

আশরাফ আলী ফারুকী :
আবু সাঈদের রক্তে ভেজা ১৬ জুলাই আবারও প্রতিধ্বনিত হলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেছেন, “চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক দস্যুতা জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। সমাজ ও রাষ্ট্রের আমূল পরিবর্তনের যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের সন্তানেরা বিপ্লব করেছিল, সে স্বপ্নকে আজ ধূলিস্যাৎ করছে লোভী ও ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী।”
তিনি বলেন, “সোহাগ হত্যাকাণ্ড তার উজ্জ্বল উদাহরণ। রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়ে আজও আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারিনি। কারণ, কেউ পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়তে চায় না, আবার কেউ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।”
আজ বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫ বিকাল ৩টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে “জুলাই বিপ্লব’২৪ এর শহীদ পরিবার ও আহতদের সংবর্ধনা” অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ এবং সঞ্চালনা করেন জয়েন্ট সেক্রেটারী ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম এবং বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারী ড. রেজাউল করীম।
শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ জিল্লু শেখের পিতা হাসান শেখ এবং শহীদ আনোয়ারের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মারুফ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নগর উত্তর সেক্রেটারী মাওলানা মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট মুস্তফা আল মামুন মনির, মুফতী ফরিদুল ইসলাম, জামায়াত ঢাকা উত্তরের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার, মুফতী মোঃ মাছউদুর রহমান, মুফতী নিজামুদ্দীন, মুফতী আব্দুল কুদ্দুস রশিদী, অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আমিনুল হক তালুকদার, আলহাজ আলাউদ্দীন, মাসুম বিল্লাহ, নাজমুল হাসান, হাজী ইসমাঈল প্রমুখ।
প্রধান অতিথি মাওলানা ইউনুছ আহমদ স্মরণ করিয়ে বলেন, “আজকের এই দিনেই ১৬ জুলাই ২০২৪, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা তাঁর, মুগ্ধ, খুবাইবসহ সকল শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।”
প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, “ফ্যাসিস্ট শক্তি এখনও টিকে আছে। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছিল তাদের পতনের নির্ধারিত দিন, কিন্তু আমরা সফল হইনি। ফলে দেশবাসীকে ব্যবসায়ীদের পাথর মেরে হত্যার দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। এ জন্য কি আমাদের জন্ম হয়েছে? গাজায় গণহত্যা চালানো শক্তিগুলো আজ আমাদের দেশেই মানবাধিকার শেখাতে আসছে? যারা গাজায় হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের পা বাংলাদেশে পড়তে দেওয়া যাবে না।”
ড. রেজাউল করীম বলেন, “জুলাই ২০২৪ ছিল নতুন বাংলাদেশের জন্ম। বিপ্লবীদের স্লোগান ছিল ‘We Want Justice’। ইমাম-খতিবরা ন্যায়ভিত্তিক সমাজের কথা বলেছিলেন। ইনশাআল্লাহ, আমরা আগামী নির্বাচনে এক বাক্সে ভোট দিয়ে ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো। জুলাই সনদই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তি হোক।”
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “জুলাই আন্দোলন কেবল প্রশাসনিক রদবদলের জন্য নয়, বরং এটি রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল, এবং নিজস্ব চরিত্র ও মানসিকতা সংস্কারের আন্দোলন। কিন্তু এখনো পুলিশ চরিত্র বদলায়নি—তারা মামলা ও গ্রেফতার বাণিজ্য করে চলছে, যা আমরা মেনে নিতে পারি না।”
তিনি গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “গোপালগঞ্জ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। যারা হাসিনার নামে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদেরকে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি—হাসিনার কোনো প্রেতাত্মাকে আমরা নতুন বাংলাদেশে দেখতে চাই না। হয় ভালো হয়ে যাও, না হয় হাসিনার পথ খুঁজে নাও। হাসিনা গেছে যে পথে, তোমরাও যাও সেই পথে।”