

আরিফ রব্বানী
তাবলীগের আমির মাওলানা সা’দ কান্ধলবির অপ্রীতিকর কিছু বক্তব্যের জের ধরে বিতর্কের দানা বাধতে থাকে। ক্রমে ক্রমে এই বিতর্ক এতই প্রকট হতে থাকে যে, একসময় গোটা তাবলীগ জামাতটাই দু টুকরো হয়ে যায়। ফলে একপক্ষ অপর পক্ষের প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়। এরই সূত্র ধরে ঘটে যায় ‘টঙ্গিট্রাজেডি’। যা তাবলীগের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে আজীবন। এই বিচ্ছিন্নতা, দলাদলি এবং উভয় দলই মারমুখী অবস্থানে থাকা ইসলামি অঙ্গনে বড় একটা ধাক্কা লেগে দেয়।
যেটা চিন্তাশীল আলেমরা কখনই চাইত না। তারা দিল থেকে কামনা করত এই বিচ্ছিন্নতা যেন বেশিদিন না থাকে। যেকোন মূল্যে যেন পরস্পর মিলমিশ হয়ে এককাতারে ডেগ-পাতিল নিয়ে চলে । পাকিস্তানের শীর্ষ আলেমরাও চিঠি দিয়েছে;যাতে উভয়পক্ষ সমাধানের পথ বেছে নেয়। নাহলে উম্মাহর বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
সমাধানের পথ যেহেতু মাওলানা সা’দের না আসা সেহেতু গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। বাংলাদেশে ইজতেমা হবে তবে বিতর্কিত মাওলানা সাদ আসতে পারবে না। এমন সিদ্ধান্ত ওয়াজাহাতিদের মাঝে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাহ্যত এটা আমাদের পক্ষের রায় মনে হলেও এটা নিয়ে অপরপক্ষকে ঘায়েল করা যাবে না। ওদের সাদ আসতে পারবে না বলে ওদের বাঁকা চোখে দেখা যাবে না, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যাবে না। রায় আমাদের পক্ষে এসেছে বলে উস্কানিমূলক কথা বা লেখা প্রচার করা যাবে না।
উদারতার সর্বোচ্চটুকু দেখাতে হবে এখন ওয়াজাহাতিদের। কাছে আসতে চাইবে না, কিন্তু কাছে টানতে হবে। বুকের সাথে বুক মেলাতে হবে। ওদের সঙ্গে নিয়েই দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। এক এবং নেক হয়ে পথ চলতে হবে। যেন ওরা দূরত্ব খুঁজে না পায়। মনে করে এরা আমার দ্বীনি ভাই। আমরাই এতদিন ভুল পথে ছিলাম। এই বুঝটা তৈরি করাতে পারলেই দ্বন্দ্ব চিরতরে খতম,ইনশাআল্লাহ।
এরপরেও যদি উভয় দলের দিলে দূরত্ব কাজ করে তাহলে সেনা মোতায়েন করেও লাভ হবে না। রাগ,ক্ষোভ, ঘৃণা মনে রেখে এক হওয়া যায় না। হলেও ফলাফল ভালো হয় না। শৃঙ্খলার মাঝেই তখন বিশৃঙ্খলার দ্বার উন্মোচন হয়ে যায়। সামান্যতেই তখন বড় কিছু ঘটার আশঙ্কা থাকে।
তাই উভয়পক্ষের প্রতি আহবান থাকবে, আসুন দ্বীনের স্বার্থে, ইসলামের কল্যাণে, মুসলমানদের মাঝ থেকে অনৈক্য দূর করতে এখানেই দ্বন্দ্ব নিরসন করে ফেলি। ওয়াজাহাতি-এতায়াতি ভুলে তাবলীগী ভাই বনে যায়। পেছনের সব ভুলের জন্য কায়মনোবাক্যে সবাই রাব্বে কারিমের দরবারে তওবা করি। আল্লাহপাক আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।
ছাত্র-
জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম, ঢাকা।