ধর্মমন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্ব : আলোচনায় যে দুই নাম

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২০

বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল্লাহ জায়েদ গতকাল (১৩ জুন) দিবাগত রাত পৌনে বারোটায় রাজধানীর সিএমএইচ হাসপাতালে ইন্তোকাল করেন।

৯০ শতাংশ মুসলমান এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এ যাবতকালের সর্ব জনপ্রিয় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দেশের আলেম-ওলামাদের গুরুত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং ওলামায়ে কেরামদের সাথে ব্যাপক সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালনে এক ভিন্ন নজির স্থাপন করেছিলেন।

তিনি এতটা সফল কেন ছিলেন এ বিষয়ে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো – অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ জায়েদ ছিলেন একজন সৎ মানুষ। বঙ্গবন্ধুর সহচর্য ছাড়াও তিনি মুজাহিদে আজম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহির স্নেহধন্য ছিলেন।

অপরদিকে তিনি কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন এবং হাফেজে কোরআন ছিলেন। ধর্মীয় ভাবধারাপূর্ণ এবং ধর্মীয় জ্ঞানের কারণে তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পূর্ণ ভাবে পরিচালনা করতে পেরেছেন বলেই মনে করছেন অনেকে।

তার মৃত্যুর পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নতুন দায়িত্বে কে আসছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

এ বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে যে কয়টি নাম তারমধ্যে দুটি নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।

তার মধ্যে একজন হলেন – প্রফেসর ড. প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী। যিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে পরপর দুবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি।

যিনি অনেকটাই শেখ আব্দুল্লাহ জায়েদের মত কওমি মাদ্রাসার ছাত্র এবং কওমি শিক্ষাধারায় শিক্ষিত। বাংলাদেশের একজন প্রভাবশালী আরবি সাহিত্যিকও বলা হয় তাকে। ভারতে দারুন নদওয়াতেও তিনি পড়াশোনা করেছেন। একাধারে তিনি একজন সমাজসেবক এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব।

তিনি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) অধ্যাপক ছিলেন। এক সময় তার সাথে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হন এবং জামায়াতের সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এবং তিনি পরপর দুবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদ বিষয়ে জাতীয় সংসদে তার একটি আলোচনা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এছাড়াও ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতীয় সংসদে তিনি প্রশংসাপূর্ণ আলোচনা করে থাকেন।

আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এই ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব অসংখ্য সামাজিক সংগঠন এবং সমাজসেবামূলক কাজ করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়।

তাই এমন একজন ব্যক্তিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আগামী কর্ণধার হিসেবে পেতে অনেকেই কথা বলছেন।

বাংলাদেশের প্রভাবশালী একজন আলেম জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবের সহ-সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী আবু রেজা নদভী সম্পর্কে বলেন –

নতুন ধর্মমন্ত্রী হিসেবে তিনিই (আবু রেজা নদভী) অধিক যোগ্য। এই মুহূর্তে পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী হওয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্য, দক্ষ, শিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এমপি হচ্ছেন আমার স্নেহভাজন ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. আল্লামা আবু রেজা মুহাম্মাদ নিজামুদ্দীন নদভী। কোনো বাধা থেকে থাকলে তা নিজ প্রভাবে দূর করে হলেও প্রধানমন্ত্রী যেন তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। দেশ জাতি ও সমাজের কল্যাণ হবে। এটি আমার পাবলিক মতামত। অফিসিয়াল ও প্রাইভেট সুপারিশও যথাস্থানে পেশ করেছি। সর্বোপরি সবকিছু আল্লাহই ভালো জানেন।

এড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় শতশত মানুষ আবু রেজা নদভীকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পেতে তাদের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন।

আবু রেজা নদভী ছাড়াও আরও যার ব্যাপারে কিছুটা আলোচনা আসছে তিনি হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের আলোচিত আলেম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন যে শেখ আবদুল্লাহ জায়েদের মত টেকনোক্রেট পদে হলেও মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এমনকি আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ অবলম্বন করে দেশের আওয়ামী বিরোধীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচিত এই আলেমকে আওয়ামী লীগের মূল্যায়ন করা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রভাবশালী আলেম পাবলিক ভয়েসকে বলেন, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে এই মুহূর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয় দায়িত্ব দেওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষাবলম্বন করে ব্যাপকভাবে নিগৃহীত হয়েছেন তাই আওয়ামী লীগের উচিত তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং এই গুণী ও জ্ঞানী আলেমকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া। তাহলে অবশ্যই ধর্ম মন্ত্রণালয় এদেশের আলেম-ওলামাসহ সকলের আস্থার জায়গায় পরিণত হবে।

তবে আলোচনা যাই থাকুক। অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এদেশের জনগণ এবং মুসলমানসহ সকল ধর্মাবলম্বীদের উপকার এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করেই অবশ্যই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আগামী কর্ণধার নির্ধারণ করবেন।

হাছিব আর রহমান। নির্বাহী সম্পাদক : পাবলিক ভয়েস।

ধর্মমন্ত্রনালয় সম্পর্কিত পাবলিক ভয়েস সম্পাদকীয়

মন্তব্য করুন