ভোলায় অমানুষিক কায়দায় শিশু নির্যাতন ; বিচার দাবি

প্রকাশিত: ১:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০১৯

ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার শশীভূষণ থানার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে মুরগী চুরির অপবাদে রুবেল (১৪) নামের এক কিশোরকে অমানুষিক কায়দায় প্রকাশ্যে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করেছেন ইউপি সদস্য মো. আমজাদ হোসেন।

রবিবার এ নির্যাতনের কিছু ছবি ও একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য আমজাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করন।

এদিকে ঘটনার এক মাস পর গত ১৮ জানুয়ারী কিশোর রুবেলের মা বিলকিছ বেগম বাদী হয়ে ইউপি সদস্য আমজাদসহ ছয় জনকে আসামী করে শশীভূষণ থানায় মামলা দায়ের করন। মামলা নং ১৩/২০১৯।

জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর বৃহষ্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মো. রুবেল নামের এক কিশোরকে হাত ও পায়ের মাঝে লাঠি বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়।

নির্যাতনের শিকার ঐ কিশোর হাজারীগঞ্জ ৯নং ওয়ার্ডের আ. মালেকের ছেলে। নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য আমজাদ একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

রুবেলের মা বিলকিস বেগম জানান, তার ছেলে রুবেল নৌকায় বাবুর্চি কাজ করে। ঘটনার দিন বাড়িতে আসলে এলাকার কয়েকজন ছেলে মিলে বনভোজন করার জন্য প্রতিবেশী কবিরের স্ত্রীর কাছ থেকে ৩০০ টাকায় একটি মুরগি কিনে। কিন্তু পূর্ব থেকে প্রতিবেশী কবির তালুকদারের সাথে বিরোধ থাকায় সে মুরগী চুরির অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য আমজাদ এর কাছে রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। অভিযোগ পেয়ে ইউপি সদস্য আমজাদ তার দলবল নিয়ে রুবেলকে মেঘনা নদীর পাড় থেকে এনে বাড়ির কাছের হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রকাশ্যে হাত ও পায়ের মাঝে লাঠি বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। এসময় চারদিক দিয়ে ওই ইউপি সদস্যের দলবল ঘিরে রেখে এলোপাথারী মারধর শুরু করে। নির্যাতন সইতে না পেরে রুবেল চিৎকার করে বার বার মুরগী চুরি করেনি বললেও পাষন্ডরা তাকে ছাড়েনি।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী মালদ্বীপে থাকায় তাকে বিভিন্নভাবে অসামাজিক কাজের অভিযোগ দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছে আমজাদ ও তার দলবল। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের হুমকি ধামকিতে এত দিন কারো কাছে মুখ খুলে বিচার দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, আমি মুরগী চুরির কঠিন বিচার করেছি। বিচার করতে গেলে একটু আধটু মারধর করতেই হয়।

হাজারিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, আমরা সালিশ করে মিমাংসা করতে পারি। কিন্তু কাউকে মারার অধিকার আমাদের নেই। এ ঘটনা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি জানতে পেরে ভিক্টিমকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি।

শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও চিত্র আমার কাছে আছে। এ ঘটনায় শিশু অধিকার আইন ২০১৩ এর ৭০ ধারা মোতাবেক শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

মন্তব্য করুন