সাঈদীপুত্রের সাথে আল্লামা বাবুনগরীর ছবি ও বাস্তবতা

প্রকাশিত: ২:২৬ অপরাহ্ণ, মে ২১, ২০২০

বিশেষ প্রতিবেদন-

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত জামায়েতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চাওয়া ও জামায়াত ইস্যুতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে জড়িয়ে বেশ কিছু প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

কিছু অনলাইন গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে বেশ নেতিবাচক আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে সাঈদীমুক্তি ইস্যুতে ‘রকি বড়ুয়া’ নামে একজনের গ্রেফতারের পর তাঁর সাথে আল্লামা বাবুনগরীকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ কয়েকটি জাতীয় গণমাধ্যম।

পড়ুন : সাঈদীমুক্তি ইস্যুতে বাবুনগরী! : বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ১০ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

পরবর্তিতে সামনে আসে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী পুত্র শামিম সাঈদীর সাথে আল্লামা বাবুনগরীর একটি হাস্যজ্জল ছবি। যেই ছবি জড়িয়ে অনেকেই দাবি করে বলেন – আল্লামা সাঈদী পুত্রের সাথে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর বৈঠকের ছবি এটি। এবং সেখানে সাঈদী মুক্তি ইস্যুতে কথাবার্তা হয়েছে।

কিন্তু পরবর্তিতে পাবলিক ভয়েসের অনুসন্ধান এবং পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে ছবি বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাবুনগরীর একান্ত খাদেম (সেক্রেটারী) মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকী। এবং তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন-

“আল্লামা বাবুনগরী সারাজীবন এমনকি এখনও সব সময় জামাতের বিরুদ্ধে ছিলো, আছেন এবং থাকবেন। জুনায়েদ বাবুনগরী জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদির ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে এখনো সব সময় ছাত্রদেরকে ক্লাসে আলোচনা করেন। এখনো বাবুনগরী তার বয়ান বক্তৃতায় ও লিখনীতে জামাতের ভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে জাতিকে সচেতন করে আসছেন। এমনকি গত ১ লা জানুয়ারী ২০২০ সনে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির বিশাল সমাবেশে মৌদুদী ভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ করেছেন।

  • এছাড়াও তিনি স্পষ্ট করেই বলেন – ‘দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির ব্যপারে কোন দাবী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কখনো করেননি করবেনও না।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মাওলানা ই’নামুল হাসানের বিস্তারিত ব্যাখ্যামূলক লেখাটি এখানে প্রকাশ করা হলো –

২০১৮ সালের রমজানে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ঢাকায় যান হাটহাজারী মাদরাসার চাঁদা কালেকশন করতে। প্রায় ১০ দিন তিনি ঢাকাতেই ছিলেন এবং মাদরাসার জন্য কালেশন করেন।

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী (হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক) আমাদেরকে জানালেন, পুরানা পল্টনের সুবহান ম্যানশনে এস.এম.এম নামে একটি নতুন কুরিয়ার সার্ভিস হয়েছে। সে কুরিয়ার সার্ভিসের মালিকদের একজন মাওলানা হানিফ। যার বাড়ি হাটহাজারীতে, তিনি কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানীর পক্ষ থেকে হাটহাজারী মাদরাসার জন্য কিছু অনুদান দিবেন। তাই মাওলানা হানিফ বাবুনগরীকে সেখানে ইফতারের দাওয়াত দিয়েছেন।

২০১৮ সালের ১৯ রমজান। ঐদিন এসএমএম অফিসে যাওয়ার জন্য সময় ঠিক করা হলো । অন্যান্য কালেকশন শেষ করে আসরের পরে বাবুনগরীকে নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে যাই। তারা হুজুরকে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হোন। কোম্পানির সকল শেয়ার হোল্ডার সেখানে ইফতারের জন্য উপস্থিত হন। এবং সবাই তাদের পরিচিতজনকে আমন্ত্রণ জানান।

সেদিন ইসলামাবাদীর আরেকটি প্রোগ্রাম ছিলো ছাত্রসমাজের ইফতার মাহফিলে। তিনি বক্তব্য দিয়ে বাবুনগরীর সাথে ইফতার করার জন্য চলে আসেন।

ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে একজন ব্যক্তি আসলো। আমি তাঁকে চিনতাম না। উপস্থিত অফিসের একজন ডাইরেক্টর (যিনি আওয়ামী লীগ নেতা) জানালেন- তিনি আল্লামা সাঈদীর ছেলে ‘শামীম সাঈদী’। শামীম সাঈদী জুনায়েদ বাবুনগরীর কাছে নিজের পরিচয় দেন। কারণ বাবুনগরী সাহেব হুজুর তাকে চিনতেন না। এরপর শামিম সাঈদী বাবুনগরীর পায়ের কাছে বসেন।

মাগরীবের নামাজের পর শামীম সাঈদী জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথে কথা বলতে চান। তিনি বাবুনগরীর পাশে বসা অবস্থায় ওনার এক সহকারী আমাদের সকলের অজান্তে দু’জনের একটি ছবি তুলে ফেলেন। তখন জুনায়েদ বাবুনগরী বিষয়টা জানতে পেরে তার ওপর প্রচন্ড রাগ হন এবং ছবিটি মুছে ফেলতে বলেন।

তিনি বললেন, ছবিটা শুধু স্মৄতি হয়ে থাকবে। অন্য কিছু না। তখন উপস্থিত আজীজুল হক ইসলামাদী, আমি (ইনআমুল হাসান) তাকে ছবিটি ডিলিট করার জন্য বললে তিনি বললেন “আচ্ছা ডিলিট করে দিচ্ছি”। কিন্তু তিনি তা ডিলিট করেন নাই।

ইফতার মাহফিলে শামীম সাঈদীর উপস্থিতিতে বাবুনগরী হুজুর বিব্রতবোধ করছিলেন। মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীও শামীম সাঈদী উপস্থিত হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে মাদরাসার জন্য অনুদানের চেকটি গ্রহন করে আমরা চলে আসি।

এটা আদৌ কোন জামাত শিবিরের মিটিং ছিলো না। এটা ছিলো এস,এম,এম কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানির ইফতার মাহফিল এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনই উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক রাজনৈতিক নেতাও এখানে ছিলেন।

দুঃখজনক বিষয় হল, রমজানের কিছুদিন পরই শামীম সাঈদী বাবুনগরীর সাথে সেদিন ইফতারের সময়ে তোলা ছবিটা ফেসবুকে ছেড়ে দেন। এই কারণে পরের বছর হুজুর আর সেখানে অনুদানের জন্যও যাননি। এবং বাবুনগরী খুবই বিরক্ত হয়েছেন বিষয়টিতে।

এখন প্রশ্ন হলো, ২০১৮ সালের এই ছবিকে পুঁজি করে এখন কেন নানা মিথ্যা কল্প কহিনী সাজানো হচ্ছে? কেন সরকার বিরোধী প্রমাণ করার জন্য মিডিয়ায় মিথ্যা নিউজ করানো হচ্ছে এবং বাবুনগরী হুজুরকে জামাতি বানানোর ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইফতার মাহফিলে বসার কারণে যদি হুজুর জামাতি হন তাহলে সেখানে অনেক অনেক বড় আওয়ামী লীগের নেতারাও ছিলো তাহলে তো হুজুরকে আওয়ামীলীগও বলা যাবে!

আসলে এগুলো চক্রান্তমুলক ভাবে করা হচ্ছে, হুজুরকে আমরা চিনি উনি সারাজীবন এমনকি এখনো সব সময় জামাতের বিরুদ্ধে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ইনশাআল্লাহ।

আল্লামা বাবুনগরী মওদুদীর ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে এখনো সব সময় ছাত্রদেরকে ক্লাসে আলোচনা করেন। এখনো বাবুনগরী হুজুর তার বয়ান বক্তৃতায় ও লিখনীতে জামাতের ভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে জাতিকে সচেতন করে আসছেন। গত ১ লা জানুয়ারী ২০২০ সনে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতির বিশাল সমাবেশে মওদুদীর ভ্রান্ত মতাদর্শ সম্পর্কে চুল-ছেঁড়া বিশ্লেষণ করেছেন।

কিন্তু বিষয় হলো যখন ২০১৮ সালে শামীম সাঈদী ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট করেছিলো। এতদিন কেন কোন প্রশ্ন করা হলো না? কিছু তাহকিক না করে ৩ বছর পর এই ছবি সামনে আনা হলো একটি বিশেষ মুহূর্তে? আর গোপন বৈঠক বলে সেই পুরনো ছবি ফেসবুকে প্রচার করে আলেম ও মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে।

 

সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদীর সাথে মাওলানা মামুনুল হক।

কিন্তু এখন একটি কুচক্রী মহল হুজুরকে সমালোচিত করার জন্য এই ছবিটি দিয়ে জল ঘোলাটে করার জন্য বিভিন্ন পায়তারা করে যাচ্ছে।অথচ বিষয়টি সম্পুর্ন মিথ্যা,ভিত্তিহীন,বানাওয়াট ও অবাস্তব ।

আরেকটি বিষয় হলো- মাসুদ সাঈদীর সাথে বৈঠকের যে কথাটি কুচক্রী মহল প্রচার করেছে তারা সম্পুর্ণ মিথ্যাবাদী। কারণ মাসুদ সাঈদী নামক কাওকে বাবুনগরী হুজুর চিনেও না, কখনো নামও শুনেননি, দেখাও হয়নি। কথাবার্তা বৈঠক এটা তো দুরের কথা। এবং দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির ব্যপারে কোন দাবী বাবুনগরী কখনো করেননি করবেনও না ইনশাআল্লাহ।

মোটকথা হলো, একটি কুচক্রি মহল নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ২০১৮ সনের ইফতার মাহফিলের এ ছবিটি প্রচার করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। যেসব চিহ্নিত ষড়যন্ত্রকারীরা এসব কাজ করছে শামীম সাঈদী সহ আরো বহু মানুষের সাথে তাদেরও ছবি রয়েছে। এবং অনলাইনে তাদেরও ছবি ভাইরাল হয়েছে। বাবুনগরী হুজুরের সাথে শামীম সাঈদীর ছবি থাকার কারণে যদি বাবুনগরী হুজুর জামাতি হয়ে যান তাহলে ঐসব ষড়যন্ত্রকারীরাও তো বড় জামাতি কারণ জামাতের অনেকের সাথে তাদেরও ছবি রয়েছে ।

সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদীর সাথে আল্লামা শফী পুত্র আনাস মাদানী।

সাঈদীপুত্র শামীম সাঈদীর সাথে আল্লামা শফীপুত্র আনাস মাদানী।

আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হুজুরের খেদমতে থেকে দেখেছি – বাবুনগরী হুজুর সদা সত্য ও ন্যায়ের ওপর অটল-অবিচল আছেন,আমরণ থাকবেন,ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সবাইকে মিথ্যা থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন, আমিন।

লেখক – মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকী। একান্ত খাদেম-আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হাফিযাহুল্লাহু।

আরও পড়ুন : 

রক্তে রাঙানো ৫ ই মে : শাপলা চত্বর ও আল্লামা বাবুনগরী

জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আল্লামা বাবুনগরীর দৃষ্টিভঙ্গি

জামায়াত-শিবির আমাকে গুলি করেছিলো, আমি সাঈদীর মুক্তি চাইনি : মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী

করোনা রোগীদের সেবা দেওয়া ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে : আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন