

বিশেষ প্রতিবেদন-
ওমর ফারুক মারুফ
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোলঘেষে অবস্থিত বাংলাদেশের স্বনামধন্য দ্বীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মাদানীনগর ঢাকা । উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের নিখাদ আদর্শ ও চেতনা লালনকারী দৃষ্টিনন্দন এই দ্বীনী প্রতিষ্ঠানটি আজ হাজারো পথভোলা মানুষের ধর্মীয় চেতনার বাতিঘর। অসংখ্য বিপথগামী মানুষ এই দ্বীনী দূর্গের কোমল পরশে আত্নিক উৎকর্ষের ছোঁয়া পেয়েছে। সারা বছর এখানে ইলমে নববী চর্চার পাশাপাশি আত্নপরিচর্যার বিষয়টিও সযত্নে আঞ্জাম দেওয়া হয়। তাই প্রত্যেক শুক্রবারে এই মাদ্রাসার তত্বাবধানে বিভিন্ন মসজিদে স্বল্প পরিসরে মাসিক ইসলাহী জোড়ের আয়োজন করা হয়, এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর এখানে বিস্তর পরিসরে বার্ষিক ইসলাহী জোড় আয়োজন করা হয় ।
ইনশাআল্লাহ এ বছরও আগামি ২১,২২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই মাদ্রাসার ৩২তম ঐতিহাসিক বার্ষিক ইসলাহী জোড়। দু’দিনব্যাপী এই জোড়ে অংশ নিতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, জামালপুরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইতোমধ্যেই মাদানীনগরে আসতে শুরু করেছেন। এদিকে দূর থেকে আগত মেহমানদের থাকা-খাওয়া ও গোসলসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলাহী জোড় ব্যবস্থপনা কমিটি। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে মাদ্রাসার ক্যাম্পাস ও অতিথিশালা। বৃহস্পতিবার সকালে আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে জোড়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
এরপর সারাদিন ইসলাহী নসীহত, তালীম, যিকির-আযকার ইত্যাদির মধ্যদিয়ে সময় কাটাবেন মুসল্লিরা। শুক্রবারও দিনভর বিভিন্ন আত্নশুদ্ধিমূলক বয়ান-নসীহত চলবে। এরপর রাত সাড়ে নয়টায় আখেরী মুনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে দুই দিনের ইসলাহী জোড়। প্রতিবারের ন্যায় এবারো ইসলাহী জোড়ে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করবেন বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী ইলমী প্রানকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দের স্বনামধন্য মুহাদ্দিস ও ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ইসলামী অরাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সদর ও শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর সুযোগ্য সাহেবজাদা, আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী।
পাশাপাশি জোড়ে বয়ান রাখবেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী, মুনাযিরে আযম মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী এবং মাওলানা তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জীসহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও পীর- মাশায়েখগন। উম্মাহর ঐক্য-সংহতি ও আত্মীক উৎকর্ষের লক্ষ্যে গতানুগতিক মাহফিলের উর্ধ্বে ওঠে ব্যতিক্রমী চিন্তধারায় ইখলাস ও তাকওয়ার সমন্বয়ে দাওয়াত, তালীম, তাযকিয়ার মিশনকে সামনে রেখে বত্রিশ বছর আগে এই জোড়ের আয়োজন করেছিলেন বাংলাদেশের ক্ষণজন্মা মনীষীদের অন্যতম মুসলিহে উম্মাহ শায়খ ইদরীস সন্দ্বীপী রহ.।
বহুপ্রতিভাধর প্রচারবিমুখ এই ব্যক্তিত্বের রয়েছে অনন্য অমর কীর্তি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মাদানীনগর তাঁর উজ্জ্বল কীর্তিসমূহের অন্যতম। মাদানীনগর ছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রায় দেড়শতাধিক দ্বীনী মাদরাসা। তাছাড়া সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন সতন্ত্র একটি শিক্ষাবোর্ড।
দারুল উলূম মাদানীনগর এবং হযরতের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাবোর্ড ও মাদরাসা সমূহের বর্তমান দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরই সুযোগ্য সন্তান হাফেজ মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দ্বীপী। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, শায়খ সন্দ্বীপী রহ. ছিলেন ঐ সকল মনীষীদের একজন যারা বাংলাদেশে বহুমত ও পথের অন্তরালে একই সঙ্গে দাওয়াত, তালীম, তাযকিয়ার সমন্বয়ে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।