
এম সালমান সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
অবিলম্বে যাদুকাটা নদীর পাড় কাটা বন্ধ করে যাদুকাটা নদীকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে যাদুকাটা নদী রক্ষা আন্দোলন। বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন থেকে তারা এই দাবি জানান।
যাদুকাটা নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন এবং সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার ফলে ২০ টি গ্রামের বাড়িঘর হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে অনেক বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তা ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২০ টি গ্রাম রক্ষা করার জন্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রাম বাঁচাতে ইজারা প্রথা বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, যাদুকাটা নদীর পরিবেশ রক্ষা করতে হলে এই নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সনাতন পদ্ধতিতে পরিবেশ সম্মত উপায়ে কমিউনিটি ভিত্তিক বালু পাথর আহরণের সুযোগ করে দিতে হবে।
যাদুকাটা নদী রক্ষা আন্দোলন এর আয়োজনে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন যাদুকাটা পাড়ের বাসিন্দা কলামিস্ট গোলাম সারওয়ার। সভাপতির বক্তব্যে গোলাম সারওয়ার বলেন, আমরা ইজারাদার বা শ্রমিক কারো প্রতিপক্ষ নই। আমরা সিস্টেমের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি। এই ইজারা প্রথায় সরকার হয়তো সামান্য কিছু টাকা পায়, কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সুনামগঞ্জ সমিতি সিলেটের সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সুনামগঞ্জ সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা সিলেট জেলার কোষাধ্যক্ষ জাফর সাদেক শাকিল, রোটারি ক্লাব অব সিলেট মিডটাউনের সভাপতি সেলিনা চৌধুরী, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকায়স্থ টিটু, ঘাগটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক রায়হান উদ্দিন, সারোয়ার জাহান, দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার হাবিব সরোয়ার আজাদ, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সদস্য আসাদ জাহান ও নারজেল হোসেন, ছদরুল হাসান, ছড়াকার কবির আশরাফ, ইঞ্জিনিয়ার আকাঈদ হোসেন, নাবিদ হাসান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিগত বিশ বছর যাবত যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার ফলে নদীর আয়তন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে এই নদী ছিল মাত্র ৫৭ ফুট প্রশস্ত। পাড় কাটার ফলে এখন কিছু জায়গায় নদীটি এক কিলোমিটারের চেয়েও বড় হয়ে গেছে। আশেপাশের অনেক ফসলি জমি ও বাড়ি ঘর নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। তাই পাড় কাটা বন্ধের জন্য এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
এ নদীতে দুটি বালুমহাল রয়েছে যা যাদুকাটা—১ এবং যাদুকাটা—২ বালুমহাল নামে পরিচিত। যাদুকাটা—১ বালুমহালটি তাহিরপুর উপজেলার চালিয়ারঘাট মৌজায় এবং যাদুকাটা—২ বালুমহালটি বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর মৌজার চালিয়ারঘাট, লাউর এবং ইকরাটিয়া মৌজায় অবস্থিত।
এ বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদানের ফল বালুমহাল ও বালুমহালের বাইরে থেকে যান্ত্রিক উপায়ে বালু উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্র শিমুল বাগান, বারেক টিলা, শাহ আরেফিন সেতু, বিজিবি ক্যাম্প, লাউড়েরগড় বাজার, বিন্নাকুলী বাজার, ইসকন মন্দির, অদ্বৈত আখড়া, ঘাগটিয়া, সাহিদাবাদ, লাউড়েরগড়, গড়কাটি, মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া, মানিগাঁও, কুনাটছড়া, সোহালা, মিয়ারচর ও সত্রিশ গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
এ বছর নদী ইজারা না দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় বেশ কিছুদিন ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ছিল। সর্বশেষ নদীর পাড় না কাটা ও ড্রেজার মেশিন, বোমা মেশিন ব্যবহার না করার শর্তে বালুমহাল দুটি ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারা শর্ত লঙ্ঘন করে এখন যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

