

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার নির্বাচন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি (রবিবার)। নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা চলছে পুরো উপজেলা জুড়ে।
কিন্তু সারাদেশের মধ্যে একটি বিষয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম নির্বাচন হচ্ছে এ পৌরসভায়।
ব্যতিক্রমী বিষয়টা হলো – এ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনের মেয়রসহ বিভিন্ন কাউন্সিলর মিলিয়ে প্রায় ৫৬ জন প্রতিযোগীদের মধ্যে কেহই তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় কোনোরুপ মাইকের ব্যবহার করছেন না। মাইক ব্যবহার না করার বিষয়ে সকল প্রার্থীরা একমত হয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত চুনারুঘাট পৌরসভায় তারা কোন মাইকের ব্যবহার করেননি। বরং তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সম্পূর্ণ ভিন্ন এ বিষয়টি একটি ফেসবুক লাইভে তুলে এনেছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি তার লাইভে এমন ব্যতিক্রমধর্মী নির্বাচন আয়োজন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এমনকি এমন নিয়ম সারাদেশেই করা উচিত বলেও তিনি তার বক্তব্যে জানিয়েছেন।
ব্যারিস্টার সুমন তার লাইভে বলেন – ‘হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট পৌরসভা নির্বাচন আগামী রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভবত এটিই একমাত্র পৌরসভা নির্বাচন যেখানে কোনো মাইকের ব্যবহার নাই। বরং এখানে সবাই পোস্টার এর মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও এত বেশি পোস্টারের পক্ষেও আমি নই। তারপরও মাইকের ব্যবহার না হওয়া একটি বড় উদাহরণ। ধীরে ধীরে আমরা এরকম উন্নতির দিকে যাব।’
সুমন বলেন – ‘সব প্রার্থীরা মিলে প্রশাসনের কাছে একমত হয়েছেন তারা কেউ নির্বাচনে কোন মাইকের ব্যবহার করবেন না। ৫৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউ এখন পর্যন্ত মাইকের ব্যবহার করেননি। আমি দুদিন পর্যন্ত এখানে রয়েছি কিন্তু এই দুদিনে কোন মাইকের শব্দ আমি শুনিনি। বিষয়টি হলো যদি সকল প্রতিদ্বন্দ্বীরা একটি একটি করে মাইকের ব্যবহার করে তাহলে পৌরসভার মানুষজন এখানে থাকতে পারবেন না বরং মাইকের শব্দে তারা সর্বোচ্চ বিরক্ত হবেন। আমি তাই ধন্যবাদ জানাই প্রশাসনের যারা আছেন এবং প্রার্থীরা যারা রয়েছেন বিশেষ করে আওয়ামী লীগের বিএনপি’র এবং হাতপাখার সহ যেসব দলের প্রার্থীরা এই সুনদর কাজটি করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি বলেন – ‘আমি গর্ববোধ করি যে, আমি এই পৌরসভা সন্তান এবং তারা সবাই মিলে আমাদের পৌরসভাটিকে একটি মডেলে রূপান্তরিত করতে পেরেছেন। আমি মনে করি এই মডেলটি চাইলে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা সম্ভব এবং ব্যবহার করা উচিত। কারণ নির্বাচন হলো একটি সেবার মাধ্যমে সেখানে মাইক ব্যবহার করে যদি মানুষের কান আগেই নষ্ট করে ফেলেন, তাদেরকে কষ্ট দেন, তাহলে মানুষের সেবা কিভাবে হবে।’
তিনি তার লাইভে স্থানীয় কয়েকজন সাধারণ মানুষের বক্তব্য নেন তারা সকলেই খুশি এমন একটি ব্যবস্থাপনার কারণে।
তিনি আরো বলেন – “মাইকের ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে অবশ্যই নির্বাচনের খরচ কমবে এবং নির্বাচনের খরচ যত কমবে নির্বাচন প্রক্রিয়া ততটাই সুন্দর হবে। নির্বাচনে যদি অধিক খরচ হয় তাহলে প্রার্থীরা বেশি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এভাবেই আমরা উন্নতির দিকে যাব আস্তে আস্তে এ ধরনের উন্নতি আমাদেরকে একদিন বহুদূরে নিয়ে যাবে।”
প্রসঙ্গত : চুনারুঘাট পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর। এটি বর্তমানে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে, যার মোট আয়তন ৮.১ বর্গকিলোমিটার (প্রায়)। মোট মৌজার সংখ্যা ১১টি, মোট মহল্লার সংখ্যা ১৬টি, মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৯ টি। জনসংখ্যা (২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী) মোট ২৩ হাজার ৯২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫৮৩ জন ও নারী ১১ হাজার ৩৪২ জন। মোট ভোটার সংখ্যা (২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী) পুরুষ ৪ হাজার ৮৯৬ জন ও নারী ৫ হাজার ১৬ জন। শিক্ষার হার ৫৫% (১৯৯১ সালেরর তথ্য অনুযায়ী)।
এ পৌরসভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আছে মহাবিদ্যালয় ১টি (সরকারি), উচ্চবিদ্যালয় ৩টি (বেসরকারি, বালক ২টি ও বালিকা ১টি), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬টি। এর মধ্যে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ২টি, কেজি/একাডেমি/নার্সারি স্কুল ৬টি, সিনিয়র মাদ্রাসা ২টি, বালিকা মাদ্রাসা ১টি, কওমি মাদ্রাসা ২০টি, পাঠাগার ৪টি।
সরকারি অফিস আছে মোট ৩৪টি। স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি (সরকারি), সুস্বাস্থ্য (ব্র্যাক) ১টি, পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্র ১টি, বেসরকারি ক্লিনিক ২টি, পশু হাসপাতাল ১টি, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ১টি, হাঁস প্রজনন কেন্দ্র ১টি, খাদ্য গুদাম ১টি, সার গুদাম ১টি ও হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-অফিস ১টি। এছাড়া আছে সিনেমা হল ২টি, হাট-বাজার ২টি (চুনারুঘাট সাধারণ বাজার ও চুনারুঘাট গরুর বাজার), শিল্প কারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি ৩টি, ওয়ার্কশপ ১০টি, স’মিল ২০টি, ধান/গম ভাঙার মিল ১০টি (প্রায়), ব্রয়লার ১টি, চিড়ার মিল ১টি, ব্যাংক ৫টি, এনজিও অফিস ১০টি, মসজিদ ৩০টি, ঈদগাহ্ ৫টি। মন্দির ৩টি, মাজার ৭টি, শ্মশানঘাট ৩টি, কবরস্থান সরকারি ৩টি ও বেসরকারি ১০টি, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকূপ সংখ্যা ১৫টি, রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতির লাইন ৭ কিলোমিটার, সড়ক বাতি আছে ১৪৮টি।
এ পরিসরে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নয়ন ও পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে চলছে তোরজোড়।