প্রবাসীদের বিয়ে করতে মানা করলেন পুলিশ : সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দা

প্রকাশিত: ৬:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
ওসি মুহাম্মদ মোরশেদ
প্রতিবেদন-
ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার ওসি মুহাম্মদ মোরশেদ এক স্কুলের অনুষ্ঠানে মেয়েদের উদ্দেশ্যে প্রবাসীদের বিয়ে না করার কথা বলেন। এতে প্রবাসীদের হেয় করা হয়েছে বলে
অভিযোগ অনেকের। তার প্রদত্ত এ বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে নিন্দা আর সমালোচনার ঝড়।
স্কুলের ঐ অনুষ্ঠানে ওসি মোরশেদ যা বলেন

– খবরদার প্রবাসী ছেলেদের বিয়ে করবে না। তারচে তুমি দেশে কাজ করে এমন একটি ছেলেকে বিয়ে করবা। সুখে থাকবা, ভালো থাকবা। তোমরা মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে একটু বুদ্ধি বেশি। প্রবাসীরা তোমাদের কাজের মেয়ে ভাবে। তোমাকে সে বিয়ে করে ৩/৪ বছরের জন্য চলে যাবে বিদেশে। তাই প্রবাসীদের তোমরা বিয়ে করবে না।

-অনেক বাবা-মা বোঝে না। বাবা-মাকে তোমরা বুঝাবা। যদি তারা না বোঝে তবে ৯৯৯ নম্বরে কল করবা। পুলিশি ধরবে, পুলিশ আসবে। বাংলাদেশে এখন কিছু ভালো কাজ করলে একমাত্র পুলিশই করে।আগের পুলিশ এখন আর নাই। আগের দিন নাই। আমার গাড়ির ড্রাইভারও এমএ পাশ। তোমাদের শিক্ষকের চেয়েও বেশি শিক্ষিত।

তার এমন হেয়মূলক বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা। তার এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে মুহাম্মদ আবদুল্লাহ নমের একজন বক্তি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন-

‘ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার ওসি মোরশেদ সাহেব কোটি প্রবাসীকে হেয় করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করছি’

তিনি বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে আমি এক ভাগ্নি চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। মঙ্গলবার রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে তার জটিল অপারেশন হয়েছে। এখনও হাসপাতালে। ভাগ্নি জামাই প্রবাসী। এই চিকিৎসায় প্রায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে। পুরো টাকাটাই পাঠিয়েছেন প্রবাসী স্বামী। শুধু তাই নয়, প্রতি ঘন্টায় খবর রাখছেন। কর্মস্থলের বস অনুপস্থিত থাকায় দেশে আসতে পারেননি। দশ দিনের একটি রাতও ঘুমোতে পারেননি। মাস খানেকের মধ্যেই দেশ ছুটে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রবাসী স্বামী টাকার যোগান না দিলে জরুরি চিকিত্সাই শুধু বাধাগ্রস্ত হতো না, জীবনও ঝুঁকিতে পড়তো।

এ ধরনের হাজারো ঘটনা বলা যাবে, একজন প্রবাসী তার ঘাম-রক্ত ঝরানো অর্থ প্রেয়সীর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছেন। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে প্রবাসীদের ত্যাগ অতুলনীয়।

আহমেদ ভুইয়্যা নামের আরেকজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন- প্রবাসী ভাইয়েরা ওর কোনো ক্ষমা নেই পদত্যাগ চাই। ছাগলনাইয়া থানার ওসি এমএম মোরশেদ উপর অভিযোগের শেষ নেই। তার দাপটে অস্থির এখানকার বাসিন্দারা। টাকা খেয়ে মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হয়রানির ভয়ে ভুক্তভোগী অনেকে মুখ খুলতে চান না। তবে এ নিয়ে সরব হয়েছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও এক গৃহবধূ।

এছাড়াও এনায়েত উল্লাহ নামে পৌরসভার বাঁশপাড়ার মিয়াজীবাড়ির ব্যবসায়ীর অভিযোগ, জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের লোকজন সম্প্রতি তার ১০ কক্ষের টিনের ভাড়াঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ নিয়ে ছাগলনাইয়া থানায় অভিযোগও করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। এরই মধ্যে আগের ওসি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। চলতি মাসের ৪ তারিখে নতুন ওসি এমএম মোরশেদ থানায় যোগদান করেন। তাকে জানালে তিনিও মামলা নিতে গড়িমসি করেন। বাধ্য হয়ে তার মা হাছিনা বেগম ফেনীর আমলি আদালতে একটি পিটিশন মামলা করেন।

এইচ এম তাওহিদ নামের একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, যে প্রতিষ্ঠানে বসে প্রবাসীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন একজন কুলাঙ্গার পুলিশ। তাকে আর কি বলবো ও ঘুষের টাকার স্বাদ গ্রহন করতে করতে মাথার ব্যালেন্স হারাই ফালাইছে! আমার তো লজ্জা হয়; কারণ ঐ এলাকায় এমন কোন ব্যাক্তি ছিল না যার ঘরে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা নাাই?

নজরুল ইসলাম নামের একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, বাংলাদেশ নতুন এক … (অশালীন শব্দ) আগমন দেখলাম আজ ফেসবুক  ওয়ালে । সে নাকি প্রবাসীকে নিয়ে কথা বলছে। আরে বেটা পুলিশের বাচ্ছা তুই তো একটা ফহিন্নি। প্রবাসীদের মুল্য তুই কি করে বুঝবি। তাদের কারণে গোটা পুলিশ জাতিকে মানুষ ঘৃণা করে। তুই আস্ত একটা বেয়াদব এইজন্যই এমন মন্তব্য করলি।

অবশ্য পুলিশ অফিসার মোরশেদ তার বক্তব্যের এমন তীব্র সমালোচনার পর এক ভিডিওতে এসে দাবী দাবি করেছেন যে, তিনি মূলত স্কুলের মেয়েদের বুঝাতে চেয়েছেন তারা যেন অল্প বয়সে প্রবাসী হোক বা যেই হোক কাউকে বিয়ে না করে। প্রবাসীদের হেয় করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। কেউ তার বক্তব্য খন্ডিত আকারে প্রকাশ করেছে। তারপরও তার বক্তব্যে কেউ দুঃখ পেলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। প্রবাসীদের তিনি সম্মান করেন। এমনকি তিনি দাবি করেন তার নিজের পরিবারেও প্রবাসীরা রয়েছে।

মন্তব্য করুন