

ছাকিবুল ইসলাম কাসেমী
মহল্লার সবচেয়ে বেয়ারা ছেলেটাকে কোথায় ঠিক করা যায়? ভাই, তাবলীগে পাঠিয়ে দেন৷ মা-বাবার অবাধ্য সন্তানটাকে কোথায় ভদ্রতা শেখানোর চেষ্টা করা যায়? জামাতে পাঠিয়ে দেন৷ পড়াশোনায় অমনোযোগী ছাত্রটিকে কীভাবে মনোযোগী করে তোলা যায়? তাবলীগে কিছু সময় কাঁটিয়ে আসতে বলেন ! এলাকার ত্রাস যুবকটিকে কীভাবে বদলানো যায়? চিল্লায় পাঠিয়ে দেন৷ ওর নেশার ভূত কীভাবে দূর করা যায়? কাকরাইলে পাঠিয়ে দেন ৷ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে এসেতো আবারও নেশার আড্ডায় চলে যায়, কী করা? এবার কিছুদিন আল্লাহর রাস্তায় সময় লাগিয়ে আনেন৷ আর যাবে না ইনশাআল্লাহ৷
আরও পড়ুন- ইউরোপের ডাক্তার
মাদরাসায় পড়ে, কিংবা দাওরা ফারেগ হয়েছে ; কিন্তু তৃপ্ত আমলী জিন্দেগীর স্বাদ পাচ্ছে না? কী করা যায়! চিল্লা বা সালের ইহতেমাম করেন , উম্মার দরদী এই মেহনতে নিজেকে জড়িয়ে নেন; আমলী স্বাদের নতুন ভুবন উন্মোচিত হবে৷ স্বস্থির জীবনের চরাচর! ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, চাকুরে, ব্যবসায়ী, এম পি, মন্ত্রী যেই নিষ্কন্টক একটু ঈমানী আবহে সময় কাটাতে চায় , তাহলে কোথায় যাবে? একটু মারকাজে চলুন৷ ওখানে হৃদয়ের খোরাক আছে৷ দুনিয়ার সব ঝঞ্জাল মুক্ত নিটোল পরিবেশে অপার্থিব স্বাদে একটু সময় কাটানোর সুযোগ আছে৷ বৈষয়িক জীবনের জরাগ্রস্ততা মুক্ত ঈমান আমলের শাহী সৌরভে তৃপ্ত হওয়ার আয়োজন আছে৷
দুনিয়ার ময়লা মুক্ত দীনি মুগ্ধতায় সিক্ত এমন স্বাপ্নিক পরিবেশ আরো আছে ; চরমোনাই, উজানি, ঢালকানগড়,মাদানিনগড় প্রভৃতি৷ এসব কেন্দ্রও দেশ ও মানুষকে দিনরাত ঐশী আলো ও শুদ্ধ সৌরভ সরবরাহ করছে৷ লক্ষ লক্ষ মুসলমানের দীনি খোরাক যোগাচ্ছে৷ কিন্তু তাবলীগের মারকাযগুলোতে বিনয়াবনত ভালোবাসার ঐশ্বর্যমণ্ডিত এক স্নিগ্ধ চাঁদ অষ্ট্রপ্রহর একটু ভিন্নভাবে জোছনা ছড়াচ্ছে! এখানে দলান্ধতা নেই৷ স্বার্থচিন্তা নেই৷ পরিচয়প্রহসন নেই৷ ছোটবড় বিভাজন নেই৷ ধনী গরীব গোলমাল নেই৷ শুধু ইলম ও আমলের কথা৷ কাজ ও গুণের কথা৷ নি:স্বার্থ কল্যাণচিন্তার জান্নাতী প্রতিযোগিতা!
গত প্রায় শত বৎসরের ইতিহাসতো তাবলীগের মেহনত কে এমন একটি আস্থাভাজন আমলেই পরিণত করেছিল৷ দুশ্চিন্তা মুক্ত মিলনকেন্দ্র রূপেই গড়ে তুলেছিল৷ যে যাই করুক, যেই পথেই চলুক, যেই মাযহাবই মানুক এখানে এসে ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ হতে সক্ষম হতো! নির্মল ঈমানী ও আমলী জিন্দেগীর সন্ধান খুঁজে নিতে পারতো! এক নতুন তৃপ্ত জগতের সাথে, পারলৌকিক প্রস্তুতির স্বস্থির ভূবনের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতো৷ দীনি জীবনের সাথে দীনি প্রতিষ্ঠানের সাথে রক্তে মাংশে মিশে যেত৷ আলেম হওয়ার বা বানানোর স্বপ্নবিভোর হয়ে পরতো৷ আলেমের কদরে দিল আবাদ হয়ে উঠতো৷
আলেমের প্রতি বিমূগ্ধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জীবন্ত উপমা হয়ে উঠতো ছেট বড় প্রতিটি সাথী৷ এভাবে দাওয়াতী মিশন একটি প্রাণবন্ত নিবেদিত দীনি দীক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠে৷ তাবলীগের মেহনত সব মুসলমানের আস্থার বাতিঘর হয়ে উঠে! প্রেমের ঘরে দ্রোহের আগুন! সাধারণ সাথীরা কাজ করতো৷ শিক্ষিত ছাত্র শিক্ষকগণ কাজ করতো! নতুন পুরাতন দায়ীগণ কাজ করতো৷ সব শ্রেণী পেশার মানুষই পরম সুখে এই মসজিদ বান্ধব প্রেম নির্ভর ঈমানী মেহনতে শামিল হতো! কে আমীর কে মামুর এটা খুব বড় ব্যপার ছিল না৷ কে আঞ্চলিক? কে থানার? কে জেলার? কে বিভাগের আমীর এসব নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যেতো না! এক নি:স্বার্থ পবিত্র সফরের ফুলভরা তরীতেই সবাই চড়ে বসতো! এখানে খেয়ে নয় খাইয়ে সুখ আসে৷ খেদমত নিয়ে নয় খেদমত করে ভালো লাগে৷ আমীর হয়ে নয় আমীর বানিয়ে আনন্দ লাগে ৷ নিজে বেঁচে নয় ভাইকে বাঁচাতে মনে আশা জাগে ৷ এসবই ছিল এই মেহনতের প্রধান পরিচয়৷ মূল চালিকা শক্তি৷ স্বাভাবিক গতিবিধি৷
কিন্তু প্রচণ্ড এক সাইক্লোন সব তছনছ করে দেয়৷ ফুল ও কাঁটার দাস্তান! মাওলানা সাদ হা,হু,৷ তাবলীগের প্রবাদ প্রতিম মুরূব্বী৷ মাওলানা তারীক জামীলের পরেই যার বয়ানের জন্য উম্মত প্রতিক্ষমান থাক তো! অস্থির হয়ে উঠতো তার ঝরঝরে কথা শোনার জন্য৷ ইলিয়াসী রূহের সৌরভ যেন ছড়িয়ে পড়তো চারদিকে৷ সাধারণ মানুষের ছিল অন্ধ মুগ্ধতা৷ বুঝমানদের ছিল কথার গভীরতার প্রান্ত স্পর্শ করে তৃপ্ত সুখে ডুবে থাকা৷ আয়াত হাদিসের দরদী ও ফিকরী ব্যাখ্যা শুনে কিংবা উপস্থাপন পেয়ে উলামাদের ইলহামী উলূমের সৌরভ খোঁজা৷ এতসব ঐশ্বর্যে পূর্ণ ব্যক্তিটি হঠাৎ করেই পাল্টে যান৷ আদব ইহতেরাম মুহাব্বাতের সব পাঠ ভুলে যান ৷ উলামাদের সাথে দূরত্বের পাল উঠান ৷ ভারত উপমহাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের কেন্দ্রীয় ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দকেও চ্যালেঞ্জ পাঠান।
বেশ কয়েকবার আলোচিত ভুল ত্রুটি থেকে তওবার ঘোষণা দিলেও তিনি আবারও পূর্বের ভুলে ফিরে যান৷ ঐতিহ্যমণ্ডিত দাওয়াতের মেজাজ, আদর্শ,ঐতিহ্য ও চিন্তাবিস্মৃত পথের পথিক হয়ে যান৷ বংশ অহমিকা নেতৃত্ব ও শূরাশূণ্য বক্র ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে যান৷ দেহাতী মেওয়াতী চক্রের উপর ভর করে নিযামুদ্দীন ও দারুল উলুম দেওবন্দের সকল ইলমী ও আমলী মুরুব্বীদের সাথে উপেক্ষার বিকৃত সংস্কৃতি চর্চায় অভ্যস্ত হয়ে যান৷ লন্ডন আমেরিকাসহ পৃথিবীর দূর দূরান্তের নানান দেশে দফায় দফায় দীর্ঘ দীর্ঘ প্রমোদ সফর করলেও একঘন্টার দূরত্বে সমস্ত দীনি আমল ও রিজালের দরদী পাহারাদার ও আমানতদার দারুল উলুম দেওবন্দে গিয়ে ধরিয়ে দেয়া ভুলগুলোর বিণীত স্বীকৃতি দিয়ে আপন ব্যাখ্যা বর্জিত আকাবির বর্ণিত শুদ্ধ পথে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করার একমাত্র সমাধানের কাঙ্ক্ষিত সমস্ত উম্মার প্রতিক্ষিত পথ কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে যান ৷
ফলশ্রুতিতে দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দায়ীদের বিশাল কাফেলা বিভক্ত হয়ে পড়ে ৷ তার অনুসারীগণ এতায়াতী নাম ধারণ করে৷ শীর্ষ সব দীনি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি থেকে দূরে যেতে থাকে৷ মতদ্বন্দ থেকে মতবিরোধ ; এমনকি রাজনৈতিক জিঘাংসার সব ঘৃণ্য সৃংস্কৃতিও একসময় লজ্জিত হতে থাকে৷ রক্ত মাংশে একাকার ভালোবাসা একসময় রক্তারক্তিতে রূপ নিতে থাকে৷ হতবাক মুসলিম বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে৷ ভিতর ও বাহিরের ‘অন্যরা’ পুঁজিহীন বিজয়খেলা খুব তৃপ্তির সাথে উপভোগ করে৷ এখানের লক্ষভ্রষ্ট ইমেজে চর্চিত গল্পের ভুল ম্যাসেজগুলো তারা তাদের আপন অঞ্চলে সরবরাহ করতে থাকে ৷ মাওলানা সাদ সাহেব কাছ থেকে নির্ভার ও নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে এসব ভয়াবহ দূর্ঘটনার নিরব ও তৃপ্ত স্বাক্ষী হতে থাকে ! এমনকি যথারীতি এসব পঙ্কিলতার সদয়(!) তত্বাবধান করতে থাকে৷
সারা পৃথিবী বিশ্ব মঞ্চে গড়ে উঠা গত শতাব্দীর একটি অনবদ্য ভালোবাসার সুদৃঢ় প্রাসাদকে অসহায়ভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখে৷ বধ্যভূমির ফুলমালঞ্চ! পরিস্থিতি অনেকটাই বেশামাল হয়ে গিয়েছিল৷ দূরের ফানুশ আমীরের কারণে আপন ঘরে আগুন লেগেই চলছিল৷ সারা জীবনের নেতৃত্ব দানকারী উলামাদেরকে অবুঝ এতায়াতী ভাইগণ পাশ কেটেই চলছিল৷ সাধারণ তাবলীগী সাথীদের পক্ষ থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দালীলীক যুদ্ধ পরিচালনাকারী বিদগ্ধ আলেমদের বিরুদ্ধে আত্বঘাতী বিষোদগার করেই যাচ্ছিল ৷ বাকবিতণ্ডা বেয়াদবী থেকে নিয়ে হাতাহাতি এমনকি রক্তারক্তি পর্যন্ত গড়ালো৷ ১ডিসেম্বর ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায় রচিত হল৷
বিপথগামী এতাতী ভাইদের মাধ্যমে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক ও সাধারণ সাথীগণ আক্রান্ত হলো৷ খুন হলো৷ দেশ জাতি ও বিশ্ব সব দেখল৷ কেউ ব্যাদনাহত হল ৷ কেউ আনন্দাপ্লুত হল৷ রক্ত খুলে দেয় রূদ্ধদ্বার ! সব আঁধারের পেছনেই আলো থাক৷ এখানেও ছি৷ দিনে দুপূরে খুনাখুনী করে এতাতী ভায়েরা ফুঁসে উঠা তাওহীদী জনতার কিংবা মামলা-ডাণ্ডার ভয়ে গাঁ ঢাকা দিল৷ দ্বীপাক্ষিক সঙ্কট অল্প সময়ের জন্য একপক্ষীয় হয়ে উঠল ৷ প্রতিপক্ষহীন ময়দানে উলামায়ে দেওবন্দের নেতৃত্বে রক্তস্নাত দায়ীগণ বধ্যভূমিগুলো উদ্ধারে তৎপর হলো৷ তালাবদ্ধ অসংখ্য মারকাজ খুলে গেল৷ অনেক এতাতী সাথীগণ ভুল বুঝতে পেরে হাওমাও করে কান্নাকাটি করে হাজার হাজার মানুষের সামনে উলামায়ে কেরামের হাতে তওবা করল৷
অন্যান্যদের ঔদ্ধত্য হ্রাস পেল ৷ দৃশ্যপট পাল্টে গেল ৷ ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আপন মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করল ৷ উলামায়ে কেরাম সময় আরও বাড়িয়ে দিতে লাগল ৷ দূরত্ব অনেকটা কমে আসল ৷ সরকারী মহলের সচেতণতা বাস্তবদৃষ্টি আরও স্পষ্ট হল ৷ নির্বাচন হল ৷ নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধর্ম প্রতিমন্ত্রীসহ অনেকেই সঙ্কট নিরসনে আন্তরিক উদ্যোগী ভূমিকা রাখল ৷ দারুল উলুম দেওবন্দে যাওয়ার যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার যেকোনো শঙ্কায় পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত এল ৷ তবে দেওবন্দ না গিয়েও ‘সম্ভাব্য দেওবন্দ ফেরত সিদ্ধান্তে’র পূর্ণ বাস্তবায়ন হল ৷ মাওলানা সাদ সাহেব ছাড়াই ইজতেমার সিদ্ধান্ত হল ৷ ইতিবাচক পথচলায় একটি বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হল ৷ সবাই মিলে একটি ইজতেমাই করবে, এই ব্যাপারে প্রশাসনের অনড় সিদ্ধান্ত ঠিক রইল ৷ এতাতী নেতৃবৃন্দের নানান আপত্তির খণ্ডন করে উভয় পক্ষ পরিশেষে একমত হল ৷ এই ফায়সালার পক্ষে বিপক্ষে নানান কথবার্তা হলেও বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবেই দেখছিলেন অধিকাংশ আলেম ও দায়ীগণ ! সম্ভাবনার হাজার দুয়ার তাই খুলতে থাকল ৷
জয় শুদ্ধ প্রেমেরই হয়! আমরাও তাই ভাবছি৷ স্বপ্ন দেখতে সমস্যা কোথায়! কত আগুনইতো নিভে যায়৷ কত বধ্যভূমিওতো উর্বর হয়ে উঠে৷ কত শুকনো জমিনেওতো পানি ভরে উঠে৷ কত খরা-দূর্ভিক্ষের পরেওতো শস্য-শ্যামল সবুজ পরিবেশ ফিরে আসে৷ কত যুদ্ধইতো শান্তির ফুল হয়ে ফোটে৷ কত খুনাখুনিইতো গলাগলিতে বদলে যায়৷ কত ভয়ঙ্কর স্বার্থের সংঘাতওতো রক্তের সম্পর্কে পরিণত হয়৷ তাহলে আমরা পারবো না কেন? এখানেতো কোন বৈষয়িক স্বার্থচিন্তা নেই৷ কোন জমিজমার দলাদলী নেই ৷ রাজনৈতিক জিঘাংস নেই৷ দুনিয়ার কোন নষ্ট ভাবনা নেই৷ ভাই ভাইয়ের বিষয়৷
দিন রাত মাখামাখী নিবেদিতপ্রাণ দীনি মেহনতের বিষয়-আসয়৷ সত্যকে ধারণ করার, গ্রহণ করার চলমান প্রত্যয় ৷ তাহলে আসুন সাদ সাহেবের অনুসারী দাবীদার প্রিয় ভাই! সমাগত বিশ্ব ইজতেমার ঐক্যবদ্ধ সূত্র ধরে আবারও নিজেদের দূরত্ব মিটিয়ে দেয়ার আন্তরিক চেষ্টা করি ৷ আবারও এক দস্তরখানায় উম্মার চিন্তা ও দরদ নিয়ে বসি ৷ আবারও এক আমলে নেক মানসে বসি৷ “তুড়” কে ভেঙ্গে দেই৷ “জুড় ” কে আপন করি ৷ আমাদের বিভাজনলোভি ইবলিসদের পদানত করে দিই, স্বপ্ন ভেঙ্গে দিই৷ উম্মার ভাবনায় পরীক্ষীত দরদী এই কাফেলাকে রক্ষা করি ৷
দরদী অভিভাবক! প্রিয় ভাই! দারুল উলুম দেওবন্দ সবার আপন অভিভাবক, এই বিষয়টি হৃদয়ে আবারও ধারণ করুন৷ এযাবত দাওয়াতের মেহনত কে প্রশ্নমুক্ত ও বাতিলদের থাবা মুক্ত করতে কত সহস্র প্রবন্ধ নিবন্ধ ও বই পত্র উলামায়ে দেওবন্দ লিখেছে ; একটু খুঁজে দেখুন৷ কাকে পর ভাবুন! আবারও চিন্তা করুন৷ গত দেড়শ বছরে দেওবন্দ কোন হক দল বা ব্যক্তিকে বাতিল বলেনি, কিংবা কোন বাতিল কে কখনও হক বলে নি, এবং দীনের ব্যপারে কোন রকম অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারীতাকে মেনে নেয় নি৷ কোন অশুদ্ধ বা শঙ্কাপূর্ণ বিষয়ে কখনও আপোষ করে নি৷ আপনি এঅঞ্চলের দীনি জ্ঞান ও কর্মের অভিভাবক দেওবন্দের ইতিহাস কে নিরপেক্ষভাবে পাঠ করুন ৷ পর্যবেক্ষণ করুন৷ তারপর প্রেম ও শুদ্ধতার তাজা গল্পে আবারও নিজেকে উজ্জীবিত করুন৷ কোন ব্যক্তিপ্রীতি নয় কুরআন ও সুন্নাহপ্রীতি, উলামায়ে হক্কানীর আদর্শিক দীনি অনুভূতিতে আবারও নিজেকে সাজিয়ে তুলুন ৷ রাঙ্গিয়ে তুলুন৷ আমরা আপনার অপেক্ষায় আছি ৷
হয়ত নিজেই আলোকিত প্রেমের বলে বিশুদ্ধ ঐক্যের পথে চলে আসুন৷ নতুবা জাতির অভিভাবক আলেমদের কাছে নিজেকে সোপর্দ করুন৷ তারা আপনাকে আপনাদেরকে দুধবিধৌত, গোলাপসুবাসিত পবিত্র সরোবরে পরম ভালোবাসায় আবারও অবগাহণ করাবেন৷ পরম মমতায় দাওয়াতের মোবারক মেহনতে আবারও সহযোগিতামূলক সহযোদ্ধা বানিয়ে পথ চলবেন৷ ইলম আমল তলব তড়প ও দরদের সব ঈর্ষণীয় ঐশ্বর্যে আবারও সমৃদ্ধ করবেন৷ বিশ্ব ইজতেমা! আবারও নির্ভয় প্রেম ছড়িয়ে দাও! আবারও সব ভেদ রেখা মুছে দাও! আবারও তুমি লক্ষ কোটি জনতার আস্থার বাতিঘর হয়ে যাও! দেশ বিদেশের সব বাগান আবারও ফুলে ফলে ভরে দাও! সবার শঙ্কাকে সম্ভাবনা ও ভালোবাসার প্রতিশব্দ বানিয়ে দাও ! দেশীয় বিভেদ মিটিয়ে দাও৷ বাহিরের মাসআলাগুলোও হল করে দাও৷
বিশ্ব মুসলিমের আশা-ভরসা ও স্বপ্ন-স্বাদের মাকবুল ও মাবরুক দীনি মাজমা হিসাবে আবারও তুমি তোমার প্রমাণ পেশ করে দাও। দয়াময় মহান প্রভুর কাছ থেকে আবারও নিষ্কন্টক কুসুমাস্তীর্ণ ঈমানী ও আমলী মেহনতের ময়দান হিসাবে তুরাগপাড় কে কবুল করিয়ে নাও ৷ হে মালিক! সব ভেদাভেদ ও অসঙ্গত চিন্তা ভুলে এক সামিয়ানার নিচে নেক হয়ে প্রেম নিয়ে আবারও বসার তৌফিক দাও৷ যৌথ বিশ্ব ইজতেমার বরকতে তোমার নির্বাচিত বান্দা উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে সব সঙ্কির্ণতার উর্ধ্বে উঠে হারিয়ে যাওয়া সেই দাওয়াতের সোনালী মেহনতের রাজপথে সবাইকে ইখলাসের সাথে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দাও!
লেখক-
শাইখুল হাদিস, জামেয়া ফারুকিয়া সোনারগাঁ৷
খতীব, নানাখী কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ ৷