দল পরিবর্তন ও ইসলামী আন্দোলন নিয়ে যা বললেন ঐক্যজোটের জুনায়েদ গুলজার

প্রকাশিত: ৩:০৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২১

ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব পদে পুনর্বহাল হওয়া আলোচিত-সমালোচিত ইসলামী রাজনৈতিক নেতা, মুফতী আমিনী রহ. এর স্নেহধন্য মাওলানা জুনায়েদ গুলজার তার বিভিন্ন দল পরিবর্তন ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে বিশেষ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পাবলিক ভয়েস টোয়েন্টিফোরে।

কোন কোন দলে গিয়েছেন, কেন গিয়েছেন এসব নিয়েও তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। বিশেষ করে জমিয়ত, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেওয়ার বাস্তবতা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কথা বলেছেন।

তিনি বিশেষভাবে দাবি করে বলেছেন – জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এই দুটি সংগঠনে তিনি কখনোই যোগদান করেননি বরং এই সংগঠনের লোকজন নিজেরাই তার অনুমতি ছাড়া তাদের দলে যোগদানের বিষয়টি প্রচার করেছেন। এমনকি বারবার তাকে তাদের দলে নেওয়ার জন্য বিরক্ত করেছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

[মুফতী আমিনী রহ. এর সাথে ইসলামী ঐক্যজোট নেতারা ও জুনায়েদ গুলজার (ডানে)]

বিষয়টি নিয়ে বিশেষত তার ব্যাপারে বিভিন্ন দল পরিবর্তনের করা নিয়ে করা সমালোচনা বিষয়ে তিনি একটটি ফেসবুক পোস্টও দিয়েছেন। সে পোস্টে তিনি আবুল হাসনাত আমিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন – নতুন উদ্যোমে ফিরবে ইসলামী ঐক্য জোট। যে সকল বন্ধুরা বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন তাদের বলছি  রাজ পথে আমাদের ৩০ বসরের পদচারণা সুতরাং আমাদের কে নতুন ভাবে পরিক্ষা দিতে হবে না। আমরা যখন রাজপথে অগ্নি পরিক্ষা দিয়েছি এখনকার ফুলে ফেপে উঠা নেতারা তখন যোজন যোজন দুরে ছিলেন।

আমরা সকল নেতাদের পরিচয় জানি সুতরাং হিসাব করে মন্তব্য করবেন। কে দুধের ধোয়া আর  কে গোলাপ জলের এগুলো সব আমাদের নিকট দিবা লোকের ন্যায় পরিস্কার।

আসুন রাজ পথে দেখা হবে। ইনশা আল্লাহ পূর্বের অভিজ্ঞতা নিয়েই মুফতী আমিনী রঃ এর ইসলামী ঐক্য জোট,  প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাবো হেরার দীপ্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতে। নির্বাচিত চেয়ারম্যান কে বিপ্লবী অভিনন্দন।

  • এই প্রতিবেদনে জুনায়েদ গুলজারের বিস্তারিত বক্তব্য সাক্ষাতকার আকারে প্রকাশ করা হলো।

পাবলিক ভয়েস : প্রথমেই ইসলামি ঐক্যজোটে ফেরা নিয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই?

জুনায়েদ গুলজার : আসলে ইসলামী ঐক্যজোটে তো আমি শুরুলগ্ন থেকেই ছিলাম। এছাড়াও ইসলামী ঐক্যজোটের ছাত্র সংগঠন ছাত্র মোর্চার আমি প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরবর্তীতে এ সংগঠনের যুব সংগঠন যুব খেলাফতের সেক্রেটারী ছিলাম। মুফতি আমিনী রহ. যেহেতু আমার ওস্তাদ এবং আমি ওনার কাছে বুখারী পড়েছি তাই তার সাথে একটি রুহানি সম্পর্ক আমার আছে। তার সন্তান হাসনাত আমিনীর সাথে আমার একটি গভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। এসব কারণে ইসলামী ঐক্যজোটের আমার ফেরাটা খুবই স্বাভাবিক ছিল।

পাবলিক ভয়েস : এই দলের সাথে এত সম্পর্ক থাকলে আপনি এ সংগঠন থেকে সরলেন কেন?

জুনায়েদ গুলজার : আমি এ সংগঠন থেকে সরে আসার কিছু ভিতরগত কারণ ছিল। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে কিছু মতবিরোধ ছিল। যে কারণে আমি সংগঠন থেকে সরে গিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এ যোগ দিয়েছিলাম।

পাবলিক ভয়েস : ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে আপনার রাজনৈতিক মতামত কি?

জুনায়েদ গুলজার : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অবশ্যই একটি ভালো সংগঠন আমি তাদেরকে সমর্থন করি এবং তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে তারাও ইসলামের জন্য কাজ করছে এবং আশা করি তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে একই সাথে আমরাও ইসলামী ঐক্যজোট নতুন করে কাজ করতে চাই

পাবলিক ভয়েস : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেওয়ার পূর্বে আপনি জমিয়তে যোগ দিয়েছিলেন বলে একটি দাবি আছে! বিষয়টি আসলে কি?

জুনায়েদ গুলজার : ‘জমিয়াতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি মোটেও সঠিক নয়। বরং তারা আমাকে দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত করে গেছেন তাদের দলে যোগ দিতে। এক পর্যায়ে তারা একটি কমিটি করে সেখানে আমার নাম দিয়ে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমি সেই কাগজের পিছনেই লিখে দিয়েছি আমি (তখন) কোন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত নই এবং কোন সংগঠনের যোগ দেবো না। এবং সেই কাগজের ছবি আমার কাছে তোলা আছে। বরং আমি তাদেরকে বলেছি আপনাদেরকে আমি সহযোগিতা করব কিন্তু দলগতভাবে আপনাদের সাথে আমি থাকবো না। সবমিলিয়ে কথা হলো – আনুষ্ঠানিকভাবে আমি কখনোই জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগদান করিনি বরং তারা নিজেদের ইচ্ছায় সে কাগজ প্রচার করেছে।

পাবলিক ভয়েস : কিন্তু ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার পরে আপনি ফের মাওলানা মামুনুল হক নেতৃত্বাধীন ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে’ যোগ দিয়েছেন বলেও একটি কথা প্রচার হয়েছে! এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

জুনায়েদ গুলজার : খেলাফত মজলিসের যোগ দেওয়ার বিষয়টি হলো – আসলে যে কোন একটা কারণে খেলাফত মজলিসের তখনকার যুগ্ম মহাসচিব এবং বর্তমানে নায়েবে আমির আহমদ আলী আমাকে তার অফিসে দাওয়াত করেছিলেন। আমি সুসম্পর্কের জায়গা থেকেও তার অফিসে গিয়েছিলাম। তখন তাদের অফিসে অনেক লোকজন ছিল। সেখানে আমি তাদের সাথে দাঁড়ানো সহ কিছু ছবি তুলে সেগুলোকেই যোগ দেওয়া হিসেবে প্রচার করেছেন। কিন্তু আমার সাথে আগে-পরে কখনোই তাদের দলে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এমনকি তার পরেও তারা অনেক চেষ্টা করেছেন আমাকে তাঁদের দলে পদ দেয়ার জন্য। কিন্তু আমি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আনুষ্ঠানিকভাবে কখনো যোগদান করিনি। বরং তাদেরকে মেসেজ দিয়েও আমি একাধিকবার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি।

পাবলিক ভয়েস : অর্থাত – “আপনি ঐক্যজোটের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কেবল ইসলামী আন্দোলনেই যোগ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তিতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আবার ইসলামী ঐক্যজোটে ফিরেছেন”?

জুনায়েদ গুলজার : জ্বি-বিষয়টি ঠিক এটাই!

পাবলিক ভয়েস : শেষ প্রশ্ন – ‘ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?’

জুনায়েদ গুলজার : ইনশাআল্লাহ আমরা আজকের (৩১ জানুুুয়ারি) মিটিং থেকে অনেকগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। যার মধ্যে অন্যতম হলো আগামী এক দুই মাসের মধ্যেই আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এবং মুফতি আমিনী রহ. এর জীবনী নিয়ে ঢাকায় বড় ধরনের একটি সেমিনার করতে যাচ্ছি। এছাড়াও বাংলাদেশের দশ বিশটি জেলায় ইসলামী ঐক্য জোটের ব্যানারে বড় ধরনের প্রোগ্রাম আমরা করবো। সাংগঠনিকভাবে আমরা এই কর্মসূচি গুলো হাতে নিয়েছি। আস্তে আস্তে আমরা চাচ্ছি সাংগঠনিকভাবে পুনরায় মাঠে ফেরার জন্য এবং মাঠে থাকার জন্য। একই সাথে ইসলামী ঐক্যজোট পুরোপুরিভাবে সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করবে এখন।

প্রসঙ্গত : ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারি মহাসচিব, ইসলামী যুব মোর্চার সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা জুনায়েদ বিন গুলজার চরমোনাই পীর নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে’ গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বরিশালের চরমোনাইতে জামিয়া রশিদিয়া আহসানাবাদ মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছিলেন।

দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই’র হাতে সদস্য ফরম পূরণ করে তিনি যোগদান করেছিলেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে যোগ দেওয়া সম্পর্কে তিনি তখন বলেছিলেন – ‘এই দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি এবং পীর সাহেব চরমোনাই’র আপোষহীন ও গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এ দলে যোগ দিয়েছি’।

সাক্ষাতকার গ্রহণ : পাবলিক ভয়েস ডেস্ক।
পরিকল্পনা ও সম্পাদনা : হাছিব আর রহমান।

মন্তব্য করুন