
“বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ড” চরমোনাইভিত্তিক একটি দ্বীনি মেগা-সাইজ প্রতিষ্ঠান। চরমোনাই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত পাঁচ মিশনের একটি।
৬৮ হাজার গ্রামে ৬৮ হাজার তালীমুল কুরআন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ ফজলুল করীম রহঃ প্রকল্পটি শুরু করেছিলেন। বর্তমানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই। আর নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মরহুম পীর সাহেব (রঃ) হুজুরের কনিষ্ঠ সাহেবজাদা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ নূরুল করীম কাসেমী।
সারাদেশ ব্যাপী এ বৃহৎ প্রকল্পটির সার্বিক তত্ত্বাবধান করে একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি। আর আমীরুল মুজাহিদীন হচ্ছেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম হাফিজাহুল্লাহ, নায়েবে আমীরুল মুজাহিদীনের পদ অলংকৃত করছেন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম হাফিজাহুল্লাহ।
দেশে কুরআন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ পর্যন্ত মোট কতগুলি মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে, তার সঠিক তথ্য আমার ইয়াদে নেই। তবে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজারের কম নয়। নথি দেখে সঠিক বলা যাবে। এর মধ্যে মাঝারি ও বৃহত্তর পরিসরে মাদ্রাসা রয়েছে শত শত। অবশ্য দাওরা পর্যন্ত মাদ্রাসাগুলো বেফাকের আওতাভুক্ত। এর সংখ্যাও কয়েক ডজন।
বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের দেশব্যাপী সুবিস্তৃত কুরআন শিক্ষাকেন্দ্রিক দ্বীনি কর্মযজ্ঞের প্রচারণা করা আমার মূল উদ্দেশ্য না, তবে চরমোনাই তরিকার সমর্থক শুভানুধ্যায়ী ও ইসলামী আন্দোলর বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের বরাবরে কিঞ্চিত ধারণা দেয়াই এ লেখাটার উদ্দেশ্য।
তালীমুল কুরআন ও কিরআতুল কুরআন এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু মক্তব মক্তব বলে যারা বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের কার্যক্রমকে ছোট করে দেখেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু এদের শব্দচয়ন দেখে কারোই ভালো লাগবে না। এরা বদের হাড্ডি। পারলে কয়েকটা করে দেখাও তো বাছারা! মজার ব্যাপার হচ্ছে, যিনি বা যারা এমন কুৎসিত মানসিকতা নিয়ে চরমোনাইর দ্বীনি মিশনগুলো নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন তারাও কিন্তু মক্তবের শিক্ষক। হয়তো একটু বড় টাইপের মক্তব। যাদের অনেকেরই একটি মক্তব প্রতিষ্ঠা করার মুরোদ নেই। তবে বাকোয়াজ করতে ওস্তাদ।
বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা বোর্ডের হেডকোয়ার্টার হচ্ছে চরমোনাই। তাদের উদ্যোগে ঢাকায় এ বছরে এমন একটি প্রোগ্রাম হতে যাচ্ছে যা দেখে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে উঠছি।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছে “নেসাবে তা’লীম ও ওলামায়ে কেরামের ভাবনা” শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার। চরমোনাই মাহফিল শুরুর ঠিক পূর্বের দিন এমন একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন যারা করেছেন, তারা যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলা যায়।

প্রোগ্রাম আয়োজনের পোস্টার
দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ইতোপূর্বে যারা দাওরা ফারেগ হয়ে এসেছেন, তাদেরকে নিয়ে একটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে। তাঁদের একটি সংগঠন রয়েছে, যার নাম- “ফুযালায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ”। মূলতঃ এর সদস্যরাই এ সেমিনারের প্রাণশক্তি।
এ সেমিনারটিতে সম্মানিত মেহমান হিসেবে যোগ দিবেন দেওবন্দেরই উস্তাযবৃন্দ। যারা জগতসেরা মুফতী, মুহাদ্দিস, মুফাসসির । ওয়ার্ল্ড ফেমাস ডায়নামিক স্কলার। অন্যান্য মেহমানরাও বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম।
প্রচারিত পোস্টারে উল্লেখিত দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে আমন্ত্রিত সম্মানিত ৬জন অতিথি হলেন-
-আল্লামা হাবীবুর রহমান আ’যমী, সিনিয়র মুহাদ্দিস
-আল্লামা আবদুল খালেক সাম্ভলী, নায়েবে মুহতামিম
-আল্লামা আমিন পালনপুরী, সিনিয়র মুহাদ্দিস
-আল্লামা মুজিবুল্লাহ কাসেমী, সিনিয়র মুহাদ্দিস
-আল্লামা মুনির উদ্দিন নকশবন্দী, নাযেমে দারুল ইকামা
-আল্লামা রাশেদ আ’যমী, সিনিয়র মুহাদ্দিস।
তাঁরা এ সেমিনারে যোগ দিয়ে মূল্যবান নসীহত প্রদান করবেন। অতঃপর বেলাশেষে সদরঘাট থেকে চরমোনাইগামী লঞ্চে আরোহন করবেন মাহফিলে যোগ দিতে। তাঁরা পালাক্রমে চরমোনাইয়ের স্টেজে বসে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষকে নসীহত প্রদান করবেন। ইনশাআল্লাহ।আলহামদুলিল্লাহ।
তবে এরপরেও কতক জ্ঞাণপাপী হয়তো বরাবরের মত বলবেন- চরমোনাইওয়ালারা কওমীর প্রতিনিধিত্ব করে না। অথচ তাঁদের দেওবন্দি উস্তাযগন প্রতি বছর চরমোনাইর আতিথ্য গ্রহণ করে মাহফিলে বয়ান করে যাচ্ছেন। তাঁরা কি তাহলে ভুল জায়গায় যাতায়াত করেন? আসলে সমালোচকরা চটকদার মন্তব্য করে বাজারে থাকতে চায়। এরা আসলে গুরুমারা শিষ্য।
কওমীর সূতিকাগার হিসেবে দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে যাদের এমন মজবুতি সম্পর্ক, তারা নাকি এখনো ‘কওমী’ হয়ে উঠেননি!
এবারে একটি আধ্যাত্মিক জবাব দিতে হচ্ছে, কবর- হাশর-নশরে এমন কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে কি? আপনি কওমী কি-না! নিশ্চয়ই নয়। সুতরাং চরমোনাইওয়ালাদের তোমাদের দেখানোর জন্য ‘কওমী’ হবার খায়েশও নেই। কওম কওমী নিয়েই তাদের চলাফেরা। তোমরা বললেও… না বললেও!
এম শামসুদদোহা তালুকদার। লেখক, এক্টিভিস্ট, বিশ্লেষক