মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে কুরবানী নিষিদ্ধ : চিন্তিত মুসলিমরা

মুসলমানদের মাঝে সমালোচনার ঝড়

প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২০

ইতিপূর্বে করোনা রোগী পাওয়ার কারণে একবার লকডাউন হওয়া রাজধানী ঢাকার অন্যতম আবাসিক এলাকা জাপান গার্ডেন সিটিতে রাষ্ট্রীয় আইন এবং ধর্মীয় অনুভূতির কোন তোয়াক্কা না করেই কুরবানী নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

  • জাপান গার্ডেন সিটি ফ্লাট মালিক কল্যাণ সমিতির নামে প্রকাশিত একটি ঘোষনা পত্রের মাধ্যমে কুরবানির নিষিদ্ধের বিষয়টি জানানো হয়েছে। যা সোশ্যাল মিডিয়াসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এমনকি করোনাভাইরাসের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলা হলেও এটা মানতে পারছেন না অনেকেই। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই, এমনটা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও কুরবানী নিষিদ্ধের কোন ঘোষণা আসেনি দেশে। বরং বলা হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশে কোরবানির ব্যবস্থা করা হবে।

[“জাপান গার্ডেন সিটি ফ্লাট মালিক কল্যাণ সমিতির” পক্ষ থেকে প্রকাশিত কুরবানী নিষিদ্ধের ঘোষণা পত্র।]

কিন্তু জাপান গার্ডেন সিটি ফ্লাট মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম এম শাহজাহান আলী এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম স্বাক্ষরিত এই বিতর্কিত ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “পবিত্র ঈদুল আযহায় প্রতিবছর প্রায় ৮০০ পশু কোরবানী হয়ে থাকে। যার ফলে কয়েকদিন আগে থেকে পশু দেখাশোনা, ঈদের দিন পশু কোরবানির জন্য মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রবেশ এবং অপরিচিত এলাকা থেকে আগত কসাইসহ প্রায় ৩ হাজার মানুষের প্রবেশ ঘটে।”

  • এমনকি কোরবানীর কোন পশু যাতে এই আবাসিক এলাকায় ঢুকতে না পারে সেজন্য এই প্রকল্পের প্রধান গেটে আলাদা ব্যবস্থাও করা হয়েছে।”

এই বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে জাপান গার্ডেন সিটি ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির সাথে যোগাযোগ করার বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু পারা যায়নি। সর্বশেষ তাদের অফিসিয়াল ইমেইল এড্রেসে এ বিষয়ে একটি বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা কোনো জবাব দেননি।

কিন্তু পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে এলাকাটির কয়েকজন বাসিন্দাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন – আবাসিক এলাকাটির এমন সিদ্ধান্তে অধিকাংশই কোরবানি দিতে পারবেন না কারণ সিটি করপোরেশন যেখানে-সেখানে কোরবানি পশু জবাই করা নিষিদ্ধ করেছে। তাই আবাসিক এলাকার মধ্যেই কুরবানী দিতে হবে। তাছাড়া জাপান গার্ডেনের সামনের রাস্তাটি অত্যন্ত জনবহুল হওয়ায় সেখানেও পশু জবাই কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কোরবানি দিতে ইচ্ছুক আবাসিক এলাকাটির মুসলিম পরিবারগুলো এ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছেন।

  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সেখানের কয়েকজন বাসিন্দা এই বিষয়টি নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাবলিক ভয়েস-এর কাছে এবং তারা কুরবানীর মত একটি ধর্মীয় বিধানের বিষয়ে গার্ডেন সিটির ফ্ল্যাট মালিক সমিতির দায়িত্বশীলদেরকে আরো গভীরভাবে চিন্তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, কোরবানি স্রেফ পশু জবাই নয়, মুসলমানদের জন্য এটা একটা ইবাদত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেখানে সারাদেশেই কোরবানি হবে, সেখানে জাপান গার্ডেন সিটির আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কতটুকু যৌক্তিকতা আছে? তাছাড়া তারা কোনো বিকল্প পথও বাতলে দেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি এই আবাসিক এলাকার অন্তত দেড় হাজার পরিবার এবার কোরবানি দেবে না?

জাপান গার্ডেন সিটিতে মোট ২৬টি ভবনের মধ্যে ২১টি ভবনে মানুষ বসবাস করছে। এসব ভবনে ১ হাজার ৬২৩টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটে ১০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ বসবাস করেন।

অপরদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাপান গার্ডেন সিটির মধ্যে এর আগেও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিলো এবং এই সিটি লকডাউনও করা হয়েছিলো। গত এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে জাপান গার্ডেন সিটির একটি ভবনে তিনজন কারণ আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল যে কারণে সেই ভবনটিকে লকডাউন করে রাখা হয়েছিল।

  • করোনার ভয়ে কোরবানি করা বাদ রাখলেও করোনা আক্রান্ত যে হবেননা বাসিন্দারা এমন কোন কথা নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়ে থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তাছাড়া কোরবানির বিষয়ে সরকার এবং সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুরবানী করার সকল পথ উন্মুক্ত রাখা হবে বলেই বেশ কয়েকবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেখানে জাপান গার্ডেন সিটি ফ্ল্যাট মালিক কল্যাণ সমিতির নতুন করে এমন ঘোষণা সত্যিই জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে এবং এতে ধর্মীয় কাজে বাধা দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষের প্রতিবাদ তৈরি হতে পারে। যা এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশে আরও একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যম হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সিটি কর্পোরেশন সহ সরকারের এবং আলেম-ওলামাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।

প্রতিবেদন/হাছিব আর রহমান/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন