

ফুটবলের উন্নয়নে যারা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে এবং দুর্নীতি করছে তাদেরকে মহামারি করোনাভাইরাস ছাড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফুটবল বিষয়ক এক লাইভে তিনি এ মন্তব্য করেন। একই সাথে তিনি বলেন বাংলাদেশের ফুটবল রক্ষার জন্য প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে অন্তত একজন একজন করে এগিয়ে আসুন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য সমাজসেবামূলক কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করা সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের এবারের নজর বাংলাদেশের ফুটবলের দিকে।
নিজ অর্থায়নে এবং নিজ প্রচেষ্টায় এবার তিনি গড়ে তুলেছেন ফুটবল অ্যাকাডেমি। ‘ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমী’ নামের এই প্রতিষ্ঠান থেকে নিজ এলাকা সিলেটের চুনারুঘাট থেকে নিয়ে সারাদেশে তিনি ফুটবল নিয়ে কাজ করতে চান।
এই বয়সে এসে কেন তিনি ফুটবল অ্যাকাডেমির কাজ করছেন সে বিষয়ে একটি ব্যাখ্যামূলক লাইভে তিনি বলেন-
অনেকেই বলেন- ‘এ বয়সে এসে একাডেমি বানানোর দরকারটা কী ছিল। আর কোন কাজ নাই তাই এমন একাডেমী বানিয়েছেন সুমন’ তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই দেখেন আপনি যদি বুড়া বয়সেও ভালো মানুষ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেন তাহলেই সেটা তাহলে সেটা অর্থবহ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের বাংলাদেশে ফুটবলের যে অবস্থা– আমি যতটুকু জানি জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়সহ কেন্দ্র পর্যন্ত যে পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ তা চিন্তাই করা যায় না।
তিনি বলেন, আমি যেহেতু এখন তৃণমূল পর্যায়ে বাড়িতে আছি আমি কখনোই শুনি নাই বিগত ৩/৪ বছরে ফুটবলের উন্নয়নে কোন বাজেট করা হয়েছে। বরং শুনেছি তহবিল নষ্ট করার ঘটনা বিভিন্ন ফুটবল মাঠ ভরাট করার টাকাটা পর্যন্ত অনেকে দুর্নীতি করে খেয়ে ফেলে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন – বাচ্চাদের জন্য ফুটবল চিন্তাই করা যায় না। নিজের বাবা যদি একটা ফুটবল কিনে দেয় এটাই হচ্ছে সম্বল। এর চেয়ে বেশি কিছু কেহই সহযোগিতা করেন না।
তিনি আহবান করে বলেন – আমাদের সারাদেশে যতগুলো উপজেলা রয়েছে সবাই যাতে প্রত্যেকটা উপজেলা থেকে অন্তত কেউ একজন এগিয়ে আসে ফুটবলের উন্নয়ন করার জন্য
তিনি নিজের কথা উল্লেখ করে বলেন- আমি আমার এলাকায় ফুটবল উন্নয়নের জন্য একাডেমিক করেছি যেখানে প্রায় ৬০/৭০ জন প্রতিদিন প্র্যাকটিস করছে এবং তাদেরকে আমি সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি চেষ্টা করতেছি তাদের সক্ষমতা তৈরি করার।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন করোনা এসে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে – আপনি যত টাকার মালিক হন না কেন। আপনি বাঁচবেন না। যদি আপনার নিজের শক্তি না থাকে, সামর্থ্য না থাকে। যদি ইমিউনিটি না থাকে নিজের মধ্যে তাহলে আপনি বাঁচবেন না।
তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্গুর দশার কথ উল্লেখ করে বলেন – বাংলাদেশের যে বাস্তবতা এখন আপনিও কোন চিকিৎসা পাবেন না, আই সি ইউ পাবেন না। আপনি কোন মন্ত্রী হন বা মন্ত্রীর ছেলে হইলেও পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। কারন কিছুই নেই বাংলাদেশে। বরং বাংলাদেশের চিকিৎসা সবকিছু কিছু ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
এসব কারণেই তরুণদের মধ্যে শারীরিক সক্ষমতা তৈরি করাসহ তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে তিনি ফুটবল একাডেমীর কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি তিনি বিভিন্ন মেধাবী এবং প্রতিভাবান ফুটবলার এবং যারা ফুটবলে আগ্রহী তাদেরকে নিয়ে তিনি ব্যাপকভাবে ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে গত দুদিন আগে তিনি বলেন – ‘ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি’র উদ্যোগে এলাকার যুবক-তরুণদের নিয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ শুরু করেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা সবাই ট্রেনিং করছি।
এ ছাড়াও অসহায় বা দুস্থ কোন কেউ থাকলে তাদেরকে সহযোগিতা করাসহ তার নিজের ফুটবল টিমকে আরো বেগবান করার জন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নিয়মিত প্র্যাকটিস থেকে শুরু করে সবকিছুই তিনি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি ফুটবল বিষয়ে এক বক্তব্যে বলেন – বাংলাদেশ ফুটবলের অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এমনকি নিজ এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এলাকার ফুটবল একাডেমীর অবস্থাও ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি ফুটবল একাডেমীকে আরো উন্নত এবং ফুটবল নিয়ে ব্যাপক কাজ করতে চাই। এর দ্বারা তরুণ প্রজন্মের শারীরিক সক্ষমতা বাড়া থেকে শুরু করে তাদেরকে শারীরিকভাবে ফিট থাকার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও ফুটবলে আগ্রহী প্রতিভাবান কিশোর এবং তরুণদের যেকোনো সমস্যা এবং বিপদের ক্ষেত্রে তিনি সদাসর্বদা বাসায় আছেন এবং থাকবেন বলেও জানিয়েছেন।
যে ধারাবাহিকতায় গত দুদিন আগে তিনি ইমন বোনার্জি নামে আট বছরের এক শিশুর লালন-পালনেরও দায়িত্ব নিয়েছেন। গত শনিবার (১৩ জুন) বিকেলে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চন্দ্রিচড়া চা-বাগানের মাঠে ফুটবল প্রশিক্ষণের সময় ফেসবুক লাইভে তাকে পরিচয় করে দেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘ইমন বোনার্জির মা নেই। তার বাবা থেকেও কোনও খোঁজ খবর নেন না। আমাকে সে বাবা বলে ডাকে। আমিও তাকে ছেলে বলে ডাকি। ইমন এখন আমার বাড়িতেই থাকে। তার সব দায়িত্ব আমি নিয়েছি। তাকে স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করেছি। আমার সন্তানের মতোই তাকে সুযোগ-সুবিধা দেব।’
এর আগে ফেসবুক লাইভে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, নমুনা পরীক্ষায় আমার করোনা নেগেটিভ আসার পর শারীরিক সক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আবার মাঠে নেমে পড়েছি।
এ সময় ব্যারিস্টার সুমন ইমন বোনার্জিকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এখন একটা ছেলেকে পরিচয় করে দিতে চাই। তার মা নেই। বাবাও খোঁজ-খবর নেন না। আমি তাকে দেখে থাকি। সে পড়াশুনা করে আর প্রতিদিন খেলতে আসে। তার অসাধারণ মেধা। ফুটবলেও স্কিল ভালো।
এ সময় ব্যারিস্টার সুমনের প্রশ্নে ইমন বলেন, বড় হয়ে আমি মেসির মতো ফুটবলার হতে চাই। ভালো ফুটবলার হয়ে দেশের ও মানুষের সেবা করতে চাই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ইমন বোনার্জিকে দেশসেরা ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
#আরআর/পাবলিক ভয়েস