্রতার উদাহরণ টানতে গিয়ে বলেন— তিনি অতি দয়ালু ও নম্র ছিলেন। মানুষকে খুব বিশ্বাস করতেন। ফলে শত্রুপক্ষ তাঁর ক্ষতি করার সুযোগ পেয়েছে। এজন্য বেশি নরম ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব দেওয়া উচিৎ নয় বলে মন্তব্য করেন মুফতী ফয়জুল করীম।

মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীমের এই বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর আলোচনা শুরু হয়। অনেকে বক্তব্যের মাঝে ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান রাদি. -এর প্রতি অপবাদ আরোপের অভিযোগ তোলেন। তাদের দাবি, মুফতী ফয়জুল করীম সাহাবাবিদ্ধেষ থেকে বা তাঁর অযোগ্যতার কারণে এমন বক্তব্য দিয়েছেন।

কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে— এই দাবি মোটেও সঠিক নয়। বেশিরভাগ সমালোচনা চরমোনাইবিদ্বেষ থেকে করা হয়েছে। সমাধানের সঠিক পথ বাদ দিয়ে ফেসবুক উম্মাদনায় মেতে উঠছে কেউ কেউ। আবার অনেকে সমাধানের পথও দেখিয়েছেন।

অন্যদিকে কেউ কেউ সমালোচকদের একহাত নিয়ে বলেন; মুফতী ফয়জুল করীমের (শায়খে চরমোনাই) বক্তব্য সাহাবীবিদ্বেষ থেকে নয়, বরং “সবকতে লিসান” বা মিসটেক— অর্থাৎ অসতর্কতাবশত ছিল। এমনকি অনেকে খেদ ঝেরে বলেছেন, এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে?__ নায়েবে আমীর সাহাবাবিদ্বেষী!

সাহাবাবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে যাঁরা কঠোর আন্দোলন ও বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের মাঝে চরমোনাই শীর্ষ কাতারে থাকবে। সে চরমোনাই তথা নায়েবে আমীরকে সাহাবাবিদ্বেষী বানিয়ে ট্রল করাটা একধরণের মুর্খতা।

মন্তব্য করুন