কোয়েল পাখির ডিম দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে

প্রকাশিত: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২০

ইউসুফ পিয়াস: ছোট্র একটি পাখি কোয়েল। তার ডিমটিও বেশ ছোট কিন্তু এই ছোট ডিমটির রয়েছে অবিশ্বাস্যকর কিছু পুষ্টিগুণ। যা অনেকরই অজানা।  আমরা কোয়েলের ডিম বেশ পছন্দ করি কিন্তু এই ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি না। অনেকের জানার খুব ইচ্ছে করেছেন।

আমাদের দেশে ইদানিং খাবার হিসেবে কোয়েল পাখির ডিমের বেশ জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে। গড়ে উঠছে অনেক কোয়েল পাখির খামারও। তাই এ ডিমের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারের কথা জানা খুবই গুরত্বপূর্ণ ।

কোয়েল পাখির ডিম বড়জোর ৯ গ্রাম ওজনের হয় কিন্তু কোয়েলের ডিমে তার আকারের তুলনায় অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। একটি কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে!  ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণও বটে। পরিমাণে কম মনে হলেও সমপরিমাণ মুরগির ডিমের তুলনায় তা অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, ৫টি কোয়েলের ডিমে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য উপযোগী ডিম আছে তার মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম গুণে মানে এবং পুষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ। চল্লিশ বছর পার হলেই ডাক্তাররা মুরগির ডিম খেতে নিষেধ করে থাকেন। কারণ নিয়মিত মুরগির ডিম খেলে কোলেস্ট্ররলের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অথচ কোয়েলের ডিম নিঃসংকোচে যে কোনো বয়সের মানুষ অর্থাৎ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা খেতে পারেন। এতে ক্ষতির কোনো কারণ নেই বরং নিয়মিত কোয়েলের ডিম খেলে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং অনেক কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভও হতে পারে।

আসুন জেনে নিই কোয়েল পাখির ডিমের অবিশ্বাস্য কিছু পুষ্টিকরগুণ:

* কোয়েলের ডিম প্রাণীজ খাদ্যদ্রব্য হলেও এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং অ্যামাইনো এসিড এমন মাত্রায় থাকে যে এই ডিম খেলে শরীরে সব ধরণের পুষ্টির অভাব পূরন হয় এবং শরীরের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায় ।
* মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল থাকে ১.৪% অন্যদিকে মুরগির       ডিমে থাকে ৪% ।
* কোয়েলের ডিমের কুসুমে প্রোটিনের পরিমান মুরগির থেকে শতকরা প্রায় সাতগুণ বেশি থাকে।
* কোয়েলের ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমাণ মুরগির ডিম থেকে প্রায় ছয়গুণ বেশি । ফসফরাস ও আয়রনও থাকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি ।
* কোয়েলের ডিমে এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াকে নষ্ট করে ।
* শরীরের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামাইনো এসিড, কোয়েল ডিমে বিদ্যমান যা শরীরের জন্য কার্যকরী।
* কোয়েলের ডিম কোন কোন দেশে মেডিসিন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং।
* নিয়মিত কোয়েলের ডিম খেলে হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়, কিডনি এবং লিভারের কার্যক্ষমতা ও হজমশক্তি বাড়ে এবং অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে থাকে ঠিক তেমনই কম হলেও পাখির শরিলে কাজ করে।
* কোয়েলের ডিম ব্রেইন সবসময় সতেজ রাখে এবং স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে । বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে থাকে।
* দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন তিন-চারটা করে কোয়েলের ডিম খেতে পারেন। শাক সবজির সাথে কোয়েলের ডিম সিদ্ধ করে মিশিয়ে সপ্তাহে দুইদিন গরমের সময়ে এবং শীতে ৩-৫দিন খাওয়াতে পারেন।
*কোয়েল পাখির ডিমে প্রতি একশ গ্রামে রয়েছে ১৩.০৫ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৫৮ ক্যালরি।
* কোয়েলের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান । মুরগীর ডিমের তুলনায় এর পুষ্টিমান প্রায় তিন থেকে চারগুণ বেশি।
* কোয়েলের ডিম মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে । এছাড়াও এটি পাকস্থলির সমস্যা দূর করে তাহলে বুঝেন নিন এটা শরীরের জন্য কতটা উপকারী ।
* চাইনিজরা কোয়েলের ডিমকে টিবি, অ্যাজমা এবং ডায়াবেটিস রোগের পথ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।
* কিডনি ও লিভারের সমস্যা দূর করতেও এই ডিমের রয়েছে কার্যকর ভুমিকা পালন করে।
এছাড়াও কোয়েলের মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু। কোয়েলের ডিমের পুষ্টিমান বেশি। কারণ, অন্যান্য ডিমের তুলায় কোয়েলের ডিম প্রোটিন, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন- এ, বি-১, বি-২ এর পরিমাণ তুলনামুলকভাবে বেশি। মুরগীর ডিমের তুলনায় কোয়েল পাখির ডিমে কোলস্টোরেল কম। কোয়েল পাখির ডিমে এ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকে, ফলে এলার্জির সম্ভাবনা কম। তাছাড়া হার্টের ভাল্‌ভ সুস্থ্য রাখতে কোয়েল পাখির ডিম অনেক উপকারী। আমাদের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কোয়েল পালন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। আমার পরিবারে কয়েক বছর যাবত নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস খেয়ে আসছি, আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই মনে হচ্ছে, কোনো সমস্যার কিছু দেখি না। তথ্য সূত্র: উইকপিডিয়া
ওয়াইপি/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন