নাজিরহাট মাদরাসায় গোলযোগ : যা বলছেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী

প্রকাশিত: ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ, জুন ৬, ২০২০
নাজিরহাট মাদরাসা নিয়ে গোলযোগ।

আগামীকাল হাটহাজারী মাদরাসায় নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক নিয়োগ নিয়ে শুরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেই নির্ধারণ হবে এ মাদরাসার পরিচালক কে হবেন। নাজিরহাট বড় মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা সলিমুল্লাহ এবং মাদরাসার সহকারী পরিচালক মুফতী হাবীবুর রহমানের মধ্য থেকে একজন অথবা শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে অন্য কেউ মুহতামিম নিয়োগ হবেন।

বিস্তারিত সংবাদ : ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার জামিয়া আরবিয়া নাজিরহাট বড় মাদরাসা নিয়ে বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলছে। গত ২৭শে মে মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ইদরীস ইন্তেকাল করার পর এ পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে দাড়ায়। সৃষ্টি হয় দুটি পক্ষের। এবং তাদের বিবাদ সামনে চলে আসে।

সৃষ্ট বিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, ওই মাদরাসার শুরা সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহা পরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বিপক্ষে দাড়িয়ে আর একটি পক্ষ তৈরি করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জামিয়া আজীজুল উলূম বাবুনগরের পরিচালক আল্লামা মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

আরও পড়ুন : জামায়াত-শিবির আমাকে গুলি করেছিলো, আমি সাঈদীর মুক্তি চাইনি : মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী

মাদরাসার মুহতামিম বা পরিচালক নিয়োগ নিয়েই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করে বলেন – সৃষ্ট এ পরিস্থিতি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দায়ী হলেন আল্লামা আহমদ শফী এবং শফীপুত্র মাওলানা আনাস মাদানী। এবং এ বিষয়ে তিনি বিবৃতি আকারে বিস্তারিত বর্ননাও পাঠান পাবলিক ভয়েসের কাছে।

অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাজিরহাট মাদরাসার একটি সূত্র পাবলিক ভয়েসকে বলেছেন – আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী পরিস্থিতি শান্ত করার পরিবর্তে তিনিও একটি পক্ষ হয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করছেন। তিনি এ মাদরাসার সাথে তেমনভাবে সংশ্লিষ্ট নন এবং স্থানীয় মাদরাসা বিরোধীদের সাথে মিলে নিজের পছন্দমত ব্যাক্তিকে মুহতামিম নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। আল্লামা শফীর বিরোধিতা করতে গিয়েই তিনি এমন অবস্থান নিয়েছেন। তাছাড়া বিভিন্ন কারনেই ‘মাদরাসার পরিচালক হওয়ার উপযুক্ত ব্যাক্তি হলেন মাওলানা সলিমুল্লাহ’ এমন দাবিও করেছে সূত্রটি।

তবে নাজিরহাট মাদরাসা নিয়ে সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনায় জামিয়া আজীজুল উলূম বাবুনগরের পরিচালক ও প্রবীন আলেম আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বিগত চার-পাঁচ বছর পর্যন্ত হাটহাজারী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আহমদ শফী ও নাজিরহাট বড় মাদরাসার শিক্ষক মৌলভী সলিমুল্লাহ শত বছরের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাজিরহাট বড় মাদরাসা নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে, তা অচীরেই বন্ধ না হলে পুরো ফটিকছড়িতে সকল আলিম-ছাত্র ও জনসাধারণ মিলে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। প্রয়োজনে হাটহাজারী অভিমুখী লংমার্চের ডাক দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। মাদরাসার পরিচালক নিয়োগ নিয়ে মিছিল-মিটিং লংমার্চ কেন করা হবে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।

তবে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী নাজিরহাট বড় মাদরাসা তার সূচনালগ্ন থেকেই মজলিসে শুরা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে। মাওলানা আহমদ শফী সেই শুরার সদস্য হওয়ার সুবাদে নিজেকে স্থায়ী সভাপতি হিসাবে দাবি করে প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হন বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি নাজিরহাট বড় মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা সলিমুল্লাহকে নাজিরহাট বড় মাদরাসার পরিচালক নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন। কিন্ত মজলিসে শুরার কয়েকজন সদস্যদের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তিতে আল্লামা আহমদ শফী গত বছরের (২০১৯ সাল) ২৭শে জুন বৃহস্পতিবার তার মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে এসে তৎকালীন পরিচালক মাওলানা ইদরীস রহ.কে অবহিত না করেই জোরপূর্বক মূল শুরা বাদ দিয়ে নতুন এক শুরা গঠন করেন যা সকল আইনে অবৈধ ও অস্বীকার্য। এর পর থেকে তিনি মূল শুরা বাদ দিয়ে তার গঠিত শুরার বৈঠক ডাকতে তৎকালীন পরিচালক মরহুম ইদরীসকে বারবার চাপ দিলেও তিনি তা মানতে অস্বীকার করেন এবং এ কারণে মাদরাসার শুরা বৈঠক করা হয়নি তখন।

এরপর গত ২৭শে মে মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ইদরীস ইন্তেকাল করলে পরদিন অর্থাৎ ২৮শে মে মরহুমের জানাযার নামায শেষে নাজিরহাট বড় মাদরাসা প্রাঙ্গনে শতশত মুসল্লীর সামনে ও মাওলানা আহমদ শফীর পাঠানো প্রতিনিধি মাওলানা আহমদ দিদার এবং শুরার সদস্য মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর উপস্থিতিতে শুরা কর্তৃক মনোনীত সহকারী পরিচালক মুফতী হাবীবুর রহমানকে পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসাবে মাদরাসার দায়িত্ব চালিয়ে নিতে নাজিরহাট বড় মাদরাসার সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য হিসাবে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন পরিচালক বা ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের নাম ঘোষণা করা হয়নি।

এরপর মাওলানা সলিমুল্লাহ হাটহাজারী গিয়ে আল্লামা শফীপুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর যোগসাজসে আল্লামা আহমদ শফীকে সামনে রেখে শুরা বৈঠক ডাকার অনুরোধ করে বলে বলে দাবি করেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

এমন পরিস্থিতিতে মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন – নাজিরহাটের ঐতিহ্যবাহী এ মাদরাসাটি নিয়ে আমরা একটি গোলযোগ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। আমরা বারবার বলেছি, নাজিরহাটের সমস্যা নাজিরহাটেই সমাধান হতে হবে এবং তা মূল শুরার মাধ্যমেই হতে হবে। এবং মূল শুরা কমিটির বৈঠক নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনাও করছিলাম।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার (৫ জুন) সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমকে না জানিয়ে মাওলানা আহমদ শফীর স্বাক্ষরিত একটি দা’ওয়াতনামা মুফতী হাবীবুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয় নাজিরহাট বড় মাদরাসার শুরা বৈঠক আগামী রবিবার অর্থাৎ ৭ই জুন হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়টি রীতিমত উদ্বেগজনক এবং চিন্তার।

মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন – আমরা জানতে পেরেছি, আহুত বৈঠকটি কোন শুরার বৈঠক নয়, বরং মৌলভী সলিমুল্লাহকে অবৈধভাবে পরিচালক নিয়োগ দিতে একটি সাজানো নাটক।

আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আরও বলেন, আমরা নাজিরহাট বড় মাদরাসার মর্যাদা রক্ষায় যে কোন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। তিনি মাওলানা আহমদ শফীর বার্ধক্যের সুজোগ নিয়ে পুত্র আনাস ও মৌলভী সলিমুল্লাহকে এহেন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত রাখতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায়, ফটিকছড়িতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

সৃষ্ট এ বিষয় ও মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর দাবি ও অভিযোগ বিষয়ে আল্লামা শফীপুত্র মাওলানা আনাস মাদানীর সাথে পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। কয়েকবার ফোন করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তাঁর সাথে যোগাযোগ করে আনাস মাদানীর মতামতও বিস্তারিত আকারে প্রকাশ করা হবে।

প্রসঙ্গত : নাজিরহাট বড় মাদরাসার মজলিসে শুরা নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মাওলানা সলিমুল্লাহকে মুহতামিম নিয়োগের বিষয় নিয়েও ইতিপূর্বে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যথাযোগ্য কোন সমাধান তখনও আসেনি। তাই মাদরাসার শুভাকাঙ্খিরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এ মাদরাসার ভবিষ্যত মুহতামিম নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে।

[প্রতিবেদনটি করেছেন পাবলিক ভয়েসের নির্বাহী সম্পাদক হাছিব আর রহমান]

সংশ্লিষ্ট আরও একটি বিষয়ের কয়েকটি সংবাদ পড়ুন –

আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের নেতার মামলা ; নেপথ্য ঘটনা কী

কক্সবাজার লাইট হাউজ মাদরাসায় ছাত্রদের বিক্ষোভ ও পরিক্ষা বর্জন।

কক্সবাজার লাইট হাউজ মাদরাসার সমস্যা সমাধান আদালতের রায়ে

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন