ইফার প্রকল্প থেকে বাদ দারুল আরকাম, ভালো নেই শিক্ষকরা

প্রকাশিত: ৪:২১ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২০

সম্প্রতি ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে প্রতিষ্ঠিত দারুল আরকাম মাদরাসা। ৫ মাস ধরে বন্ধ আছে শিক্ষকদের বেতন ভাতা। ২ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন পড়েছে অনিশ্চয়তার মুখে।

পাবলিক ভয়েসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্টে তুলে এনেছেন এইচ এম আবু বকর।

ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত বাংলাদেশের যে সব এলাকায় প্রাথমিক স্কুল নেই সেসব এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষাকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মসজিদভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইফার ওয়েবসাইট সূত্রে আরও জানা গেছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বাস্তবায়ন হিসেবে ২০১৮ সালের মার্চে দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকরা নিয়োগ লাভ করে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এ প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বেতন না পাওয়ায় দারুল আরকাম মাদ্রাসার শিক্ষকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন অনেকে। পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে হতাশ জীবন যাপন করছেন শিক্ষকরা। যা দেখার কেউ নেই।

সারাদেশে প্রায় ২ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী দারুল আরকামে পড়ালেখা করছে।

সারাদেশে প্রায় ২ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী দারুল আরকামে পড়ালেখা করছে।

সূত্রে জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর একনেক সভায় মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদনকালে এ মর্মে সদয় নির্দেশনা প্রদান করেন, বাংলাদেশের যে সকল এলাকায় স্কুল নেই সেখানে এ প্রকল্পের মসজিদভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা কারিকুলামে প্রতিটি শিশুর জন্য প্রযোজ্য ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি স্টাডি করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে চূড়ান্তভাবে দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার লক্ষ্যে দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

কার্যক্রম শুরু করা হলেও ক্রমান্বয়ে ২০২০ সালে এসে তা পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। শুরু থেকে প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের অধীনে থাকলেও বর্তমানে সেটাকে আলাদা করা হয়েছে।

জানা গেছে, এ বছরও প্রকল্পটি মউশিক প্রকল্পের সাথে জমা করা হলেও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয় দারুল আরকামকে আলাদা করার প্রস্তাব দেন। প্রকল্প দুটি আলাদা হলে মউশিক প্রকল্পটি চলতি মাসের ১১ তারিখ পাশ হলেও দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পটি ঝুলে গেছে।

এতে করে বেকায়দায় পড়েছে এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ২০ জন শিক্ষক। এখানে ১ হাজার ১০ জন কওমী মাদ্রাসার শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বাকি ১ এক হাজার ১০ জন আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। কওমী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্বীকৃতির পর এটাই প্রথম সরকারি চাকরিতে কওমী আলেমদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা।

শুরুর দিকে বিষয়টি সবাই আনন্দের সাথে গ্রহণ করলেও বর্তমানে এটি নিয়ে চতুর্দিকে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ১ হাজার ১০ টি প্রতিষ্ঠানের দুই লাখের উপর শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

বিষয়টি গত মাসে গণমাধ্যমে উঠে আসলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোড়জোড় শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে একনেকের বৈঠক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে প্রকল্পটি পাশ করেন। তবে এ প্রকল্পে দারুল আরকাম না থাকাতে শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

এ বিষয়ে দারুল আরকাম শিক্ষক সমিতি পিরোজপুর জেলার সেক্রেটারি মুফতী তালুকদার তরিক মাসউদ পাবলিক ভয়েসকে বলেন, কওমী সনদের সরকারী স্বীকৃতির পর ২০১৮ সালে সরকার দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১০১০ জন কওমী আলেমের চাকরির ব্যবস্থা করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করছিলো।

কিন্তু ২০২০ এসে এসব কওমী আলেমদের যদি চাকরি হারাতে হয় তাহলে এটা সরকারের জন্য ব্যপক সমালোচনার কারণ হবে।

  • তিনি এই প্রকল্পের সকল শিক্ষকের বেতন ভাতা বহাল করা এবং দুর্যোগকালীন প্রণোদনার আওতায় আনারও আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে দারুল আরকামের কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে জানান, দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমার মনে হয় প্রকল্পটি আলাদা হয়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রী জানেন না। জানলে হয়তোবা তিনি আমাদের বিষয়টি ব্যবস্থা করতেন। আমি আশা করছি প্রধানমন্ত্রী যেহেতু নিজে প্রতিষ্ঠানটি করেছেন সুতরাং আমাদের মানবেতর জীবন-যাপনের বিষয়ে তিনি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি পাশ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের মেয়াদ। মেয়াদ শেষ হওয়ার পঞ্চম মাসে এসে মউশিক প্রকল্পটি পাশ হলেও দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পটি ঝুলে যায়। প্রকল্প পাস না হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করেনি। কর্মরত এসব শিক্ষকদের প্রত্যাশা যে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি পাশ হবে।

সমিতির মহাসচিব আনাস মাহমুদ বলেন, দারুল আরকাম মাদ্রাসাটি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের বিষয়টাও প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন বলে আমরা আশা রাখছি।

ইতিমধ্যেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি এবং জেনেছি তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আশা করছি আমাদের মানবিক জীবনযাপনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির পাশ করে দুই লাখের ওপর শিক্ষার্থীর অনিশ্চিত জীবনের নিশ্চয়তা প্রদান করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “২০১৮ সালের ৫ মার্চ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় নিউজ হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ১ হাজার ১০ জন কওমি শিক্ষককে সরকারি চাকরি দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আমাদের চাকরিটা আসলে সর্বসাকুল্যে একটা সম্মানী ভাতা প্রদানে সীমাবদ্ধ।”

হতাশা নিয়ে তিনি আরও জানান, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার সবাই সরকার কর্তৃক ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা সরকারি চাকরি করি এই বলে কেউ ত্রাণ দিতেও নারাজ। এদিকে লজ্জায় আমরা কারও কাছে কিছু চাইতেও পারি না। আমি আশা করছি এসমস্ত হাফেজ আলেমদের দিকে প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি দিবেন।

দারুল আরকাম মাদ্রাসা প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পটিতে কিছু ঝামেলা রয়েছে। যা আমরা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। বিশেষ করে প্রকল্পের অধীনে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিবে সেটা উল্লেখ নেই। এরকম কিছু ঝামেলা রয়েছে। যা সাজিয়ে তারপর আবার জমা দেয়া হবে। জমা হলে প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখে তারপর অনুমোদন দেবেন বলে আশা করছি।

#এবি/এইচআরআর/পাবলিক ভয়েস

মন্তব্য করুন