অকৃতজ্ঞ ইউরোপ (প্রথম পর্ব)

প্রকাশিত: ৫:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯

আজ ইউরোপকে পুরো পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে আদর্শ মনে করে। মানুষের ধারণা হলো, পুরো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখে, শান্তিতে দিনাতিপাত করছে ইউরোপের লোকেরা! শিক্ষা, দীক্ষা, সংস্কৃতিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। চিন্তা, চেতনায়, মন, মননে, উন্নতিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপ! আজ মানুষের সামনে সভ্য পৃথিবী বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ইউরোপ! হাত নিশপিশ করে! ইউরোপের নাগরিক হওয়ার জন্য মন আনচান করে। কোনোমতে ইউরোপে পাড়ি জমাতে পারলে মনে করে জীবন মোটামোটি সফল।

সাদা চামড়ার ইউরোপিয়ানদের অনেকেই আজকে নিজেদের আদর্শ মনে করেন। জ্ঞান, বিজ্ঞানে তাদের অবদানের কথা বলে মুখে ফেনা তুলেন। অবশ্য বর্তমান পৃথিবীতে জ্ঞান বিজ্ঞানে ইউরোপিয়ানদের অবদানকে আমি খাটো করছি না। বলতে গেলে আধুনিক জ্ঞান, বিজ্ঞানে তারা সকলের চেয়ে অগ্রসর। অত্যাধুনিক বিভিন্ন জিনিস আবিষ্কার করে তারা পৃথিবীকে মানুষের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। আজকে মানুষ এক মুহূর্তে সাত সমুদ্র তেরো নদির ওপাড়ে যোগাযোগ করতে পারছে! পৃথিবীর সীমা ছাড়িয়ে চাঁদে মানুষের বিচরণ শুরু হয়েছে। যদিও অনেকে এখন বলছেন নীল আর্মস্ট্রং এর চাঁদের অভিযান সঠিক নয়। আমেরিকা মানুষের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

দিগন্ত বিস্তৃত ধুধু মরুভূমিতে নিপুণভাবে স্যুটিং করে সেটাকে চাঁদে মানুষের অভিযান নামে চালিয়ে দিয়েছে। এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ টানি। লিওনেল মেসির কথাই ধরুন। বর্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। বলা হয়ে থাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। ফুটবলের ‘ছোট জাদুকর’ ‘ফুটবলের ইশ^র’ ইত্যাদি উপাধীতে তাকে ভূষিত করা হয়। আর্জেন্টিনা জাতীয় দল এবং ক্লাব ফুটবলে স্প্যনিশ লীগে বার্সেলোনার হয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকদিন থেকে। পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন। এবার একটু পিছনে যাই! আজকের মেসি কিন্তু এমনি এমনি হয়ে যাননি। তার পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে তার জন্ম। সেখানেই বেড়ে উঠা। এগারো পর্যন্ত ভালোই কাটছিল তার সময়। কিন্তু ১১ বছর বয়সে এসে মেসি হোঁচট খেয়ে পড়ল একটি কঠিন রোগের কাছে ।

একটি গ্রোথ হরমোনের অভাব রয়েছে তার । যে কারণে সমবয়সীদের চেয়ে তার বৃদ্ধিকম । দ্রুত সময়ের মধ্যে এই রোগের চিকিৎসা না করালে তার গ্রোথ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাবে । অথচ চিকিৎসাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল । রোগের চিকিৎসা হিসেবে প্রতিদিন এক যন্ত্রণাদায়ক ইনজেকশন তার পায়ে পুশ করা হত । প্রথম ৭ দিন এক পায়ে, পরের সাত দিন অন্য পায়ে । ১১ বছর বয়সী শিশু মেসির জন্য কতটা কঠিন সময় ছিল এটা ভাবুন । মেসির এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা কয়েকবছর পর্যন্ত চলে, কিন্তু এর ফলে এক পর্যায়ে তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে । অর্থাভাবে মেসির চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তার চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময়ে মেসির জীবন অন্য দিকে মোড় নেয় ।

মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে তার কোন একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচকে মেসির প্রতিভার কথা জানান । মেসির অদ্ভুত সুন্দর খেলার গল্প শুনে কৌতূহলী হয়ে তিনি নিজেই চলে আসেন মেসির খেলা দেখতে । এবং একটি ছোট বাচ্চাছেলে মেসির এই ফুটবল নৈপুণ্য দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন । এরপর তিনি মেসির পরিবারের সাথে তার চিকিৎসার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দিলেন । মেসির পুরো চিকিৎসার খরচ বহন করবে বার্সেলোনা কিন্তু বিনিময়ে মেসিকে স্পেনে এসে বার্সেলোনার হয়ে খেলতে হবে । মেসির পরিবার সানন্দে রাজী হলেন এই প্রস্তাবে । মেসির বয়স ১৪, পরিবার নিয়ে স্পেনে তাদের বসবাস শুরু ।

এরপরের গল্প সকলের জানা! বার্সেলোনা ক্লাব ফুটবলার মেসির চিকিৎসা করিয়েছে। মেসি সুস্থ হয়ে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বার্সেলোনার হয়ে একেরপর এক লা লীগা, চ্যম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু কথা হলো, আজকের বিশ^সেরা সর্বকালের সেরা মেসি যদি বার্সেলোনা ক্লাবের অনুগ্রহের কথা ভুলে যান, তাহলে সেটা কি ইনসাফ হবে? নাকি গাদ্দারি? বার্সেলোনা ক্লাব যদি সে সময় মেসির পাশে দাড়াত না, তাহলে হয়ত তিনি ফুটবলারও হতে পারতেন না।

মানুষের বিবেকের দাবি হলো, কেউ যদি আপনাকে হাত ধরে পথ চলতে শেখায়, হারিয়ে যাওয়া আপনাকে আলোর পথে তুলে দেয়, তাহলে আপনি বিশালা কোনো কিছু হয়ে গেলেও ওই ব্যক্তির অনুগ্রহ ভুলে না যাওয়া। একটি জায়গায় ইউরোপিয়ানরা একেবারে অকৃতজ্ঞ! নিমকহারাম! বেঈমানও বলা যেতে পারে।

ইউরোপে জ্ঞান, বিজ্ঞানের আলো কে জ্বালিয়েছে? কে তাদেরকে তুলে দিয়েছে সভ্যতার রাজপথে? কে তাদেরকে হিংস্ররতা, বর্বরতা, পশুত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে প্রকৃত মানুষের কাতারে বসিয়েছে? ইউরোপিয়ানরা অতিতকে একেবারে ভুলে গেছে! অনিচ্ছাকৃতভাবে কালের আবর্তনে ভুলে গেছে, বিষয়টি কিন্তু এমন না। তাদের নতুন প্রজন্ম যাতে শেকড়ের কথা না জানতে পারে, এজন্য সব ধরণের বন্দোবস্ত করে রেখেছে! আশ্চর্য! মানুষ এতোটা অকৃতজ্ঞ এবং নিমকহারাম হতে পারে! আজকের স্পেন দেখলে কি আপনার মনে হবে যে, ৮০০ বছর মুসলমানরা শাসন করেছিলো?

মন্তব্য করুন