নান্দাইল কালিয়াপাড়া বাজারে দোকান বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ।

প্রকাশিত: ৬:৩০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৫, ২০২৫

আকরাম হোসেন নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কালিয়াপাড়া বাজারে অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর সম্প্রতি নতুন করে ২০২টি দোকান বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেছেন। তবে বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অনেক আবেদনকারী।

সূত্র জানায়, আবেদনকারীদের একজন করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ডাকা হচ্ছে। কার্যালয়ের প্রধান ফটকের কেচি গেট বন্ধ করে নেওয়া হয় ভেতরে। এমনকি সাক্ষাৎ প্রার্থীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটাও বাইরে রেখে প্রবেশ করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় দায়িত্বে আছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের অফিস সহকারী হাসমত আলী।

অভিযোগ রয়েছে, দোকান বরাদ্দ পেতে সাক্ষাৎ-এ অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের প্রায় সবার’ই কমন একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়, যেগুলোর ধরন ছিল অনেকটাই হুমকিমূলক ও বিভ্রান্তিকর। প্রশ্নগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:

> আপনি কী ধরনের ব্যবসা করেন?

> কতদিন ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত?

> এর আগে কি কখনো ট্যাক্স প্রদান করেছেন?

> যদি ট্যাক্স না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে জরিমানা করা উচিত — এমন বক্তব্যও শোনা যায়।

> দোকান বরাদ্দ নিতে হলে সরকারি কিছু নীতিমালা মানতে হবে বলে জানানো হয়।

> আরও বলা হয়, দোকান পেতে হলে ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে, যেখানে ভাউচারে দেখানো হবে মাত্র ৩,৫০০ টাকা।

> সবশেষে বলা হয়, এক কথায় হাসমত আলী শর্ত জুড়ে দেন যে, “আমি যেসব প্রশ্ন করছি, সেগুলো কোনো সাংবাদিক বা রাজনৈতিক নেতার কাছে বলা যাবে না।”

এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী, প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের ঘাটতি রয়েছে। প্রার্থীদের মুখ বন্ধ রাখতে এমন হুমকি দেওয়া প্রশাসনিক দায়িত্বশীল আচরণ নয় বলেও মত দেন সচেতন মহল।

উল্লেখ্য যে, ২০০৩-০৪ ইং সালে তৎকালীন ইউএনও কাজী ওয়াছি উদ্দিন একবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু তার বদলির পর বন্দোবস্ত কার্যক্রম আর এগোয়নি। তারপর ২০১৯ ইং সাল থেকে ‘কালিয়াপাড়া বাজার অধিকার রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন অবৈধ দখল উচ্ছেদের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।

এর’ই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ শে জুন (মঙ্গলবার) ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কালিয়াপাড়া বাজার থেকে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ২০৩টি দোকান উচ্ছেদ করেছে উপজেলা প্রশাসন। দিনব্যাপী এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ফয়জুর রহমান।

স্থানীয়দের দাবি, বাজারে দোকান বরাদ্দের নামে যদি অর্থের বিনিময়ে ভাউচার প্রদানের প্রক্রিয়া চলে, তবে তা সরাসরি দুর্নীতির শামিল। বিষয়টি নিয়ে নান্দাইলের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং তদন্ত সহকারে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

এ বিষয়ে নান্দাইলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন