

ইউসুফ পিয়াস : রাজধানী ঢাকার অন্যতম কলেজ ‘দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’ ক্যাম্পাসে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণ দেখিয়ে কেবল ক্যাম্পাস এড়িয়ায় পশুর হাট না বসানোর দাবি জানিয়েছে দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তারা দাবি জানিয়ে বলেন – আমরা কেবল কলেজ মাঠে পশুর হাট বসানোর বিরোধী। কুরবানীর বা কুরবানীর পশুর হাটের কোনোভাবেই বিপক্ষে নই। যেহেতু প্রতি বছর কুরবানীর হাটের নামে আমাদের পরিশ্রমে ও কলেজ ফান্ডের বিপুল অর্থের মাধ্যমে সাজানো এই প্রিয় কলেজের পরিবেশ নষ্টের পক্ষে নই। এ কারণে কোনোভাবে যেন ক্যাম্পাসে পশুর হাট না বসে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
[বাহারি ফুল বাগান ও গাছে সুসজ্জিত কলেজ ক্যাম্পাস।]
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ১২টি এলাকায় এবার কোরবানির পশুর হাট বসবে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে অন্যতম একটি এলাকা হলো দনিয়া শনিআখড়া এলাকা। এ এলাকায় প্রতি বছর কোরবানির পশু কেনা-বেচার বিশাল হাট বসে। ঢাকার অন্যতম একটি পশুর হাট এটি। পুরো এলাকাজুড়ে পশুর হাট বসার এই ধারাবাহিকতায় দনিয়া কলেজ ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে যায় পশুর হাট। যে কারণে প্রতি বছর বিপাকে পড়তে হয় ঢাকার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীদের।
প্রতিবছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে বৃক্ষরোপণ, ফুল বাগান তৈরি ও ক্যাম্পাস শোভাবর্ধনে বিশাল ব্যয় এবং শ্রম বিনিয়গ করলেও কুরবানীর সময়ে এসে কলেজ মাঠ ও তার আশপাশে পশুর হাট বসায় ক্যাম্পাসের পরিবেশগত সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় সাজানো ফুলের বাগান থেকে শুরু করে বেশিরভাগ গাছপালা। ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থীদের।
এদিকে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবারই ক্ষোভ জানিয়ে আসছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। কুরবানীর ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরলে ক্যাম্পাসের সাধারণ পরিবেশ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
[দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস।]
এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েস টোয়ান্টিফোর ডটকমমের সঙ্গে কথা হয় কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীদের। তারা জানান, “প্রতিবছর আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় কিন্তু এ ভোগান্তি দেখার কেউ থাকে না।” বছর যায় এবং প্রতি বছর আমরা নতুন করে কলেজ ক্যাম্পাস সাজাতে হয়।
কী ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, “টানা ৭-৮ দিন পশুর হাটের কারণে গরুর বর্জ ও গোবরের দুর্গন্ধে গোটা ক্যাম্পাস দূষিত হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে ফিরেই এই পরিবেশ দেখতে পায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা হাট শেষ হওয়ার পর কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয় না সিটি কর্পরেশন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়ে লেখেন, দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারপাশে এবং মহাসড়কের পাশে বৃক্ষরোপণ করে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিরাসহ সবাই মিলে ক্যাম্পাসের প্রাঙ্গণ ও চতুর্দিকে নতুন করে বিভিন্ন প্রকার ফলজ-ভেষজ গাছের চারা রোপণ করেছে।
এমতাবস্থায় কলেজের আঙ্গিনায় পশুর হাট বসানো হলে এই সুন্দর পরিবেশ এবং যত্ম করে লাগানো গাছগুলো মারাত্মকভাবে নষ্ট হবে। তাই তারা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে এ ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান ।
শিক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে পশুর হাট বসা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাদের বক্তব্য আমরা কুরবানীর বা কুরবানীর পশুর হাটের কোনোভাবেই বিপক্ষে নই কিন্তু কুরবানীর হাটের নামে আমাদের পরিশ্রমে সাজানো কলেজের পরিবেশ নষ্টের পক্ষেও নই। এ কারণে কোনভাবে যেন ক্যাম্পাসে পশুর হাট না বসে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
[কলেজ মাঠে ফুলের বাগান]
এ বিষয়ে দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা জানতে গভর্ণিং বডির সভাপতি কেএম মোজাম্মেল হককে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
তবে গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি মিজানুর রহমান বলেন, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই পশুর হাট বসার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ পশুর হাট বসলে আমাদের কলেজের পরিবেশ নষ্ট হয়, যার প্রভাব সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর পড়ে। কিন্তু উপর থেকে চাপ থাকার কারণে আমরা আমাদের অবস্থানে থাকতে পারি না, বাধ্য হয়ে পশুর হাট বসাতে হয়। তবেএবার কলেজ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলেজের মাঠে পশুর হাট বসতে দেওয়া হবে না, গেইটে তালা ঝুলিয়ে রাখা হবে।
বিষয়টি নিয়ে দনিয়া কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার মাশা ইউনিভার্সিটির নির্বাচিত ভিপি বশির ইবনে জাফর বলেন – কলেজ প্রাঙ্গনে বা কলেজের অভ্যন্তরের দুটি মাঠে গরুর হাট বসানোর কারণে পরবর্তী দুই থেকে তিনমাস শিক্ষার্থীদের কতো নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় তা সবারই জানা এবং এই হাট না বসানোর দাবি এটা প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা করে আসছে। কিন্তু কেন দাবি মানা হচ্ছে না তা আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো বলতে পারবো। কেননা আমি যখন দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব প্রফেসর আবুল কালাম স্যারকে আমরা কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে হাট না বসানোর দাবি জানালে তিনি বলেছিলেন এটা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির লোকজনের ইচ্ছায় হাট বসে যা কলেজের কারোরই ক্ষমতা নেই বন্ধ করার।
তিনি আরও বলেন – প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের জোর দাবি ও কলেজ প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকার পরও হাট চলমান থাকা এটির পেছনে সত্যিই স্থানীয় প্রতিনিধিদের হাত রয়েছে এবং এর থেকে তারা একটি বেনিফিটও পাচ্ছে সুতরাং আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে উর্ধ্বত্বন মহলের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। আন্দোলন বা দাবির মাধ্যমে আগেও হয়নি ভবিষ্যতেও বন্ধ হবে না যদি সংশ্লিষ্ট মহল স্থানীয় প্রতিনিধিদের আধিপত্বের দিকটিতে নজর না দেন।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম পাবলিক ভয়েসকে বলেন, “পশুর হাট বসতে পারে কিন্তু ক্যাম্পাসের গাছ এবং পরিবেশ রক্ষায় আমরা যথেষ্ট চেষ্টা চালাব। প্রয়োজনে পশুর হাট কর্তৃৃপক্ষের সাথে আমরা প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়ে কথা বলব।”
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন – কলেজের পরিবেশ নষ্টের এই ধারাবাহিকতা অনেক পুরনো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও এ নিয়ে কোনো জোড়ালো ভূমিকা রাখে না। শিক্ষার্থীদের কষ্ট আমরা প্রতি বছরই দেখি। কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকে না।
এই কলেজের শিক্ষার্থী ও একজন চাকুরিজীবি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন – দনিয়া শনির আখড়া এলাকার পশুর হাট অনেক বড় হাট। বিশাল এড়িয়াজুড়েই এর বিস্তৃতি থাকে। শুধু কলেজ ক্যাম্পাসটুকু বাদ রাখলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যায় না। বিষয়টি নিয়মতান্ত্রীকভাবে একটু নিয়ন্ত্রণ করলেই হয়। এবং এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন এলাকার লোকজনসহ পশুর হাট ইজারা নেওয়া রাজনৈতিক নেতারা একটু উদ্যোগী হলেই হয়। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীদের এই প্রিয় ক্যাম্পাসটিকে এভাবে প্রতি বছর উজাড় করে ফেলার কোনো মানে হয় না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দিকে জোড়ালো নজর দেবে বলেন তিনি আশা করছেন।
#আরআর/পাবলিক ভয়েস