বিশ্বে আমরা লজ্জিত; হয় মিথ্যা প্রমাণ করুন, না হয় পদত্যাগ করুন: পীর সাহেব চরমোনাই

আল জাজিরার প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ৮:৩০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১

দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে আল জাজিরায় যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা শিঁউরে ওঠার মতো। যে ধরনের অপরাধ চক্র গড়ে ওঠার দাবি সেই প্রতিবেদনে করা হয়েছে এবং সেখানে যাদের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে, তা রীতিমতো আতংক জাগানিয়া বলে মনে করেন  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন,  প্রতিবেদনের সব দাবীর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এর অনেক সমীকরণের বাস্তবতা আছে। বিশেষত বিগত দুই দুইটা জাতীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সমীকরণের বাস্তবতা দেশের মানুষ নিজ চোখেই দেখেছে। নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু সরকারগুলো হরহামেশাই নানা অপকৌশলে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধভাবে সংগ্রহ করে। যা স্পষ্ট স্বাধীনতার ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক।

আল-জাজিরায় প্রকাশিত রিপোর্টের ফলে সরকারের হুশ নেই। এ ধরণের একটি রিপোর্টে জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত ও অপমানিত। দেশের মান মর্যাদা বলতে কিছুই বাকি নেই। বিশ্বে আমাদের চরমভাবে হেয় করা হয়েছে। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হয় আল জাজিরার বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করুন, না হয় পদত্যাগ করুন।

তিনি আরও বলেন, তিনি ভালবাসা দিবসের নামে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, দেশে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এধরণের নির্লজ্জতার কারণে। অবাধ স্বাধীনতার নামে যৌনতা, বেহায়াপনাকে বিভিন্নভাবে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব হিজাব দিবসে নারীদের হিজাব পড়ায় উদ্ধুদ্ধ করতে ঢাবি ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বাঁধা ও হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, জাতি হিসেবে ধর্ম কর্ম পালন এবং স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার সকলেরই আছে। এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া যায় না।

৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯ টা হতে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিজয় ও স্বাধীনতার ৫০ বছর; দুর্নীতিমুক্ত টেকসই উন্নয়ন ও নীতি নৈতিকতায় সমৃদ্ধ ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা’।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ও আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মাহনগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষের নাগিরক ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। সরকার নির্বাচন কমিশনের মত একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনে জাতি আবারো অবাক বিস্ময়ে দেখেছে, সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা কিভাবে ভোট দিয়েছে। সরকার মানুষের জান, মাল, ইজ্জত-আব্রু নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এভাবে তামাশার নির্বাচন না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীদেরকে তার দপ্তর থেকে ঘোষণা দিয়ে দিলে দেশ ও জাতির টাকা পয়সা এবং জানমালের রক্ষা হতো।

সম্মেলনে মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমকে সভাপতি, আলহাজ্ব আব্দুল আউয়াল মজুমদারকে সেক্রেটারী করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদকে সভাপতি এবং মাওলানা আরিফুল ইসলামকে সেক্রেটারী করে ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি।

বিশেষ অতিথি মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী বলেন, এ সরকারের আমলে চুরি, ডাকাতি, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, বিদেশে অর্থ পাচার এবং ধর্ষণের উন্নতি হয়েছে। মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন এবং বাকস্বাধীনতা হরণ করে প্রশাসনের উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে সরকার। আল জাজিরার প্রতিবেদনের পর লজ্জা থাকলে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত ছিলো।

মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। জাল ভোট, কেন্দ্র দখল করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। তিনি নির্লজ্জ ইসির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান ইসি গৃহপালিত কমিশনে পরিণত হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, পুরো দেশকে সরকার জুলুম নির্যাতনের বন্দিশালায় পরিণত করেছে। ইসলামী তাহজীব-তামাদ্দুন, ইসলামী ওয়াজ মাহফিলের উপর নিষেধাজ্ঞা করে সরকার চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ ও মাদককে উস্কে দিচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হলে সর্বত্র ইসলাম চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে।

দক্ষিণ সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া ও উত্তর সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কেএম আতিকুর রহমান, প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, ছাত্রনেতা নূরুল করীম আকরাম, নগর নেতা আলতাফ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল আউয়াল মজুমদার, নূরুল ইসলাম নাঈম, ডা. শহিদুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুরাদ হোসেন, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, এড. শওকত আলী হাওলাাদর, ৬৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ইব্রাহিম, মাওলানা ইউনুছ ঢালী, শিক্ষকনেতা আব্দুস সবুর প্রমুখ।

মন্তব্য করুন